ফেসবুক ব্যাবহার করে না এমন ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী একটাও পাওয়া যাবে না ।
কয়েকদিন আগেই বিশ্বের জনপ্রিয়তম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ১০ বছর পূর্ণ হলো। এর পেছনে প্রায় সবাই দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়ে দেন। আপনার কতজন বন্ধু আছে ফেসবুকে? ৫০০? ১ হাজার? ৫ হাজার? 8-O
অনেক অনলাইন বন্ধু থাকার ব্যপারটিকে কি আপনি উপভোগ করেন? হয়তো করেন। কিন্তু বেশিরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারীর হোম পেইজ ভরে থাকে অন্য মানুষের স্ট্যটাস বা তথ্য দিয়ে।
দেখা গিয়েছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাদের বন্ধু তালিকার মাত্র ১০ ভাগ বন্ধুকে বাস্তবে চেনেন। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুক ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুদের কাছে আনার সাথে সাথে বাস্তব জগতের বন্ধুদের দূরেও সরিয়ে দেয়। তাই Pew Research Center এক গবেষণাতে জানালো যে, কোন ১০ ধরণের ব্যক্তিকে ব্লক করে দিলে আপনার ভার্চুয়াল জীবন অনেক আনন্দময় ও উপকারী হবে।
(১) মার্ক জাকারবার্গ!
আপনি কি জানেন আপনি ফেসবুকে যে পরিমাণ সময় দেন সে পরিমাণ সময় স্বয়ং মার্ক জাকারবার্গ নিজেও দেন না। এতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো আমাদের মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তথ্য ধারণের ক্ষমতা আছে।
কিন্তু ফেসবুক নোটিফিকেশন আপনাকে বাধ্য করে বারে ফেসবুকে লগ-ইন করতে। এর ফলে মস্তিষ্কের উপর চাপ পড়ে। যা থেকে আসে মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা ও শারীরিক ক্লান্তি। যেখানে ফেসবুকের জনক নিজেই এতো সময় দেন না নিজের সাইটে, সেখানে আপনার সময়ের মূল্য কি এতোই কম?
(২) বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বা হোটেলের পেইজ
যেসব বন্ধু ঘন ঘন বিভিন্ন ব্যয়বহুল রেস্টুরেনটে খেতে গিয়ে চেক-ইন দেয়, তাদেরকে ও সেই রেস্টুরেন্টের কোন পেইজ থাকলে সেগুলো থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন। কারণ দেখা যায়, এক্ষেত্রে যাদের সে রেস্টুরেন্টে যাবার সামর্থ্য বা সুযোগ নেই, তাদের মনে এক ধরণের হীনমন্যতা তৈরি হয়।
অথবা এরকম হয়, সে বন্ধুদেরকে অনুসরণ করতে গিয়ে আপনার সামর্থ্য না থাকলেও সেখানে গিয়ে আপনি অযথা টাকা খরচ করে আসেন। শেষ পর্যন্ত ক্ষতি কিন্তু আপনারই হয়, পকেট শূন্য!
(৩) উত্ত্যক্তকারী
অনেকেই ফেসবুকের বন্ধু তালিকার পরিধি অনেক বাড়িয়ে ফেলেন। এরপর মতের অমিল হলেই দেখা যায় নানাভাবে হয়রানির শিকার হন, যা তাদের বাস্তব জীবনেও প্রভাব ফেলে। যেমন প্রতিপক্ষকে গালি বা অশ্লীল ছবিযুক্ত লেখা পোস্ট করা। যিনি এর শিকার হন তার জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ।
এসব সাইবার উত্যক্তকারীকে ব্লক করে দিন।
(৪) প্রাক্তন প্রেমিকা
প্রাক্তন প্রেমিকার ফেসবুক প্রোফাইল, পোস্ট, ছবি চেক করা এখন এতোটাই সাধারণ মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মনোবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘Monitoring’। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৯ ভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের বর্তমান প্রেমিকার বন্ধু তালিকায় আছেন বা রেখেছেন। অন্যদিকে ৬৪ ভাগ ব্যবহারকারী তাদের সাবেক প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলেও ফেসবুক বন্ধু তালিকায় আছেন। কিন্তু মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, যদি আপনার প্রতি ঘণ্টায় একাধিকবার ফেসবুকে লগ-ইন করার অভ্যাস থাকে ও আপনার প্রেমের সম্পর্ক হয় ৩ বছরের কম, তবে এ সম্ভাবনা খুব বেশি যে আপনি আপনার নতুন গার্লফ্রেন্ড বা প্রেমিকার সাথে প্রতারণা করবেন।
