-কিরে ব্যাটা, কতক্ষন ধইরা তোর ফোন বাজতাছে। ধরস না ক্যান?
=কি বাজতাছে?!? এইডা তো বাজার জিনিস না, ধইরা ঝাকানোর জিনিস। বাজবো ক্যান?
-ধুর হালা, কি কস উলটা পাল্টা। তোর ফোন বাজতাছে, মোবাইল ফোন।
=ও, আইচ্ছা।
ফোন শব্দটা একটু ভালোমতো উচ্চারন করবি তো। আমি শুনলাম তুই মানবদেহের কোন অঙ্গ বাজা’র কথা কইতাছস।
সুজন এমনিতে কানে কম শোনে না। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু বিশেষ বিশেষ শব্দ কোন এক অদ্ভুত কারনে সুজন বিকৃতভাবে শোনে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রাশেদ ফোন করছিলো।
৩৯ টা মিসড কল। এই ব্যাপারটাও অদ্ভুত। কেউ কল রিসিভ না করলে রাশেদ এক দেড়শ বার অনায়াসে তারে অনবরত কল দিয়া যাইতে থাকে। সুজনরে মাত্র ৩৯ বার ফোন দিয়া পোতাইয়া গেলো ক্যান বিষয়টা মাথায় ঢুকতেছে না সুজনের। সুজনের ফোনে কখনো ব্যালেন্স থাকে না।
যা থাকে তা হইলো ধার করা টাকা, ওই দিয়েই কোন রকম কাজ সারে। মোবাইল কোম্পানিগুলা এই একটা ভাল সুবিধা দিছে। যে কোন সময় যে কোন জায়গায় ঝাঁকি ছাড়াই ১০ টাকা ধার নেয়া যায়। এই ধার করা টাকাতেও আরও সুবিধা আছে। কোন সময় কোন বন্ধু ফোনে ব্যালেন্স না থাকার অজুহাত দেখায়ে সুজনের কাছে মোবাইল চায় কল দেয়ার জন্যে তখন সুজন একটা ঈদের চাঁদের মত হাসি দিয়ে বলে “দোস্ত, আমার ফোনেও ব্যালেন্স নাই, এই দেখ” বলে ব্যালেন্স বিহীন মুল ব্যালেন্সটা দেখিয়ে দেয়।
আর ঝাঁকি ছাড়া টাকা ধার নেয়ার সময় নিজেরে অনন্ত জলিলের চাইতেও ক্ষমতাবান মনে হয় সুজনের। ঝাঁকির কথা মাথায় আসতেই অনন্তের বাথরুমে যাওয়ার কথা মনে পড়ল। আপাতত বাথরুম ঘটিত ব্যাপার স্যাপার মাথা থেকে বাদ দিয়ে রাশেদকে কল দিয়ে কল ব্যাক করতে বলল।
=হুম রাশেদ, ক।
-কিরে ব্যাটা এতক্ষন ধইরা কল দিতাছি ধরস না ক্যান।
=আরে নতুন একটা রিংটোন সেট করছি, ওই টাই শুনতাছিলাম। আমি তো ভাবছিলাম তুই আরও সত্তুর আশিবার কল দিবি, মনের খায়েস মিটাইয়া রিংটোন শুইনা তারপর রিসিভ করুম।
-ধুর তোর রিংটোন, আসল কথায় আয়, খবর তো পাইছস, কুদ্দুছ ভাই নমিনেশন পাইছে, ভাই এর নির্বাচনটা কইরা দিতে হইবো।
=কোন কুদ্দুছ? ট্যারা কুদ্দুছ নাকি। ওরে না গত বছর তুলির আম্মার দিকে ট্যারানজর দেয়ার জন্যে জুতা পেটা করলো।
ওই বা নমিনেশন পাইলো ক্যামনে আর তুইই বা ওর নির্বাচন করবি ক্যান।
-আরে ব্যাটা ট্যারা কুদ্দুছ না। আমাগো আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুছ সোবাহান ভাই।
=ও, আইচ্ছা, তা গম চোর কুদ্দুছ কইলেই তো পারতি। এক নামেই চিনা ফালাইতাম।
আজাইরা এতগুলা কথা কওয়া লাগতো না।
-ওই ব্যাটা, হুস কইরা কথা কইস। কারে গম চোর কস। উনি তিন তিনবার হজ্জ কইরা আইছে, সামনের বার আবার যাইবো।
=আইচ্ছা, তাইলে তো নাম লাগাইতে হয় আলহাজ্ব গম চোর আব্দুল কুদ্দুছ সোবাহান।
-আবার গম চোর কস। তুই নিজে তো ধর্ম কর্ম কিছুই করস না, তারওপর আবার একজন বুজুর্গ মানুষরে গম চোর কইতাছস।
=আইচ্ছা, তাইলে এখন থিকা কি গম চোররে গম চোর কওয়া বাদ দিয়া কনডম চোর কমু নাকি।
-আবার আজেবাজে কথা কস। তুই জানোস না হজ্জ কইরা আইলে সব পাপ কাটা যায়।
উনি এখন নিষ্পাপ। আর তাছাড়া উনি এলাকার মসজিদ মাদ্রাসায় রেগুলার টাকা পয়সা দান করেন।
=(মাদ্রাসা শুনতেই আধুনিক ল্যাপটপ ককটেল ফাটার কথা মনে পড়ে সুজনের) হ, এক এক দাইনে এক দেড় কোটি টাকা গায়েব কইরা দেড় দুই লাখ টাকা দান খয়রাত কইরা টাকাটা হালাল কইরা নেয়াই ভালো। উনার মত বুদ্ধিমান বুজুর্গ মানুষ দিন দুনিয়ায় কমই আছে মনে হয়।
