সামান্য একজন চাকুরে, ঢাকায় ঠিকানাহীন, সংগ্রাম করছি জীবনের সাথে, বেচে থাকার জন্য ।
আগের মতো চিঠির ব্যবহার না থাকায় মোবাইল ফোনে বিয়ের দাওয়াত নিলাম। যার কাছ থেকে নিমন্ত্রণ পেলাম তিনি হলেন সম্পর্কে বেয়াই। তিনি মোবাইল ফোনে নিমন্ত্রণ দেয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন।
প্রথমে না যাওয়ার প্ল্যান ছিল।
অবশেষে না গিয়ে পারলাম না। তাওই বাড়িতে পৌছে দেখি বিয়েবাড়ির হই চই, আনন্দ-উল্লাস, মাতামাতি। প্রথমেই আপু, দুলাভাই, মাওইমাকে সালাম দিলাম। আপুকে বললাম, অবশেষে এসেই পড়লাম।
বিয়েবাড়ির বিভিন্ন আত্মীয়দের সঙ্গে পরিচিত হওয়া বাঞ্ছনীয় মনে করে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ করে মুন্নী (বেয়াইন) লম্বা একটি সালাম আমাকে দিল, আমি প্রতিউত্তরে ওয়া আলাইকুম...।
কেমন আছ?
বললাম, ভালো।
বোনের শ্বশুরবাড়িতে আমার একটু এক্সট্রা কদর। বড় আপার বিয়ের পর থেকেই মুন্নীর সঙ্গে আমার সখ্য। কেউ একবাক্যে প্রেম সম্পর্ক বলতে পারেন। আমাকে মুন্নী সব সময় তুমি করে বলে।
আমিও তাকে তুমি করে বলি। আমাদের এই সম্পর্ক সবাই জানেন, কেউ তেমন মাইন্ড করেন না।
মুন্নীর বান্ধবী কণা ও অন্য বান্ধবীরা আমাকে বেয়াই ডাকতো। তাদের বেয়াইন ডাকতাম।
বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন।
বিয়ের সঙ্গে বিয়েবাড়ির কিছু নিয়ম-কানুন জড়িত; যদিও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রীতি-নীতি প্রচলিত। দেখলাম বাড়ির বুড়ো-বুড়িরা একদল হয়ে গান ধরেছেন...
হলদি বাটো মেন্দি বাটো
বাটো ফুলের মন...
মুন্নীকে বললাম, এ কি, তারা গান গাইছেন আর গলাগলি কেন করছেন?
আমাদের অঞ্চলে এটাই রীতি। দেখো না আরো কতো মজা বাকি আছে।
আমি তাদের নাচ দেখতে লাগলম।
পাত্রী শাহানা বেয়াইনকে উঠানে নিয়ে আসা হলো।
গায়েহলুদের আয়োজন চলছে। একটু আগেই বর পক্ষের লোকজন এসেছে।
ঝিলটুলী বেয়াই, তোমাকে বড় ভাইয়া ডাকছেন।
মুন্নীর সঙ্গে দুলাভাইয়ের কাছে গেলাম। দুলাভাই আমাকে কিছু পরামর্শ দিলেন- কীভাবে কি করতে হবে, কোনো ধরনের অসুবিধা যেন না হয়।
এসে দেখি গায়েহলুদ পর্ব চলছে। একে একে সবাই হলুদ-মেহেদি কনের কপাল-গালে মাখিয়ে দিচ্ছে আর মিষ্টিমুখ করাচ্ছে।
আমার ডাক পড়লো।
বেয়াই, তুমি এসো, মিষ্টি খাওয়াও, হলুদ লাগাও। ভাবলাম, মজা করার একটা সুযোগ এলো।
প্রথমে চামচে মিষ্টি নিয়ে কনের মুখের কাছাকাছি নিতেই বেয়াইন যখন হা করলো তখন নিজে মিষ্টি খেয়ে ফেললাম।
এক সঙ্গে সবার হাসির রোল পড়ে গেল। দ্বিতীয়বার দুষ্টুমি করলাম না। মুখে মিষ্টি এবং কপালে হলুদ ও মেহেদি লাগিয়ে দিলাম।
ইতিমধ্যে হলুদপানি, মরিচপানি ও গোবরপানি ছোড়াছুড়ি আরম্ভ হয়ে গেল।
হঠাৎ করেই আমার মাথায় কাদামাটি ও হলুদপানি এসে দিয়ে গেল। পেছনে তাকিয়ে দেখি কণা দৌড় দিচ্ছে আর দূরে দাড়িয়ে মুন্নী হাসছে। বুঝতে বাকি রইলো না এটা মুন্নীর চালাকি। কি আর করা, চুপ করে সহ্য করলাম!
সুযোগ মতো কণা ও মুন্নীকে এক সঙ্গে পাচ্ছি না। ইতিমধ্যে এক ঘটি মরিচপানি ও গোবরপানি মিশিয়ে অপেক্ষা করছি।
হঠাৎ দেখি দুই মাথা এক করে ফন্দি করছে আরো কাকে দেয়া যায়। আমি আস্তে আস্তে পেছনে গিয়ে মাথার ওপর ঘটির মিশ্রিত পানি ছেড়ে দিলাম। পেছনে আর তাকালাম না। একটু পরে দেখি তাদের কপাল বেয়ে গোবর ও মরিচপানি পড়ছে এবং চিৎকার করছে। মরিচপানি তাদের চোখে লেগেছে।
এই দৃশ্য দেখে তাদের জন্য মায়া হলো। পরে বিশেষ সূত্রে খবর পেলাম আমার জন্য গোবরপানি বরাদ্দ করা হয়েছিল মুন্নীর সিদ্ধান্তে হলুদপানি ব্যবস্থা হলো। অথচ মুন্নীকে ভুল বুঝেছি। মুন্নীকে সরি বলতে হবে।
যাহোক, হলুদ পর্ব শেষ হলো।
গোসল করে ফ্রেশ হলাম।
বোনের বিয়েবাড়িতে এসে নতুন অভিজ্ঞতা হলো খাওয়া-দাওয়া পর্ব দেখে। এখানে তারা ডাল দিয়ে শুরু করে। আগেই বলেছি, বিয়েবাড়ির রীতি, নিয়ম-কানুন এক অঞ্চলে একেক রকম। মুন্নীর কাছে আরো জানলাম, দ্বিতীয় দিন বরকে বাজার করে আনতে হয়।
মুন্নীকে নিরিবিলি পেয়ে কাছে ডাকলাম, তাকিয়ে দেখলাম চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, একে তো মরিচের পানি এর উপর অভিমানে চোখ ছলছল।
মুন্নীকে সরি বললাম। জানি, সরি বললেই সব শেষ হয়ে যায় না।
একদিন পরই মুন্নীদের বাড়ি থেকে চলে এলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।