নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে চলছে অপহরণ, হত্যা ও মুক্তিপণ আতঙ্ক। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মুক্তিপণের দাবি ও পারিবারিক বিরোধে চারজন স্কুলছাত্র হত্যার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সমর্থিত কর্মী গুম হয়েছে ৮-১০ জন। অপহরণের পর এসব ব্যক্তির অনেককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন মামলায় আদালতে হাজির করেছে। তবে অনেকে রয়েছে এখনো নিখোঁজ।
সম্প্রতি অপহরণের পর মুক্তিপণের দাবিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সোনারগাঁ উপজেলা সনমান্দি গ্রামের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৪) ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সাকিন আলমকে (৮)। গত সপ্তাহে এ দুই ছাত্রকে একই সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর দিন জাহিদুল ইসলামকে গলা কেটে হত্যা করে অপহরণকারীরা। এর ছয় দিন পর গত শনিবার একই পন্থায় দ্বিতীয় অপহৃত সাকিন আলমকেও হত্যা করে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ দিয়ে দুই ছাত্রের জীবন বাঁচাতে অপহরণকারীদের ঠিকানা দেওয়া স্থানে গিয়ে পুলিশ ও ছাত্রদের অভিভাবকরা রক্ষা করতে পারেনি ওই দুই ছাত্রকে।
অপহরণকারীরা ঠিকানা দিয়েও আসেনি মুক্তিপণের টাকা নিতে। একই উপজেলায় গত বছর অপহরণের পর পাওয়া যায় স্কুলছাত্র সোয়েবের লাশ। নারায়ণগঞ্জে গত বছরের ৬ মার্চ মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকি নিখোঁজ হয়। ৮ মার্চ তার লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীর একটি শাখা খালে। এ ছাড়া সোনারগাঁয়ে নৃত্যশিল্পী বাদল, মেঘনাঘাট এলাকার ক্লিনিক ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম, যুবক রুবেল ও গার্মেন্ট কর্মী সাদিয়া অপহরণের পর হত্যার শিকার হয়।
এক জরিপে দেখা যায়, গত বছরের মার্চের পর নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে নিখোঁজ হয় জাপা নেতা হাজী রিপনের ছেলে সালেহ রহমান সীমান্ত, জাপা কর্মী ইউসুফ হোসেন লিটন, ব্যবসায়ী কালাম শিকদার, জেকি, সুলতান শওকত ভ্রমর, গুলশান থেকে যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম ভূইয়া পারভেজ ও রূপগঞ্জে ব্যবসায়ী গুলজার হোসেন রাজ ডিবি পরিচয়দানকারীদের হাতে অপহৃত হন। এদের মধ্যে জাপা নেতার ছেলে সালেহ রহমান সীমান্ত, জাপা কর্মী ইউসুফ হোসেন লিটন ও ব্যবসায়ী সুলতান শওকত ভ্রমরকে বিভিন্ন মামলায় পরবর্তীতে গ্রেফতার দেখায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু এখন পর্যন্ত অপহরণের পর নিখোঁজ রয়েছে যুবলীগ নেতা পারভেজ, ব্যবসায়ী কালাম শিকদার ও জেকি। এদের মধ্যে রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী গুলজার হোসেন রাজের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে শহরের দেওভোগ এলাকায় সংঘর্ষে নিহত সন্ত্রাসী পারভেজের ভাই মেজর দিনদুপুরে অপহরণের পর নিখোঁজ রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন সময় অপহরণের পর নিখোঁজ থাকা এসব ব্যক্তির মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেছে। তাই অপহরণের পর নিখোঁজ থাকা স্বজনদের অনেকে আশাবাদী কোনো সংস্থা নিখোঁজদের এক সময় ফিরিয়ে আনবে। তবে জেলায় এভাবে অপহরণের পর নিখোঁজ ও বিভিন্ন সময় লাশ পাওয়ার ঘটনায় শঙ্কিত জেলাবাসী। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম জানান, কোনো অভিযোগ পেলে আমরা সর্বাত্দক চেষ্টা করছি তাদের উদ্ধারের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।