তাই গবেষকদের পরামর্শ, পুরনো প্রেমিকাকে ব্লক করে দিন। এটা আপনার মানসিক শান্তি বাড়াবে ও জীবনকে এগিয়ে নেবে।
(৫) ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক ‘ত্যানা প্যাঁচানো’ ব্যক্তি
এরকম অনেকেই আছেন যারা দিন-রাত শুধু রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ফেসবুক গরম করে রাখেন ও নিজে যা বলছেন সেটাকেই একমাত্র ধ্রুব সত্য বলে মনে করেন। এক্ষেত্রে তিনি যদি অসত্য কিংবা অসম্পূর্ন তথ্য দেন এবং আপনি সেখানে সঠিক তথ্য দিতে যান, সেক্ষেত্রে আলোচনাটি ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যাবার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এধরণের ব্যক্তিদেরকে ব্লক করে দেয়াটাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ।
কারণ তাদের বক্তব্য আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।
(৬) যারা ফেসবুকে বেশি জাঁকজমক দেখান
আপনার বন্ধু তালিকায় অনেক বন্ধুই হয়তো আছেন যারা প্রায় সব সময়ই বেশ হাসিখুশি, বিত্ত-বৈভব, ঘুরে-বেড়ানোর ছবি বা তথ্য শেয়ার দেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যত আপনার ফেসবুক বন্ধু বেশি হবে ও তাদের ভার্চুয়াল জগতে উপস্থাপন করা একপেশে ছবি/তথ্য দেখবেন, তত বেশি আপনার নিজেকে ব্যর্থ মনে হবে। কারণ, বাস্তব জগত বা অফলাইনে আপনার কখনোই জানার কথা নয় সেই ব্যক্তি কোথায় বেড়াতে গেল বা কোন দামি মোবাইল ফোনটি কিনলো। তাই ফেসবুকে কেউ বেশি জাঁকজমকপূর্ণ কোন কিছু উপস্থাপন করলেই তা বিশ্বাস করে ফেলবেন না।
আর এগুলো আপনার মনে বিষণ্ণতা বা অপূর্ণতার অনুভূতি নিয়ে আসলে তাকে ব্লক করে দিন। আর মনে রাখবেন, আপনি ব্যর্থ নন!
(৭) যারা ফেসবুক গেমে আসক্ত
আপনি কি জানেন শুধু ‘ক্যান্ডি ক্র্যাশ’ গেম থেকেই ফেসবুক তার অন্য যেকোন ফিচারের থেকে অনেক বেশি অর্থ আয় করে। এতে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সময় নষ্ট হচ্ছে, আয় বাড়ছে ফেসবুকের। তাই যেসব বন্ধু ফেসবুক গেমে অতিরিক্ত সময় দেন ও ক্রমাগত আপনাকে গেম খেলতে রিকুয়েস্ট দেন, তাদেরকে ব্লক করুন। যেকোন মূহুর্তে আপনি নিজেই না আবার আসক্ত হয়ে পড়েন!
(৮) নিজ মতাদর্শের রাজনৈতিক ‘ত্যানা প্যাঁচানো ব্যক্তি’
তবে ভিন্ন মতাদর্শের ব্যক্তির কাছ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাটাও কোন কাজের কথা নয়।
এরকমও হতে পারে তিনি হয়তো সত্য তথ্যই বলেছেন। কিন্তু আপনার বিশ্বাসের সাথে মিল আছে এরকম কোন ব্যক্তি এতোটাই অযৌক্তিকভাবে চরমপন্থি যে তিনি আপনার ও অন্যদের সবার জন্যই বিরক্তির কারণ। তাই এদেরকেও ব্লক করুন।
(৯) যারা ফেসবুকে অতিরিক্ত ছবি বা পোস্ট শেয়ার দেন ও অন্যদেরকে ট্যাগ দেন
এটা বেশ জরুরী আপনার ফেসবুক প্রোফাইলকে ‘আবর্জনা’মুক্ত রাখা। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রচুর আপডেট দেন, তার এমন সব পোস্টে নিজের বন্ধুদেরকে বা আপনাকেই ট্যাগ দেন, যেটার সাথে আপনার সম্পর্কই নেই।
এরপরেই শুরু হয় নোটিফিকেশনের উৎপাত। এর ফলে আপনার পক্ষে বেশিরভাগ সময়ই অন্য বন্ধুদের তথ্যগুলো দেখা হয়ে উঠে না। এধরণের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্লক করুন, যদি তারা আপনার অনুরোধেও তাদের কাজ থেকে বিরত না হয়।
(১০) যারা ঘন ঘন বিভিন্ন খাবারের ছবি আপলোড করেন
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফেসবুকে বন্ধুদের আপলোড করা খাবারের ছবি মানুষকে ক্ষুধার্ত করে তোলে। এরফলে তাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে উদ্দীপিত হয় যাতে তারা বেশি খাবার খেতে প্ররোচিত হন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তাই এই ভার্চুয়াল ‘ভোজনরসিক’দের ব্লক করুন অবিলম্বে।
হ্যাপি ফেসবুকিং .
সময় পেলে এই পেইজে একবার ঘুরে আসবেন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।