-আউল ফাউল কথা থামা, এই সময় এই সব কথা না কওয়াই ভালো।
আর নেতারা ওইসব একটু আকটু কইরাই থাকে। ব্যাপার না।
=আইচ্ছা, খাটি সত্য কথা কইছস। হেয় একটু আকটু কইরাই গত দুই টার্মে টিনশেড হাফ বিল্ডিং বাড়ি থিকা তিনডা চাইরতলা বাড়ি বানাইয়া ফালাইলো, জায়গাজমি কিনা প্রায় একটা মিনি বাংলাদেশ বানাইয়া ফালাইলো। উনার এই একটু আকটুর তারিফ করতে হয়।
-ওইগুলা তুই বুঝবি না। যাই করুক, কুদ্দুছ ভাই মানুষটা অনেক ভালো। এলাকার পোলাপাইনের খোঁজ খবর রাখে। আর গত দুই টার্মে এলাকার ভালোই তো উন্নয়ন করছে।
=হ, এলাকার উন্নয়ন নাকি হের চ্যালা চামুন্ডাগো উন্নয়ন করছে তা তো নিজেই দেখছি।
আর গম কুদ্দুছ না রাজাকার। তুই না ব্লগে, ফেসবুকে রাজাকারগো বিরুদ্ধে লেখালখি কইরা তোর কম্পিউটারের কিবোর্ড তিনবার নষ্ট করছস। সেই তুইই করবি রাজাকার গম কুদ্দুছের নির্বাচন? আবার আমারেও টানতে চাইতাছস?
-উফ, তোর মাথায় তো দেখতাছি ব্যাটা দুই নাম্বার দুম্বার গু দিয়া ভর্তি, আরব দেখের খাঁটি দুম্বার গু থাকলেও বুঝতি। ভার্চুয়াল লাইফ আর রিয়েল লাইফ কি এক নাকি। রিয়েল লাইফে আমি কি করতাছি না করতাছি এইডা কি কেউ দেখতে আইবো।
৪২/৪৩ বছর আগের প্যাচাল পাইরা লাভ আছে? ওইটা ব্লগ ফেসবুকেই মানায়, রিয়েল লাইফে না। আর উনি তো রাজাকার ছিলো ৪২/৪৩ বছর আগে। এখন তো আর রাজাকার না। এখন উনি হাজি মানুষ। হজ্জ কইরা সব পাপ মোচন কইরা আইছে।
মুল কথা হইলো ব্লগ লেখলে কি আর টেকা আইবো। টেকা আইব কুদ্দুছ ভাই এর নির্বাচন করলে। এখন নির্বাচনের সময়, পকেট ভারি করার সময়। টেকাটুকা কামাইয়া দরকার হইলে আবার লেখা লখি শুরু করুমনে- এক নিঃশ্বাসে বলে যায় রাশেদ।
=নির্বাচন যখন করবিই তাইলে পারভেজ ভাই এরটা কর।
নীতি আদর্শটা তো অন্তত ঠিক থাকবো।
-আরে ধুর, নীতি আদর্শ দিয়া কিছু হয় না, সব কিছু হয় টেকা দিয়া। পারভেজ ভাই এত বছর আদর্শ নীতি ধইরা রাইখা কি করতে পারছে? পরপর দুইবার ফেল। লাভটা কি হইলো নীতিবান হইয়া। উটের আন্ডা।
তার চাইতে এক কাম কর, আমার লগে কুদ্দুছ ভাই এর নির্বচনটা কর। সন্ধ্যার পর রুহুল মামার দোকানে আয়। কুদ্দুছ ভাই এর বাসায় বইয়া উনার সাথে কথা কমু। ভাইরে ফোন কইরা জানাইয়া রাখছি।
=আইচ্ছা, দেখি।
মাগরিবের আজান দিচ্ছে। সুজন অসংখ্যবার পড়া প্রিয় “পাক সার জমিন সাদ বাদ” বইটা রেখে ফোনটা সুইচড অফ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
পারভেজ ভাই এর সাথে একবার দেখা করা দরকার। পারভেজ ভাই, আদর্শবান বাবার আদর্শবান ছেলে। বাবার আদর্শটা এখনো ধরে রেখেছেন তিনি।
উনার বাবাও দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। কখনো আদর্শচ্যুত হননি। উনার বাবা যখন মারা যান তখন উনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছিলো মাত্র উনিশ টাকা।
পারভেজ ভাই এত ভালো একটা মানুষ অথচ নির্বাচনে পাশ করতে পারে না। কেন পারে না সেই কারন অবশ্য সুজন জানে।
উনি নির্বাচনের আগের রাতে টাকার বস্তা নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যান না। ধর্মটারে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করেন না। টাকা দিয়ে চেয়ার পাওয়া যায়, কিন্তু মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। উনি সেটা অর্জন করেই চেয়ারে বসতে চান। যেভাবেই হোক এবার পারভেজ ভাইকে চেয়ারে বসাতেই হবে, যেভাবেই হোক।
---------------------
সলিটারি সাইলেন্স
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।