আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে এলাম মায়ানমার ( ৩ ) ।

সাধারন ব্যাংগ নই আমি । আমি ব্যাংগ রাজ , তাই শুধু বর্ষায় নয় সারা বছরই আমি করি হাকাডাক ।
ঘুরে এলাম মায়ানমার । ( এক )
ঘুরে এলাম মায়ানমার। ( দুই )

দোকানের ছেলেটা এল।

ওর হাতে সব কিছু দিয়ে আমি আর মেজ কুটুম টেকনাফ বাস স্ট্যান্ডের দিকে চলে এলাম। এখানে একটা ট্যাক্সিতে উঠলাম । সিএনজি চলতে শুরু করল। টেকনাফ শহর ছেড়ে সিএনজি চলতে চলতে পিচ ঢালা পথ বেয়ে উচু দিকে উঠতে লাগল ।

এই রাস্তাটা পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে।

সিএনজি উঠতে উঠতে যখন উপরের সমতলে চলে এল তখন প্রকৃতির রুপের ছটায় আমার ভ্রমন ক্লান্ত মনটা মুগ্ধ হয়ে গেল। অন্তরের অন্তস্থল থেকে বের হয়ে এলঃ আলহামদুল্লিলাহ !! হে আল্লাহ কত সুন্দর আমার জন্মভূমি ! তুমি আমায় এই দেশে জন্ম দিয়েছ তাই আমি ধন্য।

ওখান থেকে দেখা যায়, পাহাড় হতে যেন সবুজের গালিচা গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে গেছে নাফ নদীর রুপালি তটে । নদীর রুপালি তটও গড়িয়ে গড়িয়ে পড়েছে নদীর নীলাভ ঢেউয়ের বুকে । সেখানে বাতাস আর ঢেউয়ের কত অজানা কানাকানি ।

নদীর পাড়ের কাছাকাছি ছোট ছোট নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরছে।

নাফের ঐ পাড়ে মায়ানমার সীমান্তে গাঢ় সবুজ পাহাড় যা দেখতে অনেকটা কালচে রং এর মনে হয় । বিশাল উচু উচু সব পাহাড়। দেখে মনে হয় একজন আরেকজনের কাধেঁ হাত রেখে দাড়িয়ে টেকনাফের পাহাড় গুলোর সাথে আড্ডা মারছে । মাথায় তাদের ছাই রংয়ের মেঘের টুপি ।

হয়ত সেই টুপি থেকে ঝরঝর বৃষ্টি হছ্ছে । এতদুর থেকে দেখা যাছ্ছে না।


সোজা বন্দরে চলে এলাম । সিএনজি থেকে বন্দরের দিকে প্রবেশ করতেই গেটের ভিতরে একটা ওয়াচ ঘর । সেখানে পাচজন বর্ডার গার্ড বসে আছে ।

তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, দুইজন তরুনী । পুরুষরা আগতদের সাথে কথা বলছে তথ্য লিখছে । তরুনীদ্বয় বর্ডার গার্ডের পোষাক পড়ে শোভা বর্ধন করছে অর্থাৎ বসে আছে। মেজ কুটুম ওর পাসপোর্ট দিল। বর্ডার গার্ডরা পাসপোর্ট থেকে তথ্য লিপিবদ্ধ করে নিল।

মেজ কুটুম এবার আমার ভোটার আইডি কার্ড ও ছবিগুলো দিল । ওরা বললঃ নতুন?

ঃহ্যাঁ ।

আমার দিকে তাকাল তারপর তথ্যগুলো লিখে আমাকে জিগ্গাসা করলঃ বাড়ি কোথায় ?

বললাম।

ঃ নাম কি ?

ঃ বললাম।

এরপর আর কিছু জিগ্গাসা করল না ।

আমার জন্য নতুন পাসপোর্টের বই দিয়ে দিল। বইটা এখনও পাসপোর্ট হয়নি। এবার আরও সত্তর গজের মত ভিতরে গেলাম। হাটতে হাটতে মেজকুটুম বললঃ আপনার ভাগ্য ভাল মাঝে মাঝে এখানে এমন কতগুলো বসে , অসম্ভব কর্কশ ভাষী ।

আমি মুখে কিছু বললাম না ।

মনে মনে বললাম সীমান্ত প্রহরীদের ব্যাপারে হযরত ইব্রাহীম আলাইহী ওয়াসাল্লামও মন্তব্য করেছেন । কারণ বিবি সায়রাকে নিয়ে তিনি যখন মিশর সীমান্ত পার হছ্ছিলেন তখন এই সীমান্ত প্রহরীরা উনাকে বিপদে ফেলেছিল ।

এখানে একটা বিল্ডিং দুই তলা । প্রবেশ করলাম । ভিতরে তিনজন লোক বসা ।

মেজ কুটুম একজনকে কাগজ পত্র সব দিল । যাকে দিল দেখলাম সে মেজকুটুমের সাথে খুব আন্তরিক ভাবে কথা বলছে। এমনকি নাম ধরেও ডাকছে । বুঝতে পারলাম এখানে মেজ কুটুমের সাথে সবার সম্পর্কটা ভাল । লোকটি বলল ঃ ইনি তোমার কে হন ?

