আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু উচ্ছল তরুণের এক বিকেলের গল্প !!

সত্যের পথে সন্ধানী দৃষ্টিতে...... পাহাড় ভ্রমণে-তো সবাই যায় কিন্তু তা যদি হয় একটুখানি অন্যরকম তাহলে সেটিই এই তীব্র শীতে অতি কষ্টে থাকার মধ্যেও মানসিক বিনোদনের একটা উপলক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। সময়: বিকেল ৩:১০, অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় ৫ জন যুবক তাদের বিকেলের সর্বসুখ-নিসৃত আলস্য-ভরা ঘুমকে বিদায় দিয়ে রওনা হল পাহাড়-ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের প্রাণের "চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়"-এর অদূরে অবস্থিত সবুজে ঘেরা পাহাড় ভ্রমণে। এই ভ্রমণের প্রাথমিক বাধা...প্রথমেই তাদেরকে অতিক্রম করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত উঁচু দেয়াল। একে একে পাহাড় ভ্রমণে মোটামুটি অভিজ্ঞ চারজন সহজেই সেই মহাপ্রাচীর অতিক্রম করার দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা অর্জন করল, কিন্তু বিপত্তি বাঁধল প্রথম ভ্রমণে যাওয়া একজনকে নিয়ে...কোনমতে সে উঠে দাঁড়াল সেই মহাপ্রাচীরের উপর কিন্তু মহাপ্রাচীরের উপর থেকে নিচে নামার সময় কিভাবে কোথায় লাফ দিবে তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলল কিছুক্ষণ......অবশেষে মর্ত্যে পদার্পণ এবং অভিযান শুরু । উদ্দেশ্য...প্রথমেই সবচেয়ে বড় পাহাড়-টায় অভিযানের মধ্যবিরতি এবং পুরনো সেই কূপ দেখা ।

তো খালি হাতে কীভাবে যাওয়া যায় !!! খুঁজে পাওয়া গেলো স্থানীয় কৃষকের কঠোর পরিশ্রমের ফসল কিছু লাকড়ি, আর তা-ই হয়ে উঠল তাদের অভিযানের অন্যতম সঙ্গী। সবাই একটা একটা করে নিয়ে সেই কৃষকের খানিক সর্বনাশ করে যখন অভিযানের শুরু করল তখন তাদের বোধোদয় হল কৃষকের পরিশ্রমের কথা। তখন তাদের দয়ার্দ্র হৃদয়ের চরম শাসানিতে রেখে যেতে বাধ্য হল সেই প্রাকৃতিক অস্ত্রগুলো। আবারো পথচলা......... তীব্র শীতে পরিহিত বস্ত্রগুলো তখন তাদের কাছে মনে হচ্ছিল গরমের দাবদাহে পরিহিত অতিরিক্ত পোষাক । so...যা হবার তাই হল।

শীতের কাপড়টি উঠে আসলো হাতে। চলার পথে আরও অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে তারা উঠে আসল সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির চূঁড়ায়। তখন গ্রীনিচ মান সময় ১০:৩৫(স্থানীয় সময় বিকেল ৪:৩৫)। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান এবং চিরাচরিত ফটোসেশন। তারপর সন্ধ্যার পর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা (শীতের তীব্রতা এবং অন্ধকারের কাছে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় সেখান থেকে ফিরে আসার পরিকল্পনা)।

স্থানীয় সময় যখন বিকেল ৫:০০টা তখন অচেনা পথে ফিরে আসার প্রস্তুতি। পাহাড়ের নিচে নামার সময় আবারো বিপত্তি সেই প্রথম ভ্রমণে আগত দুঃসাহসিক ছেলেটিকে নিয়ে। পরে অতি কষ্টে নানা কসরতে তাকে নামানো হল। তারপর অচেনা পথে দুই পাহাড়ে আবদ্ধ অন্ধকারাচ্ছন্ন গুহার ভিতর এবং পাহাড় নিঃসৃত জলের ধারায় খালি চরণে হেঁটে ফিরতি যাত্রা, আর সেই সাথে তীব্র শীতে বরফ-শীতল জলের তীব্রতর স্পর্শ !!! সেই সাথে পাহাড়ি জোঁকের উলঙ্গ চরণে চুম্বনের আশঙ্কা। চলতে চলতে একসময় বরফ-শীতল জল-কে ছেড়ে এসে কর্দমাক্ত মাঠে এসে উঠল অভিযাত্রী দল।

