চিত্রনাট্য কোনোভাবেই বদলাল না চট্টগ্রামের। সত্যি বলতে কোনোভাবেই বদলাতে দেননি কুমার সাঙ্গাকারা। মিরপুরে পারেননি। তাই হয়তো পরিকল্পনা এঁকে নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের। ছক কষেছিলেন কীভাবে ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী হওয়া যায়, কীভাবে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসের বিচালীতে নিজেকে চিরস্থায়ী করা যায়।
৩৬ বছর বয়সী সাঙ্গাকারা সব করলেন চট্টগ্রামে। লিখলেন ব্যাট হাতে চিত্রনাট্য। গড়লেন একের পর এক রেকর্ড। চট্টগ্রামকে বানিয়ে নিলেন নিজের পয়মন্ত ভেন্যু। ১৩৭ বছরের ২১১৭ টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সাঙ্গাকারা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান, যিনি ট্রিপল সেঞ্চুরির সঙ্গে সেঞ্চুরি করেছেন একই টেস্টে।
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই বিরল রেকর্ড লিখেছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও ওপেনার গ্রাহাম গুচ। ১৯৯০ সালে লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ট্রিপল সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। গুচময় ওই টেস্টে ইংল্যান্ড জিতেছিল ২৪৭ রানে। সাঙ্গাকারাময় চট্টগ্রামের পরিণতি কি হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মিরপুরে মাহেলা জয়াবর্ধনের ছায়ায় ঢাকা পড়েছিলেন সাঙ্গাকারা।
যদিও নামের পাশে লেখা ছিল জ্বলজ্বলে ৭৫ রান। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যানের জন্য যা বড্ড বেমানান। তাই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অসাধারণ ক্রিকেট খেলে দ্বীপরাষ্ট্রের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তুলে নেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। ৩১৯ রানের ইনিংসটি খেলার পথে তিনি নাম লিখেন দুই ব্যাটিং লিজেন্ড সুনীল গাভাস্কার ও ব্রায়ান লারার পাশে। গাভাস্কার ও লারার সেঞ্চুরি সংখ্যা ৩৪টি করে।
কাল ১০৫ রানের ইনিংস খেলে সোহাগ গাজীর বলে বোল্ড হওয়ার পর টপকে যান দুই লিজেন্ডকে। ১২২ টেস্টে তার সেঞ্চুরি ৩৫টি। তার চেয়ে এগিয়ে শচীন টেন্ডুলকার (৫১), জ্যাক ক্যালিস (৪৫), রিকি পন্টিং (৪১) ও রাহুল দ্রাবিড় (৩৬)।
মিরপুরে ইনিংস ও ২৪৮ রানে অসহায় আত্দসমর্পণের পর মনেই হয়নি চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়াবে টাইগাররা। অবশ্য লড়াইয়ে নামার আগে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের কিছু কিছু সুখকর স্মৃতিকে আত্দবিশ্বাসের টনিক করে নিয়েছিলেন টাইগাররা।
সেই আত্দবিশ্বাসই ম্যাচটিকে টেনে নিয়ে গেল পঞ্চম দিনে। শ্রীলঙ্কার ৫৮৭ রানের জবাব দিয়েছে স্বাগতিকরা শামসুর রহমান শুভ ও ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরিতে ৪২৬ রান করে।
১৬১ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩০৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। এগিয়ে যায় ৪৬৬ রানে। এর মধ্যে সাঙ্গাকারার সঙ্গে সেঞ্চুরি করেছেন সহঅধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালও।
সাঙ্গাকারার ১৪৪ বলে ১০৫ রানের ইনিংসটি অবশ্য একেবারেই নিশ্ছিদ্র ছিল না। ব্যক্তিগত ৩৬ রানে সাকিবের বলে ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন নাসির হোসেন। জীবন পেয়ে আর পেছনে তাকাননি। উইকেটের চারদিকে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে লিখে নেন তিন অঙ্কের ম্যাজিকেল ইনিংস। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে সপ্তম এবং ক্যারিয়ারের ৩৫ নম্বর সেঞ্চুরি।
প্রথম ও একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি সাঙ্গাকারার। এ ছাড়াও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দু-দুইবার টাইগারদের বিপক্ষে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন তিনি। গত অক্টোবরে গলে রান করেছিলেন ১৪২ ও ১০৫। এ ছাড়াও টাইগারদের বিপক্ষে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন আরও চার ক্রিকেটার। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের ইয়াসির হামিদ করাচিতে প্রথম ইনিংসে ১৭০ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১০৫ রান।
২০০৯ সালে এ চট্টগ্রামেই তিলকারত্নে দিলশানের ব্যাট থেকে বেরিয়েছিল ১৬২ ও ১৪৩ রান। ২০১২ সালে মিরপুরে ১১৭ ও ১১০ রান করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিয়েরন পাওয়েল। জিম্বাবুয়ের ব্রেন্ডন টেলর করেন ১৭১ ও ১০২*। রেকর্ডময় এই টেস্ট হতে পারে সাঙ্গাকারার নামেও। ট্রিপল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের সোনালি পাতায় ব্যাকেটবন্দী হওয়া সাঙ্গাকারা সবচেয়ে কম ইনিংসে এগারো হাজার রানের মাইলফলকও গড়েন এখানে।
এগারো হাজার রানের মাইলফলক গড়েছিলেন ২০৮ ইনিংসে। লারার লেগেছিল ২১৩ ইনিংস। ১২২ টেস্টে সাঙ্গাকারার রান ২১১৭ টেস্ট ইতিহাসে সাঙ্গাকারার ট্রিপল সেঞ্চুরি ২৭ নম্বরে। ১৯৩০ সালে জ্যামাইকার কিংস্টনের সাবিনা পার্কে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি স্যান্ডহাম। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে দুটি করে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন স্যার ডন ব্রাডম্যান, ব্রায়ান লারা, বীরেন্দর শেবাগ ও ক্রিস গেইল।
এর মধ্যে লারাই একমাত্র ক্রিকেটার যার নামের পাশে রয়েছে ৪০০ রান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।