আমার মাঝে আমি,নিজেকে বার বার খুজি । জয় হোক স্বপ্নের,সত্যি হোক জীবনের আশা । মানুষের মাঝে মানুষ,উড়ায় হৃদয়ের ফানুশ ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রচন্ড শব্দে কেপে উঠল চারপাশ,ধুম ধুম ধুম ।
ধীরে ধীরে চোখ খুললো ইয়াসমিন।
চারিদিকে অন্ধকার। আসলে সে অন্ধকারের মাঝে রয়েছে, নাকি চোখে অন্ধকার দেখছে তা বুঝতে তা বুঝতে পারল না । মিনিট খানেক পরে সে বুঝতে পারল সে অন্ধকার ঘরে পড়ে রয়েছে । চোখ তার ভারী হয়ে আছে । মাথা নাড়ানোর মত শক্তি তার শরীরে নেই।
শরীরের নিচের দিকে কোথাও হয়তো কেটে গেছে, পুড়ে গেছে শরীরের আরও অনেক অংশ । ইয়াসমিনের শরীর ভারী হয়ে আসে, মাথাটা সে চেপে ধরে প্রচন্ড ব্যথাতে । চারপাশের বদ্ধ গন্ধে মাথার ব্যথা আরো বেড়ে যায় । তার চোখে আবারো নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। পুণরায় ঞ্জান হারায় ইয়াসমিন।
একটা রাস্তার ধারে পড়ে আছে আবু সামির । মাঝে মাঝে দুই-একটা গাড়ি পাশদিয়ে চলে যাচ্ছে। উঁচু একটা ঢিবির উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে সে । যতদুরে চোখ যায় শুধুই ধুধু খোলা ময়দান। চোখের সীমানার শেষেও দুই একটা মানুষ অথবা বাড়ির নিশানা পাওয়া যায় না।
কখন থেকে সামির এখানে পড়ে রয়েছে তা জানা না গেলেও আকাশে শকুনের উড়ে চলা দেখে মনে হল, তাদের খাবার তাদের মুখের কাছে, কিছুক্ষন পর তারা তাদের পেট ভরে ফেলতে পারবে। এভাবে সকালের সূর্য গড়িয়ে দুপুর পার হয়ে যায়। শুনশান নিরবতা ভেঙ্গে মাঝে মাঝে ভদ্র মানুষের দলগুলো গাড়িতে করে পাশ কাটিয়ে যায় তাকে । বেরসিক শকুন আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসে। আর কিছুক্ষন, মাত্র কিছুক্ষনের অপেক্ষা।
জ্ঞন ফিরে ইয়াসমিনের। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা জাগলেও মনেতে তার ক্ষুধা নেই। মুখের মাঝে একদলা রক্ত। রক্তের লোনা স্বাদে তার ঘেন্না লাগছিল । থু করে ফেলে দেয় রক্তের দলাটুকু।
ক্লান্ত শরীরে হাত বাড়াতেই সে আরও একটি শরীরের স্পর্শ পায়। কিছুক্ষন হাতড়ে সে বুঝতে পারে, এটাও নারী দেহ । হাত সরিয়ে আনে ইয়াসমিন । অনেক কষ্টে উঠে বসে সে । তার স্তনদ্বয় খুবলে খাওয়া, খাদ্যবিহীন শরীরের ২০৬ টি হাড় দেখা যাচ্ছে।
দূরে ছোট একটি আলো জ্বলছে। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ছুটে আসা লাল আলোতে সে নিজেকে দেখল। মাথার চুলগুলো কাটা, শরীরের নানা অংশে রক্ত জমাট বেধে কালো হয়ে গেছে, কোমরের নিচে রক্ত শুকিয়ে জমাট বেধে আছে। হঠাত্ হাসি পায় ইয়াসমিনের । আশেপাশের মেয়েরাও তার মতই উলঙ্গ ।
প্রত্যেকের যোনি ছেড়া । তাদের দেহের ২০৬ টি হাড়ের মধ্যে মাংস বলতে বুকের উপর দু'টি খুবলে খাওয়া মাংশের পিন্ড, ভদ্রলোকেরা নাকি এগুলোকে স্তন বলে ডাকে।
এই বদ্ধ কয়েদিখানাতে ইয়াসমিন প্রায় ৭ মাস ধরে পরে আছে। এখানে তার মত আরও শ'খানেক বন্দি রয়েছে। তাদের সকাল-দুপুর-রাত নেই , ভদ্র লোকগুলোর যখন ইচ্ছে মাটিতে ছ্যাচড়াতে ছ্যাচড়াতে টেনে নিয়ে যায় তাদের কক্ষে, কখনো একজন, কখনোবা ছয় কিংবা সাত।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর শিক্ষিত লোকগুলো এক সাথে আক্রমন চালায় তাদের দেহে, শিশ্নওয়ালা এই মানুষগুলি পৃথিবীর বিবেক। কতগুলো পাগল দেয়ালে মাথা ঠুকিয়ে ঠুকিয়ে মারা গেছে। সে মরতে পারে নি। জীবন মৃত্যুর মাঝে দাড়িয়ে আছে । আত্মহত্যা নাকি মহা পাপ! আচ্ছা, সে যদি মরে যাই, তবে কি তাকেও জাহান্নামে যেতে হবে???
