বলেেত িবব্রত লােগ
বই সম্পর্কে বলার আগে লেখক সম্পর্কে বলতে হয় যে তিনি ইতিহাসবীদ হলেই হয়ত ভাল করতেন তার প্রাঞ্জল বর্ননা ভঙ্গির জন্য। গতানুগতিক ইতিহাসের বই না হলেও তার তথ্যসমৃদ্ধ ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ননা মনোমুগ্ধকর।
বইয়ের প্রচ্ছদেই বোঝা যায় যে এটি ইতিহাস, ভ্রমন আর রাজনীতির মিশেলে লিখিত। বইয়ে লেখকের ভ্রমন ও রাজনীতির যে অংশ তা সাধারন বর্ননাভঙ্গিতে বর্ণিত, যদিও সেখানে আছে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর বর্ননা যা আমাকে সবসময় টানে যদিও প্রকৃতির এ বর্ননাভঙ্গিতে কাব্যিক ধারা অনুপস্থিত।
ইতিহাসখ্যাত বীর চেঙ্গিসের কারনেই এই বইটি আমার হৃদয়ে দাগ কেটেছে।
চমৎকার বর্ননাভঙ্গির জন্য আমার মনে হচ্ছিল যে আমি যেন সোভিয়েত লেখক নিকোলাই গোগলের ”তারাস বুলবা” উপন্যাস পড়ছি। কখনো মনে হচ্ছিল এ যেন গ্রীক পুরান যেখানে বালক তিমুজিনের আদিপুরুষ এসেছে স্বর্গীয় এক নেকড়ে আর এ ধরাতলের এক হরিণীর মিলনে।
একটি বিষয় আমি বিশ্বাস করি আর তা হল জীবনের সাফল্য আসে পরিশ্রম আর চেষ্টা সেই সাথে প্রয়োজন নিজের বুদ্ধিদীপ্ততা যা বালক তিমুজিনের ছিল। এ কারনেই চেঙ্গিসের মত মানুষেরা আমার কাছে একদিকে নরহত্যাকারী ঘাতক আবার অন্যদিকে বীর। অবশ্য বুদ্ধিদীপ্ত চেঙ্গিস খাঁন এটিও বুঝতে পেরেছিলেন যে জীবনে কারো সাহাজ্য ছাড়া পুরোপুরি দাড়ানো সম্ভব নয় যা লেখক বর্ননা করেছেন এই বইয়ের ১৪ পৃষ্ঠায়।
চেঙ্গিসের বেইজিং দখলের অভিযানটি চিত্তাকর্ষক যেখানে তিনি শক্তিশালী এ নগরটিকে সরাসরি আক্রমন না করে অবরোধের মাধ্যমে দূর্বল করে তারপর আক্রমনে নেমে সফল হয়েছেন যা পরবর্তিতে অনুসরন করেছিলেন মাও সে তুং তার বিপ্লবে। সর্বোপরি প্রথ্যেকের জীবনেই সুযোগ আসে, আর বিজয়ী চেঙ্গিস সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন।
চেঙ্গিসের কোন কোন বিঝয় অভিযানকালে প্রতিপক্ষের কেউ কেউ তাকে তার প্রতিপক্ষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে সহায়তা করেছেন যাদের চেঙ্গিস খাঁন বিজয় লাভের পর হত্যা করেছেন এই বিশ্বাস থেকে যে যারা বিশ্বাসঘাতক তারা সব সময়ের জন্যই বিশ্বাসঘাতক। তা পুরোপুরি ঠিক, কিন্তু সহায়তাকারীদের হত্যার মাধ্যমে কি তিনি নিজেই বিশ্বাসঘাতকতা করলেন না ?
আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে চেঙ্গিস খাঁনের বিজয় অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল কি শুধুই এ্যাডভেঞ্চার নাকি সা¤্রাজ্য বিস্তার ? বইটিতে যদি চেঙ্গিসের বিজিত অঞ্চলের প্রশাসনিক কর্মকান্ডের কিছুটা বর্ননা থাকত তাহলে হয়ত আমার প্রশ্নের কিছুটা হলেও উত্তর পেতাম।
যুদ্ধক্ষেত্রে চরম নির্মমতা প্রর্দশনের জন্য চেঙ্গিস আমাদের কাছে নির্মম হৃদয়ের মানুষ হিসাবে পরিচিত, কিন্তু এই প্রথম জানলাম যে তার মধ্যে ছিল কোমল হৃদয়ের মানবিকতা যখন উন্মত্ত যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি এ বিপন্ন শিশুকে উদ্ধার করেন।
চেঙ্গিস একজন সুনিপুন যদ্ধকৌশলী যা এই বইয়ে ফুটে উঠেছে তার বিভিন্ন রণকৌশল প্রর্দশনে।
চেঙ্গিস খাঁনের শবযাত্রার বর্ননাটিও একাধারে মনোমুগ্ধকর ও আতঙ্কের সেই সাথে সৌন্দর্য্যরে ও রহস্যের। পাহাড়ের গভীর নিরবতায়ই তাকে সমাধিস্থ করা হয় যে পাহাড়ের কাছে গিয়ে তিনি ঈশ্বরের সাহায্য প্রার্থনা করতেন।
চেঙ্গিসের সমাধির সাথে সাথে এ বইয়ে এ সম্পর্কিত অধ্যায়েরও সমাপ্তি হয় আর আমরা প্রবেশ করি আধুনিক মঙ্গোলিয়ায় যেখানে দেশটি সদ্য সোভিয়েত বলয় থেকে বের হয়ে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সাঁতার না জানা মানুষের মত হাবুডুবু খাচ্ছে যাদের এ উদ্দেশ্যে কিছুটা সহায়তা করার জন্য লেখকের সেখানে যাত্রা।
লেখক নিজেই তার স্বীকার করেছেন যে মঙ্গোলীয়রা আলসে প্রকৃতির।
হয়ত এ কারনেই তারা জ্ঞানে পশ্চাৎপদ, যার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের দিশেহারা অবস্থা। হয়ত এ কারনেই বিশ্ব ইতিহাসে এক চেঙ্গিস খাঁন ছাড়া মঙ্গোলীয়ার আর কারো নাম শুনা যায় না। মঙ্গোলীয়ার মত তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে বিশাল নির্মানযজ্ঞ সেখানে সেখানে লেখকের বর্ননাতেই বুঝা যায় যে সেখানে তেমন কিছুই নেই। তাহলে সেভিয়েতরা তাদের প্রভাব বলয়ে রেখে মঙ্গোলীযদের কি উন্নতি করল ? মঙ্গোলীয়া কি ছিল তাদের পরোক্ষ উপনিবেশ বা হাতের পুতুল ? তবে লেখনিতে এটা স্পষ্ট যে আধুনিক বিশ্বে মঙ্গোলীয়ায় যোগ্য নেতৃত্বের অভাব রয়েছে।
তাই হাতের তালুতে রক্ত নিয়ে জন্ম নেয়া তিমুজীনের মত কোন বিধ্বংসী মানব নয়, সৃষ্টির সৃষ্টিশীলতায় পরিপূর্ণ কোন মোঙ্গল জেগে উঠ’ক মঙ্গোলীয়ার সমতল আর পাহাড়ে এই আশা রইল।
মঙ্গল হোক মঙ্গোলীয়ার !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।