১. আদি মুরগী লীগ:
আদি মুরগী লীগ কক তথা পাকিস্তানী ফার্মের মুরগী নিষিদ্ধ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছে। বর্তমানে পাকিস্তানী কক মুরগীদের অগ্রাসনে খাঁটি দেশী মুরগী বিলুপ্ত হইতে বসিয়াছে। কক মুরগী আর খাঁটি দেশী মুরগীর মধ্যে সাদৃশ্য থাকায় পাকিস্তানী মুরগীরা সহজেই দেশী মুরগীদের সাথে মিশিয়া নিজেদের আত্নগোপন করিয়া রাখে। ইহাছাড়া দেশী মুরগী ভাবিয়া পাকিস্তানীমুরগীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করিয়া সাধারন মুরগীরা প্রতারিত হইতেছে।
আদি মুরগী লীগ গভীর উৎকন্ঠার সাথে সাধারন মুরগীদের জানাইতেছে যে, পাকিস্তানী মুরগীর এই অগ্রাসন দেশী জাতের মুরগী বিলুপ্ত করিবার চক্রান্ত।
সাধারন মুরগী সমাজ বিরোধী একটি চিহ্নিত গোস্ঠী ইহাদের মদদ দান করিতেছে।
আদি মুরগী লীগ যে কোন মূল্যে দেশী মুরগী বিলুপ্ত করিবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হইতে দিবেনা। আদি মুরগী লীগ দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে যে, সকল দেশী মুরগী তাহাদের সাথে আছে। আদি মুরগী লীগ দেশ থেকে পাকিস্তানী মুরগী উচ্ছেদ না করিয়া ঘরে ফিরবেনা।
২. জাতীয়তাবাদী মুরগী দল:
জাতীয়তাবাদী মুরগী দল অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করিতেছে যে, আদি মুরগী লীগ মুরগীদের নেতৃত্বদানে তাহাদের ব্যর্থতাকে আড়াল করিয়া সাধারন মুরগীদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরাইবার লক্ষ্যে কক তথা পাকিস্তানী মুরগীদের নিষিদ্ধ করিবার নতুন ইস্যু সৃষ্টি করিবার পায়তারা করিতেছে।
আজ সাধারন মুরগীদের খাদ্যের মূল্য উর্দ্ধমূখী, শিশু মুরগীরা পুষ্টিভাবে মারা যাইতেছে, মুরগীদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নাই, মুরগীধিকার চরমভাবে লংঘিত হইতেছে। এই সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ রাখিয়া মুরগী লীগ কক মুরগী নিষিদ্ধ করিবার মাধ্যমে মুরগী সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করিবার পায়তারা করিতেছে। অথচ এই মুরগী লীগই ফার্মের মুরগীর নামে পার্শ্ববর্তী দেশ হইতে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগী আমদানী হইয়াছিল তখন নীরব ভূমিকা পালন করেছিল।
জাতীয়তাবাদী মুরগী দল সমগ্র মুরগী সমাজকে সংগে লইয়া আদি মুরগী লীগের এই অশুভ চক্রান্ত প্রতিহত করিবে।
৩. মুরগী শিবির:
কক মুরগী নিষিদ্ধ করা লইয়া আদি মুরগী লীগ এবং জাতীয়তাবাদী মুরগী দল জল ঘোলা করিবার চেস্টা করিতেছে।
ইতিপূর্বে আমরা আদি মুরগী লীগের সাথে ঐক্যমতের আন্দোলন করিয়া মুরগী সমাজকে নেতৃত্ব দান করিয়াছিলাম। আবার জাতীয়তাবাদী মুরগী দলের সাথে জোট করিয়াও নেতৃত্বদানের দীর্ঘ ইতিহাস আমাদের রহিয়াছে।
নির্বাচনকে সামনে রাখিয়া কক মুরগী নিষিদ্ধ ঘোষনা করিবার ইস্যুটি আমাদেরকে চাপের মুখে রাখিবার কৌশল মাত্র। মুরগী শিবির অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জানাইতে চায় যে, দুই চারটা কক মুরগীকে আটক করিয়া দেশী মুরগী হইতে কক মুরগীদের বিচ্ছিন্ন করা যাইবেনা। যাহারা এই ধরনের কাজে লিপ্ত হইবেন তাহাদের উচিত জবাব দেওয়া হইবে।
৪. শ্রেনীহীন মুরগী পার্টি:
