গান্ধীজি অহিংস ছিলেন না। অহিংস ছিল তাঁর মুখোশ। নেতাজি সুভাষকে তিনি কংগ্রেস থেকে সরিয়েছিলেন হিংসার অনলে জ্বলে। প্রমাণ ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন। সুভাষ নির্বাচনে দাঁড়ালেন গান্ধীজির অমতে।
কী এত বড় স্পর্ধা সুভাষের! গান্ধীজি অবাক। তাই তিনি তাঁর মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে সুভাষের বিরুদ্ধে দাঁড় করালেন। জয়ী হলেন সুভাষ। ফল হল মারাত্মক।
নির্বাচনে নেতাজীর জয় লাভের পর গান্ধীজির উক্তি: ‘The defeat of Pattabhi Sitaramyya is my defeat’ অর্থাৎ পট্টভি সীতারামাইয়ার পরাজয় মানে আমার পরাজয়।
’ এ কী সাংঘাতিক কথা! জনগণের ভোটে নির্বাচিত সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসুর জয়ে হঠাৎ মহাত্মার মত মানুষের এই ধরনের উক্তির কারণ কী? কারণ হিসেবে বলা হল গান্ধীজির নীতির কথা। গান্ধীজি অহিংসার পূজারী, অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী। সুভাষ ঠিক এর বিপরীত। তাই সুভাষের জয় মানেই গান্ধীজির অহিংস নীতির পরাজয়। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আদৌ তা নয়।
কারণ, গান্ধীজিই একসময় বলেছেন-আমাদের হাতে অস্ত্র নেই। থাকলে প্রতিটি ভারতবাসীকেই ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে পরামর্শ দিতাম। অস্ত্র নেই বলেই আমি অহিংসার পথ বেছে নিয়েছি। তা হলে তিনি অহিংস কোথায়? অক্ষমতার জন্যি অহিংসার বুলি। আসলে সুচতুর গান্ধীজিকে বিচলিত করেছিল সুভাষের জয়।
কেননা, গান্ধীজির মনোনীত অরার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে সমর্থন করেছিলেন গান্ধীবাদী সব নেতা। অর্থাৎ, কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতারা। বলতে গেলে সুভাষ একাই লড়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নিজের অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে। একা সুভাষ যখন ধরাশায়ী করলেন গান্ধীজিসহ কংগ্রেসি রথী-মহারথীদের তখনই রব উঠল-গেল গেল সব গেল। টের পেলেন ভারতের একমাত্র নেতা তাঁর আসনও টলমল।
ব্যস, কংগ্রেসের গ্রেট ডিক্টেটর অহিংসার মুখোশ-পরা গান্ধীজি হিংসার অনলে জ্বলে ভারতের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিককে সরিয়ে দিলেন কংগ্রেস থেকে। রাখলেন তাঁর স্তাবকদের-যারা ক্ষমতা ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না।
আজ দেশের খুবই দুর্দিন। স্বাধীনতার পর থেকে বহু লোকের মুখেই শুনে আসছি নেতাজি থাকলে আমাদের আজ এই হাল হত না। কথাটা মিথ্যা নয়।
দেশের দিকে তাকিয়ে কী দেখছি আমরা?
দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত-সর্বত্র ঘুষ আর ঘুষ। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। একটা ফাইল পর্যন্ত টেবিল থেকে সরে না। বেশিরভাগ মানুষ হয়েছে অমানবিক। স্বার্থ ছাড়া কেউ এক পাও নড়ে না।
কারো মধ্যে জাতীয়তা বোধ নেই।
তা ছাড়া হু হু করে বাড়ছে দ্রব্যমূল্যের দাম। দেনায় ডুবে আছে গোটা ভারতবর্ষ। বহু মানুষের বিশ্বাস নেতাজি থাকলে দেশের চেহারা বদলে যেত। আমিও তাই বিশ্বাস করি।
নির্ভীক নির্লোভ নেতাজি সবচেয়ে বেশি দেশের কথা ভাবতেন। বিবেকানন্দের মানসপুত্র নেতাজি সুভাষের কাছে ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী’। এটা কি গান্ধীজি জানতেন না?
জানতেন সবই। তবুও নেতাজিকে সরালেন কেন? নিজের স্বার্থে। গান্ধীজির পরিবারের লোকজনও এই কারণে তাঁকে সুনজরে দেখতেন না।
নিজের স্বার্থে সুভাষকে সরালেন তিনি, তাঁর একনম্বর নেতৃত্বের সুরক্ষায়। সেটা যে দেশের কতবড় ক্ষতি আমরা তা টের পাচ্ছি হাড়েহাড়ে।
বারবার স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষতি হয়েছে গান্ধীজির কারণে। এই জন্য আন্দোলনকারীরা হতাসায় ভেঙ্গে পড়েছেন। সত্যিকারের আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
যাদের মধ্যে ছিলোনা কোনো কিছু পাওয়ার লোভ। শুধু দেশের মুক্তির জন্য যারা নিজেদের উৎসর্গ করে গেলেন তাদের গুণ্ডা আখ্যা দিলেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী। ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, মাস্টারদা সূর্যসেন, ভগৎ সিং, রাজ গুরু, শুকদেব প্রমুখ দেশ প্রেমিক বিপ্লবীরা গান্ধীজির অভিধানে সন্ত্রাসবাদী গুন্ডা।
চমৎকার গান্ধীজি, চমৎকার! তোমার দেশ প্রেমের তুলনা নেই। যতই কংগ্রেস তোমার ঢেঁড়া পেটাক তাতে সিতু চাপা থাকে না।
কংগ্রেসতো প্রচার করেই চলছে-এই সব বিপ্লবী এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যা করতে পারেননি, তুমি তাই করেছ। অর্থাৎ বিপ্লবীদের বিপ্লব আর নেতাজি সুভাষচন্দ্রের আজাদ হিন্দ বাহিনীর কোন অবদান নেই ভারতের স্বাধীনতায়, স্বাধীনতা এনেছে তোমার অহিংসা মন্ত্র। এ রকম অসার তথ্যই কংগ্রেসের প্রচার। তাই তারা ইতিহাসের পাতা থেকে নেতাজিকে মুছে ফেলতে চায়। তোমার চক্রান্তেই নেতাজিকে দেশ ফিরে পেল না।
তাতে দেশের অপরিসীম ক্ষতি হয়নি?
দেশ ভাগের জন্য গান্ধীজি সবচেয়ে বেশি দায়ী। তাঁর হঠকারিতার জন্যই ভারত ভেঙ্গে দু-টুকরো হয়েছিল। দেশ বিভাগে তিনি আগেই তাঁর সমর্থন জানিয়েছিলেন। এর ঘাড়ে ওর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সাধু পুরুষ সাজবার চেষ্টা করেছেন। অথচ তিনিই দেশভাগের মূলে।
গান্ধীজির অনেক অপকর্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপকর্ম দেশ বিভাগ। তাঁরই জন্য ভারতবর্ষের মানচিত্রই পাল্টে গেল।
পূর্বের পোস্ট
গান্ধীজির ব্রহ্মচর্য পরীক্ষা না বিকৃত যৌনাচার?
Click This Link
(অলোককৃষ্ণ চক্রবর্তী এর ‘গান্ধীজির অপকর্ম’ বই থেকে গৃহিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।