ঃ আমার বড় বোনের স্বামি।



শুনে লোকটা উৎফুল্ল হয়ে বললঃ দুলাভাই !!

আমাকে জিগ্গাসা করলঃ কি দুলাভাই বেড়াতে যাবেন ?

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।

যাই হোক এখানে দ্রুত সব কিছু হছ্ছিল । পাসপোর্ট বাবদ এক হাজার টাকা জমা দিতে হল। এই পাসপোর্টের মেয়াদ এক বৎসর । এখান থেকে মায়ানমারের ভিসা দিবে সাত দিনের ।

এই ভিসা নিয়ে মায়ানমার গেলে মায়ানমার সরকার ভিসা দিবে মাত্র তিন দিনের ।

এরপর আমার আর মেজ কুটুমের ছবি কম্পিউটারে তুলে নিল।

মেজ কুটুম বললঃ আগেত ছবি নিতেন না ।

ঃ একটু ঝামেলা হয়েছে তাই নতুন নিয়ম করেছে।

যাই হোক আমার অপূর্ব সুন্দর মায়াবী (??! ) চেহারা খানা ওদের কম্পিউটারের মেমোরিতে রেখে আমরা ঘাটের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম ।

ঘাটে পৌছার আগেই বিল্ডিং এর পিছনের গেটের সামনে এক লোক টিকিট হাতে দাড়িয়ে আছে মেজকুটুম ওর কাছ থেকে দুইটা টিকিট নিল।

মেজ কুটুম বললঃ মায়ানমার যেতে একবারই টিকিট কাটতে হয় । এটাই আসা-যাওয়ার টিকেট। একটু তাড়াতাড়ি হাটেন । বোট বোধহয় ছেড়ে দিছ্ছে ।



আমরা দ্রুত পদক্ষেপে প্রায় দুইশ গজ পরে বোটের সামনে এসে দাড়ালাম। এখানে আরেকজন লোক আমাদের টিকেটের একটু করা অংশ ছিড়ে নিয়ে নিল।

আমি বোট দেখে মুগ্ধ !! আমি আগে ও দেশ ছেড়ে বিদেশ গিয়েছি। তখন গিয়েছি ওমান এয়ার লাইন্সে এসেছি গালফ এয়ারে । আহ !! কি আরামের ভ্রমন ! কিন্ত এখানে !!! বিদেশ যাওয়ার একি বাহন !! যাব না পালাব ভাবছি ।




এই সময় মেজ কুটুম বললঃ কি হল উঠুন । বোট ছেড়ে দিছ্ছেত ।

ওর কথার তাগাদায় আমি চমকে কখন যে নাফ ওয়াটার ওয়েজে উঠে গেছি নিজেই জানিনা। উঠে কাঠের পাটাতনে বসলাম । আমি একটু মোটাসোটা মানুষ ।

ওজন ৭৬ কেজি । তাই বসতে একটু কষ্ট হছ্ছিল । মেজ কুটুম আমার আশেপাশে জায়গা পেলনা তাই একটু দুরে বসল।

এই বোট দিয়ে মানুষ টানে আবার মালও টানে । বোটের মধ্যেখানে খোলের মত আছে ।

মাল টানার সময় সেখানে মাল নেয় । মানুষ পারাপাড়ের সময় নারী ও শিশুদের ওখানে বসানো হয়। আমি যেখানে বসেছি তার সামনে বোটের ইন্জিন । ইন্জিন হতে প্রায় চার-পাচঁ হাত দুরে , আমার পিছনে বোটের সারেং দাড়ায় । অর্থাৎ যার হাতে বোটের হাল থাকে ।

বোটটাকে মুলত সেই চালায় । ইন্জিনের কাছে ছোট্ট একটা ছেলে বসে থাকে । বয়স এগার হতে তের বছর হবে । ছেলেটির কাজ হল ইন্জিন স্টার্ট দেওয়া , গিয়ার বদলানো, বোটের গতি বাড়ানো কমানো আর বোটের খোলের ভিতর পানি জমলে সেই পানি তুলে নিয়ে নদী তে ফেলা ।

বোট ছিল নারী-পুরুষ আর দুইটি শিশুতে ভর্তি ।

বোট ছেড়ে দিল । আমারও বারটা বাজা শুরু হল। ইন্জিনের এমন ভটভটি আওয়াজ আমার কানের পর্দা যায় যায় অবস্থা। বোটটা এমন ভাবে মানুষে ভর্তি যে নড়াচড়ারও জায়গা নাই । কি আর করা কোন প্রকারে সহ্য করে থাকতে হল।



( চলবে....। )
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.