দূরে একজন ভদ্রলোককে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।
ইয়াসমিনকে আবারও যেতে হবে, তাদের শিশ্ন পুজা করতে হবে । তারা এ ধরনীর বিবেক, তাদের শিশ্ন পুজা করাও পৃথিবীর বিবেকের অংশ ।
হঠাত বোমা হামলাতে একটা গাছের নিচে চাপা পড়ে ইকবাল,ড্রোণ গুলি চলে গেলে অনেক কষ্টে বের হয় সে,এখন তাকে খুজতে হবে,তার আত্বীয় স্বজন কে কে বেচে আছে খুজে দেখতে হবে , তার এক মাত্র ভাই আবু সামিরের খোজ নিতে হবে ।
ভয়ে ভয়ে এগুতে থাকল ইকবাল । তার শেষ আত্মীয় এর খোঁজে ।
সামির খুব কষ্টে চোখ খুলে । তার আর বেশি সময় নেই। তাকে অন্য পৃথিবী ডাকছে। কষ্টে মুখ ফুটে বলে,
- ভাই, আমি একটাকে মেরেছি। আর পারছিনারে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু......
সামিরকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে ইকবাল।
ইকবালের চোখে পানি আসে না। তার চিত্কার হারিয়ে যায় দূরে, বহুদুরে......
সামিরের গায়ে অসংখ্য স্প্রিনটারের চিহ্ন । মৃতদেহ কাঁধে তুলে হাটতে খাকে ইকবাল। শকুনগুলো আর অপেক্ষা করে না। তাদের জন্য সারাদেশে এরকম খাবারের অভাব নেই।
লাশের পর লাশ। বেওয়ারিশ লাশে ভরে গেছে দেশ। শকুনের প্রজনন হারও বাড়ছে ক্রমশই। শকুনের খাবারের কাছে তাদের প্রজনন হার অবশ্যি নিস্য। হাটতে হাটতে সামনে একটা গর্ত দেখতে পেল ইকবাল।
সামিরকে গর্তে ফেলে বালু চাপা দিয়ে বসল পাশে।
অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। চারদিকের শুনশান নিরবতাতে চারপাশ চুপ। খোলা আকাশে তখন আলোর বাতিঘর নিয়ে বসেছে চাঁদ। এই ধুধু মরুতে চাঁদের বুড়ি মুচকি হাসছে।
এই হাসি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের হাসি। এই হাসির নেই কোন শেষ।
ছয়জন ভদ্রলোকের দেহ পুজা শেষ হলে, ইয়াসমিনকে আবারো ফেলে গেল ভদ্রলোকগুলো বদ্ধ ঘরে । ভদ্রলোক গুলোর আদরে রক্ত ঝরছে ইয়াসমিনের স্তন হতে। পেট ফুলে গেছে তার।
ডিমওয়ালা ইলিশের মত তার পেটের ভেতরে শুয়োরের ছানাগুলো কিলবিল করছে। পেটে হাত দিয়ে সে হাসে, মুচকি হাসে।
বালাদ শহরের একটি ঘরে থাকতো ইয়াসমিনরা। বাবা-মায়ের সাথে একমাত্র সন্তান, ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একদিন সেই ঘরে ঢোকে ভদ্রলোক গুলো।
একে-৪৭ এর গুলিতে ঝাঁঝরা হয় ইয়াসমিনের বাবার শরীর। আর মা! সবজি কাটার চাকু দিয়ে কেটে দেয় নিজের গলা। তবে ইয়াসমিনের সেই সৌভাগ্য হয়নি। ভদ্রলোকেরা তাকে ধরে আনে এই কয়েদিখানাতে।
৭ মাস,
৭ মাস ধরে চলছে এই ভদ্রলোকদের ভদ্রতা।
