দেশের মধ্যে কোথায় গোলযোগ লেগেছে কিংবা দুর্যোগকবলিত দুর্গম অঞ্চলের সচিত্র তথ্য দ্রুততম সময়ে পেতে উদ্ভাবন করা হয়েছে মনুষ্যবিহীন স্বয়ংক্রিয় উড়ন্ত যান 'অটোনোমাস ড্রোন'। শুধু তাই নয়, এ ড্রোন সীমান্তের চোরাচালান নজরদারিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক হিসেবেও কাজ করতে পারবে। এমনকি দুর্গম অঞ্চলে জরুরি ওষুধ সরবরাহেও কাজ করবে। আর এটি উদ্ভাবন করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের ৮ ব্যাচের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন খান দীপ। তিনি বলেন, ড্রোনটি একটি পূর্ণাঙ্গ অটোনোমাস ড্রোন।
অর্থাৎ এটি চালাতে প্রয়োজন হবে না কোনো রিমোট বা মানুষ। কোথায় যেতে হবে শুধু তা বলে দিলেই বাকি কাজ ড্রোনটি নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করবে। একেবারে আমেরিকার ড্রোনের মতো।
জানা যায়, উদ্ভাবনের শুরুতে ড্রোনটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে চালানো হতো। এক বছর দশ মাস চেষ্টার পর বর্তমানে এটি পুরোপুরি অটোমেটিকভাবে চলতে সক্ষম।
কোথায় যেতে হবে তা গুগল ম্যাপের সহায়তায় নির্দিষ্ট করে দিলেই ড্রোনটি সুনির্দিষ্ট পথ পরিভ্রমণ করে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে আসবে। এ ড্রোন দিয়ে জরুরি পণ্য পরিবহনও সম্ভব। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্যও আগাম তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারবে। ধরুন কোনো স্থানে গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি কী জানতে চাইলে এই ড্রোনকে সে জায়গার কো-অর্ডিনেট বলে দিলেই হবে।
এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট উচ্চতায় উড়ে গিয়ে সে জায়গায় পৌঁছে যাবে এবং সে জায়গায় গিয়ে উচ্চতা পরিবর্তন করে গোলযোগের সরাসরি ভিডিও পাঠাতে পারবে। ডাটা ট্রান্সিভার সিস্টেম থাকায় ড্রোনটি যে জায়গায় যাবে সে জায়গার আবহাওয়া সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য যেমন তাপমাত্রা, চাপ এটি দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষিত ওয়েবসাইট এবং ড্রোনের সুরক্ষা ব্যবস্থার আরও উন্নতি সাধন করতে হবে।
দীপ বলেন, এই ড্রোনটি তার চতুর্থ বর্ষের থিসিস প্রজেক্ট ছিল। এই প্রজেক্টের সুপারভাইজার ছিলেন তড়িৎ ও ইলেকট্রিক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান।
ড্রোনটির অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করেছে বন্ধু রিজভী আহমেদ। এ ছাড়া তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছে সহপাঠী গোলাম সুলতান মাহমুদ রানা।
অটোনোমাস ড্রোন প্রজেক্টের সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, উদ্ভাবিত ড্রোনটি ৯০ শতাংশ প্রকৃত ড্রোন পর্যায়ের। পরিপূর্ণ ড্রোনের কার্যকারিতা পেতে হলে এখন এটিতে ইমেজ প্রসেসিং কার্ড ব্যবহার করতে হবে। যা করা সম্ভব।
এ জন্য চেষ্টা চলছে।
ড্রোনটি যেভাবে কাজ করে : ড্রোনটি কোয়াডকাপ্টার। মূলত এটি এমন একটি উড়ন্ত যান যেটি কন্ট্রোল করা হয় চারদিকে চারটি ব্রাশলেস ডিসি মোটর এবং প্রোপেলার দ্বারা। এটি নরমাল উড়োজাহাজের মতো রোল, পিচ এবং ইও (yaw) এই তিন অক্ষ বরাবর চলতে পারে। চারটি মোটরের স্পিড পরিবর্তন করে এটিকে এই তিন অক্ষ বরাবর ঘুরানো যায়।
আর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় যে কোনো একটি পয়েন্টে ভেসে থাকতে পারে। এটিকে অটোম্যাটিক নেভিগেশনের জন্য এতে আরও রয়েছে জিপিএস। জিপিএসের ডাটা দিয়ে এবং মাগনেটোমিটার থেকে পাঠানো তথ্য দিয়ে এটি দিক ঠিক করে অটোমেটিক্যালি চলতে পারে। প্রতি সেকেন্ডে ৫ মিটার গতির এ ড্রোনটি ৩০ মিনিট পর্যন্ত উড়তে পারে। ব্যাটারিচালিত এই ড্রোনটি দেড় কেজি পণ্য পরিবহনে সক্ষম।
তবে এর গতি উড়ন্ত সময় এবং পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বাড়ানো যাবে। প্রসঙ্গত, আবদুল্লাহ আল মামুন খান দীপের জন্ম ১৯৮৯ সালে। তিনি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার উত্তর হাজাতিয়া গ্রামের মো. দৌলত খান এবং মায়ের নাম নূরজাহান খানের সন্তান। দীপ ২০১৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় ইন্টারন্যাশনাল অটোনোমাস রবোটিক কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। তার টিমে আরও ছিল সহপাঠী গোলাম সুলতান মাহমুদ রানা।
এ ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল আইইইই (IEEE) কনফারেন্সে তার অ্যাম্বেডেড সিস্টেমের ওপর চারটি গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো বর্তমানে (IEEE EXPLORE) নামক ডিজিটাল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। বর্তমানে দীপ কুয়েটের আরেক শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল ইসলামকে নিয়ে ভিডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেমটি ডেভেলপ করছেন। এই ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো দূরত্বে পাঠনো সম্ভব। এ ছাড়াও ভিডিও ডাটা এনক্রিপটেড থাকায় এ ভিডিও কেউ চুরি করে দেখতে পারবে না।
*সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।