যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না। সুরাঃ বনী ইসরাইল আয়াতঃ ১৫
১ম কিস্তি to ৬ষ্ঠ কিস্তি
সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে টেম্পলাররা তাদের কাজ সম্পাদনের জন্য ঘুষ প্রয়োগ শুরু করল।
ঘুষ প্রদান তাদের কাছে একটা উপযোগী পন্থা হিসেবে প্রকাশ পেল যা দিয়ে তারা প্রায় সকল ধরণের কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হল। যখন তারা কোথাও স্থায়ী হতে মনঃস্থির করত, তারা সহায়তার ছদ্মাবরনে সেখাঙ্কার শাসককে ঘুষ প্রদান করত। এর মাধ্যমে তারা স্থায়ী হওয়ার পাশাপাশি বেশ অনেক সুবিধাও আদায় করে নিত। রাজা রিচার্ড ১ এর মৃত্যুর পর টেম্পলাররা তার উত্তরাধিকারী রাজা জনকে অশ্ব ও অর্থ সম্পদ ঘুষ হিসেবে দিত। ইউরোপের দুর্বল অভিজাত সম্প্রদায়ের প্রভাবকে কমদামে এবং সস্তা উপহারে কিনতে পেরে টেম্পলাররা উৎসাহী হয়ে উঠে এবং এভাবেই তারা ইউরোপজুড়ে আরও সহজে চলাচল করতে লাগলো।
ঘুষ দেওয়ার মত নেওয়াতেও টেম্পলাররা অভ্যস্ত হয়ে পড়ল। এভাবেই তারা চার্চের দেওয়া সুযোগ সুবিধার অপব্যবহার করা শুরু করে।
যেসব অভিজাতেরা যুদ্ধে জড়াতে চাইতো না তারা টেম্পলারদেরকে বড় পরিমাণে চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করাতো। সমাজচ্যুতরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের হারানো স্থান ফিরে পেত। আইনের চোখে দাগী অপরাধীরা আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য টেম্পলারদের দলে যোগ দিত এবং দায়মুক্তি লাভ করত।
সুস্পষ্টভাবেই তারা চার্চের দেওয়া সুবিধার অপব্যবহার করছিল যা সময়ে সময়ে ভ্যাটিকানকে ক্রোধান্বিত করত। ১২০৭ সালে Innocent III ঘোষণা দেয় যে টেম্পলাররা মাত্রাছাড়া অহংকারী হয়ে উঠেছে এবং তাদের পদের অপব্যবহার করছে। পোপ অভিযোগ করে যে অর্থের বিনিময়ে যে কেউই এই সংঘের সদস্য হতে পারে এবং চার্চ অস্বীকারকারী, বিতাড়িত ও পাপের পাহাড়ে আরোহণকারীরা পবিত্রভূমিতে তাদের পা রাখছে। পোপ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানায়।
নির্মাণ, আবাসন এবং পরিবহণ ব্যবসায় হাতেখড়ির পর এসব ব্যবসা নিয়ে জুয়া শুরু করে ফলে এসব থেকে তাদের উপার্জন বাড়তে থাকে।
এছাড়াও তারা ব্যবসার পণ্য এবং খনিজ পদার্থ তাতে উচ্চমানের আকরিকের প্রলেপ দিয়ে জুয়ার বস্তু বানিয়ে ফেলে।
তাদের এই কর্মকাণ্ডের কারণে ইংল্যান্ডে জমিজমার দাম পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশী বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও তাদের বাণিজ্যিক সুবিধা থাকার কারণে তারা ইংল্যান্ডে উৎপাদিত উল সারা ইউরোপে বাজারজাত করত।
খ্রিস্টবাদের নামে সংগ্রামের কথা বলে তারা এমনকি গরিব লোকজন থেকেও টাকা আদায় করত। এসব তাদের অর্থের উৎস বাঁচিয়ে রাখার এক অপকৌশল মাত্র।
Council of Troyes এর পর তারা পরবর্তী তিনটি যুদ্ধে পরাজিত হয়। তারা তাদের অতিরঞ্জিত বীরত্বগাথার বর্ণনার মত অজেয় ছিল না। তারা মূলত নিরীহ ও নিরুপায় মানুষ হত্যা করত। কিন্তু যখন যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া ছাড়া তাদের সামনে কোন পথ খোলা থাকতো না তখন তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরাজিত হত কারণ তারা তাদের অসুদুপায়ে লব্ধ অর্থ অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে ব্যয় না করে জমিয়ে রাখতো।
এইসব গুপ্ত কর্মকাণ্ড ছাড়াও, টেম্পলাররা দাস ব্যবসা এবং মানব পাচারের মত কাজ সংগঠিত করত।
যখন দাস ব্যবসায়ে টেম্পলারদের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশিত হয় তখন পোপ তা নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হন। যদিও সেসময়ে দাস ব্যবসা অবৈধ ছিল না তথাপি খৃষ্টানদের উপর খৃস্টান দাস নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তখন টেম্পলাররা ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে নিরীহ মুসলিমদের অপহরণ করত এবং যুবকদেরকে জোরপূর্বক দাসত্ব করতে বাধ্য করা হত। তারা হয় ঐ অপহৃত মানুষগুলকে ইউরোপে দাস হিসেবে বেচে দিত নয়ত তাদের নিষ্ঠুরতার শিকার হত। রোমান সম্রাট Frederic II যিনি মুসলমানদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন, পোপের সহযোগিতায় টেম্পলারদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন।
তিনি অনেক মুসলিম দাসকে মুক্ত করেন এবং এর ফলে তিনি টেম্পলারদের ঘৃণার পাত্রে পরিনিত হন।
শুধু মুসলিম দাস ব্যবসাই টেম্পলারদের জন্য যথেষ্ট ছিল না এছাড়াও তারা গ্রীক, বুলগেরিয়ান, রাশিয়ান এবং এমনকি রোমানিয়ান অর্থোডক্স খৃস্টানদের কেও (যাদেরকে তারা মুসলিম হিসেবে চালিয়ে দিত) দাস হিসেবে বেচাকেনা করত। পোপ Gregory IX টেম্পলারদের এইসব অনৈতিক কাজের ব্যাপারে সিরিয়ার বিশপ এবং টেম্পলারদের গ্র্যান্ডমাস্টারের কাছে অভিযোগ করেন। তারপরও তারা তাদের এই অন্যায় কাজ চালিয়ে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি আফ্রিকার অধিবাসীরা অর্থ উপার্জনের এক নতুন ক্ষেত্র হিসেবে সামনে আসে।
এইসব অনৈতিক কাজ ছাড়াও তারা নোংরা রাজনৈতিক খেলা শুরু করে।
অসুদুপায় অবলম্বন করে তারা ধনী সংগঠনে পরিনিত হওয়ার পাশাপাশি লোকজনের কাছে এক মূর্তিমান আপদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাদের নিষ্ঠুর কলাকৌশলগুলো ধর্মীয় আচ্ছাদন থেকে বেরিয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাড়ায়। তাদের অদ্ভুতুড়ে বিশ্বাস এবং জীবন পদ্ধতি তাদের খ্যাতিকে ধূসর করার সাথে সাথে খৃস্টানবাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাড়ায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।