শ্রেনীহীন মুরগী পার্টি অত্যন্ত কষ্ট এবং বিস্ময়ের সহিত লক্ষ্য করিতেছে যে, সকল শোষিত ও বঞ্চিত মুরগীদের স্বার্থকে সমস্টিক দৃস্টিতে না দেখিয়া কক মুরগী নিষিদ্ব করিবার বিষয়ে মুরগীদের নেতৃত্বদানকারী তিনটি প্রধান সংগঠন নিজ নিজ সমর্থক মুরগীদের স্বার্থ আদায়ে ব্যস্ত রহিয়াছে। কারন এই তিনটি মুরগী সংগঠনই পূঁজিবাদী শক্তির মদদপুষ্ট এবং সাম্রাজ্যবাদের দোসর। আজ মৌলিক মুরগীধিকারসমূহ মুরগীরা ভোগ করিতে পরিতেছেনা। সেই দিন বেশী দূরে নয়, যখন শ্রেনীহীন মুরগী পার্টির নেতৃত্বে অবহেলিত ও সর্বহারা সাধারন মুরগীরা বিপ্লবের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায় করিবে এবং শোষনহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করিবে।
শ্রেনীহীন মুরগী পার্টি কাজে বিশ্বাসী বলিয়া সাধারন মুরগীদের নিজ নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন করিতে বিভিন্ন পয়েন্টে মুরগী সংগীত পরিবেশন এবং মুরগী নাটক প্রর্দশন শুরু করিয়াছে।
৫. সুশীল মুরগী ঐক্য পরিষদ:
কক মুরগী নিষিদ্ধ করিবার সিদ্ধান্ত এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঘটানাসমূহ সুশীল মুরগী ঐক্য পরিষদ গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করিতেছে। সুশীল মুরগী ঐক্য ফোরাম অত্যন্ত উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করিতেছে যে, মুরগী সমাজের আর্থ – সামাজিক সমস্যাগুলিকে দলীয়করন এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ চলিতেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকিলে তাহা মুরগী সমাজের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করিবে।
কক মুরগী নিষিদ্ধ করিবার সিদ্ধান্তটির সংগে মুরগী সমাজের কয়েক দশকের সংস্কৃতি, বঞ্চনা, শোষণ, অবক্ষয় প্রভৃতি বিষয় জড়িয়ে আছে। তাই বিষয়টিকে স্পর্শকাতর বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করার কোন বিকল্প নাই।
মুরগী সমাজের নেতৃত্বদানের জন্য নির্বাচন সন্নিকট। সুশীল মুরগী ঐক্য পরিষদ এই নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বাভাষ নিশ্চিত হইবার পরেই কক মুরগী নিষিদ্ধ করিবার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করিবে এবং সকল মুরগীকে নিজেদের মতের সাথে সম্পৃক্ত করিয়া ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারন ও বাস্তবায়ন করিবে।
সাধারন মুরগী সমাজের প্রেস নোট:
কক মুরগী নিষিদ্ব করিবার ঘটনায় আমাদের কিছু যায় আসেনা। আমরা যতদিন বাঁচি, ততদিন শান্তিমত বাঁচতে চাই। অথচ যারা আমাদের নেতৃত্ব দেন তাদের জীবনমান আর আমাদের জীবন মানের ফারাকটাই প্রমান করে তারা কাদের স্বার্থ দেখেন।
কক মুরগী নিষিদ্ব করা লইয়া তাহারা যখন নিজ নিজ স্বার্থ আদায়ে ব্যস্ত তখন আমাদের ঠ্যাং প্লাস্টিক রশি দিয়া বাঁধিয়া ঝুলাইয়া ঝুলাইয়া খাইবার জন্য লইয়া যাওয়া হইতেছে। আমরা সাধারন মুরগীরা মোরগ পোলাও’য়ে মোরগের প্রক্সি দিতেছি, কাবাব হইতেছি, রোস্ট হইতেছি, গ্রীল হইতেছি, মিডিয়ায় চিকেন রসগোল্লার মত অসহনীয় সব রেসিপির খপ্পরে পড়িতেছি, আরও কত কিছু যে হইতেছি। তাহাতে আমাদের মহান নেতাদের কি আসে যায়!
নেতারা ভালো থাকিলে, নেতারা সুখে ও নিরাপদে থাকিলে আমরা ভালো আছি, সুখে ও নিরাপদে আছি বলিয়া মানিয়া লইতে হইবে। ইহা আমাদের প্রতীকি ভালো থাকা।
ইহা একটি রম্য পোস্ট।
মুরগাপরাধীর মামলায় জড়ানোর কোনও ইচ্ছে নেই। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।