রাত পার হয়ে সকালে ঘুম ভেঙে হাটতে হাটতে একটা বিশাল মাঠের সামনে দাড়ায় ইকবাল। এই মাঠে সে কত খেলেছে। ইকবাল ও সামিরকে কখনো এক দলে রাখা হত না। তারা একদলে খেললে ফলাফল কি হবে, তা সবার জানা। তুখোড় ফুটবল খেলত তারা।
চোখে ছিল জাতীয় দলে খেলার প্রবল ইচ্ছে। কিন্তু না, সবার স্বপ্ন পুরন হয় না। শান্তির বানী নিয়ে তাদের দেশে আসে এক পাল ভদ্রলোকের দল। তারা জনসংখ্যা কমাতে মেরে ফেলে তাদের বাবা-মাকে। বছর খানেক কুড়িয়ে খাবার খুঁজে খুঁজে পেট চালিয়েছে দু'ভাই।
আজ সামির মারা গেছে। নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তার আর কেও নেই।
ইকবাল ভাবে- আচ্ছা, আকাশে কি আল্লাহ্ থাকে? এই ভদ্রলোকের ভদ্রতা কি আল্লাহ্ দেখেন না? নাকি আল্লাহ্ ভদ্রদের মতই ভদ্র? উঠে দাড়ায় ইকবাল, মরতে তো হবেই, মরার প্রস্তুতি নেয় সে ।
৩ মাস পর.... BBC তে প্রচার হচ্ছে "আবু গারিব কারাগারে ইসলামিক জঙ্গিদের আক্রমণ । এতে ১১ জঙ্গি সহ বিশজন মার্কিন সেনা নিহত হয়।
জঙ্গিদের মধ্যে ইকবাল নামে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কারাগারের বন্দি কয়েকজন মহিলাও নিহত হয়। তারা হলেন ইয়াসমিন, ইয়াশিম......
এ সম্পর্কে দেশবাসিকে হার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলু ভুশ বলেন,
আমরা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে লড়াই করছিলাম,করবো। আমাদের কেউ আটকা তে পারবে না। আমরা বিশ্বে শান্তির দুত,আবু গারিব কারাগারে নিহত মার্কিন মেরিন সেনার পরিবারের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল।
আর ইরাকে মারণাস্ত্র আছে তা আবারও প্রমান হল,তা না হলে ১১ জঙ্গি কিভাবে ২০ জন সেনা কে মারল। আর ইসলামে মারামারি নাই,ইসলাম মানে শান্তি আর শান্তি,আকাশে বাতাসে শান্তি। যারা আবু গারিবে আক্রমন করেছে তারা ইসলাম জানেনা । তারা জন্গি ।
অমুক তমুক দেশের গ্রান্ড মুফতি বলেন, ইসলামের নামে এইসব বোমাবাজি ফিতনা।
আপনারা এভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরবেন না। বোমা মেরে কারাগারের বন্দিদের মেরে ফেলার নিয়ম ইসলামে নেই। যারা এগুলো করে, তারা খারেজি। ইসলাম শুধু শান্তি আর শান্তি ।
ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে ১০ তলা বিল্ডিঙ্গে বসে বিবিসিতে নিউজ দেখতে দেখতে পিজ্জাতে কামড় বসাতে বসাতে ৬ বছরের এরিক তার বাবা পিটারকে জিজ্ঞেস করল
- বাবা টেরোরিস্ট কারা ??
বাতাসে বিড়ির ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে পিটার বলল
-মুসলমানেরা ।
মুখবন্ধ - কাল্পনিক গল্প । বাস্তবের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ি নয় ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।