আইমান আল- জাওয়াহিরি মিশরের কায়রো শহরের কাছে জন্ম গ্রহণ করেন। সময়টা ১৯৫১। তিনি তার চাচা মোস্তফা কামাল ওয়াসিফের অনুপ্রেরনায় ১৪ বছর বয়সে যোগ দেন মুসলিম ব্রাদারহুডে। যদিও পারিবারিক ভাবে কুতুবিজিমে বিশ্বাসি ছিলেন। ১৯৬৬ সালে কুতুবিজমের প্রধান মাওলানা সাইদ কুতুবকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
জাওয়াহিরি তার আরও চার জন স্কুল পড়ুয়া বন্ধু মিলে মিশরের সরকারকে উৎখাত করার জন্য কুতুব ভিশন নামক একটা গোপন সেল খোলেন, যা কিনা পরবর্তীতে কট্টর মৌলবাদি মিলিট্যান্ট "আল জিহাদের" সাথে যুক্ত হয়।
পারিবারিক ভাবে কুতুবিজিমে বিশ্বাসি হলেও জাওয়াহিরি মাদ্রাসায় না পরে স্কুলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সার্জারিতে মাস্টাস করেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয় বাধ্যতামুলক ভাবে। ১৯৮১ তে আনোয়ার সাদাত হত্যাকান্ডে শতাধিক সেনা অফিসার গ্রেফতার হলে জাওয়াহিরিও আটক হয়, কিন্তু প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়।
পেশায় মেডিকেল সার্জন (ডাক্তার) হিসাবে জাওয়াহিরি ১৯৮৫ সালে সৌদি আরবের একটা হাসপাতালে চাকুরিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের প্রথম দিকে চাকুরি সুত্রে তার সাথে আল কায়েদা প্রধান বিন লাদেনের দেখা হয়। বিন লাদেন মাত্র লন্ডন থেকে মাত্র ফিরেছেন। তিনি তার দলকে নিয়ে আল কায়েদার সাথে যোগদেন এবং বিন লাদেনের ব্যাক্তিগত চিকিৎসক হিসাবেও নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
১৯৭৮ এ শীতলযুদ্ধের এক পর্যায়ে সোভিয়েটরা আফগানিস্তান দখল করে।
সারা পৃথিবী জুরে কেজিবি এবং সিআইএ এর স্নায়ু যুদ্ধ যখন চরমে তখন আমেরিকার কাছে এইটা সাপে বর হয়ে আসার মতো ব্যাপার ছিল। আমেরিকা পাকিস্তানী ব্যাক জামায়াতুল ওলামায়ে ইসলাম পরিচালিত তালেবানদের অস্ত্র, ট্রেনিং, খাদ্য ও সৈন্য দিয়ে সহায়তা করতে থাকেন রাশিয়াকে আফগানিস্থান থেকে হটানোর জন্য। রুশপন্থিদের বিতারিত করে একটা আপাতত ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য। এর মধ্যে ১৯৮৫ সালের দিকে জাওয়াহিরি তার ছোট ভাই মুহাম্মদকে বসনিয়া যুদ্ধে নিযুক্ত করেন।
জাওয়াহিরির সাথে তখন জাদরেল মোল্লা ওমর, উসামা বিন লাদেন, গুল-বুউদ্দিন হেকমতিয়ার এবং মতো পৃথিবীর সব নামীদামী সন্ত্রাসী।
আমেরিকার ভাড়াটে কুকুর পাকিস্তানি সেনা ও গোয়েন্দা ISI এর সহায়তা তখন ওপেন সিক্রেট। একের পর এক ধ্বংস করা হয় আফগানের উর্বর জমি এবং সেখানে উৎপাদন করা হয় আফিম। মাদক ব্যাবসার অবাধ সুযোগ দেয়া হয় পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের। লাদেন-মোল্লা ওমরদের অতখন অবাধ রাজত্ব। ছুন্নি ছাড়া বাঁকি অন্য সম্পরদায়ের মানুষদের বাড়ি ধ্বংশ করে দেয়া হয়।
প্রথমের দিকে জনগণ বিনা পয়সায় আফিম বা হেরোইন দিয়ে তাতে আসক্ত করে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হতো। খুব দ্রুত একের পর এক এলাকা দখলে নিতে থাকে তালেবান মিলিশিয়ারা। সোভিয়েটরা তখন গ্লাসনষ্ট ও পেরেস্ত্রোয়িকায় পরিবর্তন হচ্ছে। যুদ্ধে তখন সরে আসার চিন্তা রাশিয়া একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ১৯৮৮ সালে তাদের সৈন্য গুটিয়ে নেয়। আফগানিস্থানের নতুন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ নাজিবুল্লাহ অনেকটা ছার দেয়ার অজুহাতে কম্যুনিস্ট দেশকে ইসলামিক রিপাবলিক ঘোষণা করেও রক্ষা পায় না।
১৯৯২ সালে তার সরকারের পতন ঘটে।
মুহাম্মদ নাজিবুল্লাহ ক্ষমতা চ্যুত হয়ে জাতিসংঘের মিশন হাউজে আশ্রয় নেয়। তখন তালেবানদের রাজধানী কান্দাহার। ১৯৯৬ সালের দিকে তারা কাবুল তথা গোটা আফগানিস্থান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কাবুলে জাতিসংঘের মিশন হাউজ আক্রমণ করে মুহাম্মদ নাজিবুল্লাহকে তুলে আনা হয়।
এরপর তাকে গাড়ির পিছে বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় টেনে নিয়ে বেরানো হয়। অবশেষে দিনের বেলায় জনসম্মুখে ল্যাম্প পোষ্টের সাথে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। পরের ইতিহাস সবারই জানা।
আর তাই আল কায়েদা বা ব্রাদার হুডের সাথে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামের আত্মার সম্পর্ক। জাওয়াহিরি নিজেই প্রাক্তন কুতুবিষ্ট, পরে ব্রাদার হুড, এক সময়ের জামায়াতুল উলামায়ে ইসলাম এবং বর্তমানে আল কায়েদা প্রধান।
তাই তার কাছ থেকে এমন অডিও বার্তা আসা অমুলুক কিছু নয়। অডিও বার্তা জাল হলেও পুর্ব ইতিহাস মিথ্যা হয়ে যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।