আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলকায়েদা ভিডিও বার্তাঃ কাদের স্বার্থ বহন করে তা পরিষ্কার

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

দুনিয়াব্যাপী মুসলিম দেশগুলোতে এখন ইসলামী জঙ্গি তৎপরতা ও 'জিহাদি' উন্মাদনা চলছে। কিছু দেশে তা ভয়ংকর পর্যায়ে চলে গেছে। বিভিন্ন দেশের জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছে আন্তসংযোগ। এ ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক।


পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকার প্রতিবেদন অবলম্বনে বাংলাদেশের একটি দৈনিকে প্রকাশিত ‘পাকিস্তান থেকে সরে যাচ্ছে আল-কায়েদা’ [১৬ আগস্ট, ২০১৩] শীর্ষক সংবাদটি ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বাস্তব হয়ে আত্মপ্রকাশ করল। বাংলাদেশেও সেই নেটওয়ার্ক বেশ সক্রিয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশে জিহাদি কর্মকাণ্ড শুরু করার আহ্বান জানিয়ে আল-কায়েদা নেটওয়ার্কের বর্তমান প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির নামে যে ভিডিওবার্তাটি ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়েছে, সংগত কারণেই তা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জাওয়াহিরির বার্তা-১

জাওয়াহিরির বার্তা-২

অবশ্য ভিডিওবার্তাটি জাওয়াহিরির কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এটি জাওয়াহিরিরও হতে পারে, আবার বাংলাদেশে যারা 'গৃহযুদ্ধ' কিংবা 'যুদ্ধ' শুরু করার পাঁয়তারা করছে, তাদেরও হতে পারে।

তবে কোনো ক্ষেত্রেই এর পেছনে যে ভয়াবহ ইঙ্গিত রয়েছে, তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
এই অডিও বার্তায় জাওয়াহিরির নির্বাক ছবি রয়েছে। তবে শুরুতে বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক সংঘর্ষ ও হত্যাযজ্ঞের কিছু ফুটেজ দেখানো হয়েছে। এখানে বাংলাদেশ সরকারকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ইসলামবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার’ হিসেবে।
আরও বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের মুসলিম ভাইয়েরা, ইসলামের বিরুদ্ধে যারা ক্রুসেড ঘোষণা করেছে, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।

উপমহাদেশ ও পশ্চিমের শীর্ষ ক্রিমিনালরা ইসলামের বিরুদ্ধে, ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করছে, মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আপনাদেরকে তারা অবিশ্বাসীদের দাসে পরিণত করতে পারে। ’’
ওই বার্তায় জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ উগ্র ইসলামী দলগুলোকে বাংলাদেশ সরকার ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশকে ‘বিরাট এক জেলখানা’ হিসেবে তুলে ধরে বলা হয়, ‘‘এই দেশে মুসলমানদের সম্মান আজ ভূলুণ্ঠিত। . . .বাংলাদেশ আজ এমন এক ষড়যন্ত্রের শিকার, যাতে ভারতীয় এজেন্ট, পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদরাও জড়িত। ’’
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ভিডিওবার্তার বিবরণ থেকেই বোঝা যায়, এটি বাংলাদেশে কাদের স্বার্থ বহন করে।

বার্তায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে কটাক্ষ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তান ভাঙার ও মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র বলা হয়েছে। বর্তমান সরকারকে 'ইসলামবিরোধী' আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, এখন বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। ভিডিওবার্তায় মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে পুলিশি হস্তক্ষেপের বেশ কিছু ছবি দেওয়া হয়েছে। এর ভাষা ও বক্তব্যগুলো আমাদের অপরিচিত নয়।

বার্তাটি আল-কায়েদার হতে পারে এ কারণে যে এর আগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের সময় আল-কায়েদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবান বাংলাদেশের প্রতি একই ধরনের হুমকি দিয়েছিল। পাকিস্তান জামায়াতও, যাকে তেহরিক-ই-তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলা হয়, একই ধরনের হুমকি দিয়েছিল। তখনই অনেকে অনুমান করেছিলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশে ঘটতে পারে।
পাকিস্তানি জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-এ-মুহাম্মদের মতো সংগঠনগুলোর কিছু এজেন্ট বাংলাদেশে সক্রিয় বলে বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে। হুজি, জেএমবির মতো বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে।

তাই তারা বাংলাদেশে কিছু নাশকতা করার ক্ষমতা নিশ্চয়ই রাখে। কাজেই এই হুমকিকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। এছারা অর্থ সংকটে আলকায়েদা ; আর তাদের গন্তব্য বাংলাদেশ বলেও শুনা যাচ্ছে।
দুনিয়াব্যাপী বহু আলেম-ওলামা আল-কায়েদাকে ইসলামের শত্রু হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। তাঁরা ইসলামের নাম করে সাধারণ মুসলমানদের নানাভাবে ধোঁকা দিচ্ছে এবং ইসলামের ক্ষতি করছে।

আর তা করতে গিয়ে তারা প্রায়ই মিথ্যার আশ্রয় নেয়। যেমন ভিডিওবার্তায় পবিত্র কোরআন শরিফের পুড়ে যাওয়া পাতার যে ছবি দেওয়া হয়েছে, তা যে পুলিশ করেনি, হেফাজতের উগ্র কর্মীরাই করেছিল বাংলাদেশের মানুষ তা জানে। চাঁদে সাঈদীর ছবি দেখা গেছে, এমন মিথ্যা প্রচারণাও চালিয়েছিল তাদের এ দেশীয় অনুসারীরা। এদের মুখোশ উন্মোচনে সরকারের পাশাপাশি আলেম সমাজ ও নাগরিক সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সক্ষমতায় কাজে লাগাতে হবে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।