উদ্দেশ্য জগৎপুর আশ্রম। কিন্তু ততক্ষণে যে তারা পথ হারিয়ে অন্যদিকে চলে গেছে তা বুঝতেই পারেনি। আরও কিছুক্ষণ হাঁটার পর বুঝতে পারল তাদেরকে প্রকৃতি ভুল পথে নিয়ে এসেছে। ততক্ষণে চারিদিক প্রায় অন্ধকার হয়ে গেছে । তখন সবার মনে একটাই ভাবনা......"কখন দেখা পাব মেইন রোডের"।

ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখে পড়ল দুইটি মাটির ঘর। মনে স্বস্তি আসলো সবার এই ভেবে যে, যেহেতু বাসা পাওয়া গেছে সেহেতু নিশ্চয় আশেপাশেই রাস্তা আছে। অনেক আশা ভরসা বুকের মধ্যে জেগে উঠল এবং জিজ্ঞেস করে পথ চিনে নেওয়ার জন্য তারা বাসায় গেলো। কিন্তু প্রকৃতির নিষ্ঠুর খেলার উপাদান সেই যুবকগুলো যখন বাসায় গেলো তখন ৩ টি গরুর পদচারণা ছাড়া তারা কোন স্ব-জাতির(মানুষের) দেখা পেলনা। কিন্তু তাতে কী !!! অন্তত একটা বাসা-তো পেয়েছে !!! যদি কোন রাস্তার দেখা না পাওয়া যায় তাহলে এটা যার বাড়িই (হোক সেটা ভূত অথবা অন্য কোন অশরীরি) হোক... শীতের আক্রমণ থেকে একটু হলেও বেঁচে রাত-টা অন্তত কাটিয়ে দেওয়া যাবে।

কিন্তু ততক্ষণে অভিযাত্রীদেরকে মনে হচ্ছিল ধান ক্ষেতে(কর্দমাক্ত মাঠে) ধান লাগিয়ে এইমাত্র ঘরে ফিরে আসা কৃষকের মত। তাই এই তীব্র শীতে সবার হাত,পা-র বরফ-শীতল হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা এবং তার সাথে তাল মিলিয়ে অভিযাত্রীদের উষ্ণ রক্তের যুদ্ধ অনবরত চলতে থাকে আর সাথে সাথে মস্তিষ্ক জানান দেয় তীব্র শীতের ভয়ঙ্কর শক্তি। অবশেষে সেই মাটির বাসায় থাকার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আবারও অজানা আলোর উদ্দেশ্যে অনির্দিষ্ট যাত্রা........................... সবার চোখ হঠাৎ করেই তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল(কারণ লক্ষ্য একটাই )!!! যেতে যেতে হঠাৎ একটা মাটির রাস্তার দেখা পাওয়া গেলো। যেন তাদের চোখে ডুমুরের ফুল এসে ধরা দিয়েছে এই উল্লাসে সবাই উল্লাসধ্বনি করল। কিন্তু এখনও তারা জানেনা এর শেষ কোথায় ???????? তখন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫:৪৫(ততক্ষনে চাঁদের আলো তাদের পথ চলার একমাত্র ভরসা)।

সেইসময় তারা শুনতে পেল মাইক-এর আওয়াজ । মনে আশার আলো আরও তীব্র হল। সেই আওয়াজের দিকেই এগিয়ে যেতে হবে(তা যত দূরেই হোক), এই প্রত্যয়ে আবারো মাটির রাস্তায় পথ-চলা। তারা যাচ্ছে তো যাচ্ছেই.........কিন্তু পথের আর শেষ হয়না। "মনে হচ্ছে চলেই এসেছি, এইতো আর একটু গেলেই বড় রাস্তায় চলে যাব"-এই আশা নিয়ে সবাই আগাচ্ছে।

কারো গায়ে এখন আর শীত লাগেনা !!! কারো মুখে শীত সম্পর্কে কোন কথা নেই !!! শুধু মনে একটাই ভাবনা, কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ !!! মাটির রাস্তা পেরিয়ে ইটের রাস্তা...তারপর আবার মাটির রাস্তা...আবার ইটের রাস্তা...এইভাবে হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে তারা দেখতে পেল তাদের কাংখিত সেই কাপ্তাই রোড। অবশেষে ঘটল অনিশ্চিত যাত্রার সুখকর পরিসমাপ্তি। তখন সন্ধ্যা ৭টা বেজে ৩০ মিনিট। সেখানে এক চায়ের দোকানে গরুর দুধের চা তাদেরকে এই কয়েকটা ঘন্টার কষ্টকর স্বাদ ভুলিয়ে দিল। তারপর চা-পান শেষে সিএনজি-তে করে আবার রাত ৮:০০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন ।

এভাবেই শেষ হল তাদের দুঃসাহসিক অভিযান। #অভিযাত্রীরা হলঃ নাঈম, রিভান, শামীম, রায়হান, মাহ্‌ফুজ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।