রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে ‘আমার জীবন, আমার রচনা’ শীর্ষক পাঠকের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ কথা জানান দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখক সমরেশ।
তিনি বলেন, “মানুষের ভালোবাসায় আমার বুক ভরে যায়। দুই বাংলাসহ বিশ্বের যেখানেই গেছি, সবশ্রেণির মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষের ভালোবাসায় আমি এগিয়ে চলছি। ”
নিজের সম্পর্কে সমরেশের মূল্যায়ন- “আমি কেবল লেখকের ভূমিকায় অভিনয় করছি।
বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, সমরেশ বসুদের তুলনায় আমি কোনো লেখকই নই। তারা অনেক বড়মাপের, লেখকের ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে মনে হচ্ছে আমার অভিনয় সার্থক হয়েছে। ”
চট্টগ্রামের বই বিপণীকেন্দ্র বাতিঘর আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, সাতকাহনের মতো জনপ্রিয় উপন্যাসের লেখক সমরেশ মজুমদার নিজের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি জবাব দিয়েছেন অগণিত পাঠকের প্রশ্নেরও। পাশাপাশি লেখালেখি নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন উঠতি লেখকদেরও।
অনুষ্ঠানস্থলে সমরেশ মজুমদারকে দেখতে এবং তার কথা শুনতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।
চট্টগ্রামের ভক্তদের ভালোবাসায় তিনিও ছিলেন আবেগাপ্লুত।
প্রথমবারের মতো কোনো অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম আসা সমরেশ বলেন, “এপার বাংলার মানুষের আবেগ বেশি। তারা সহজেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ”
নিজের লেখালেখির শুরুর কথাও বলেন সমরেশ মজুমদার- “বন্ধুদের প্ররোচনায় লেখালেখি শুরু করেছি। প্রথম একটি গল্প লিখে ১৫ টাকা পেয়েছিলাম।
পরে তা দিয়ে বন্ধুরা মিলে কফি খাই। এরপর ধীরে ধীরে লেখালেখিতে জড়িয়ে পড়ি। ”
রেসকোর্সের ঘোড়দৌড় নিয়ে লেখা ‘দৌড়’ দিয়েই উপন্যাস লেখালেখির হাতেখড়ি বলে জানান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে বাকিগুলো।
শুরুর দিকে কবিতা লেখার ইচ্ছে প্রকট ছিল বলেও জানান এই লেখক, তবে তা হয়নি।
“সুনীলদার (কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) প্রতি সুন্দরী নারীদের ঝোঁক বেশি ছিল। এজন্যই তার প্রতি ঈর্ষা হত। ”
লেখালেখি নিয়ে এক পাঠকের প্রশ্নের জবাবে সমরেশ মজুমদার বলেন, “প্রতিদিনই অবসরে যাবার কথা ভাবি। সকালে উঠে চিন্তা করি আর লিখবো না। সারাদিন আড্ডা মারা, গল্পের বই পাড়ার ইচ্ছে হয়।
কিন্তু অমুক এসে বলে দাদা এটা দিতে হবে, ওটা দিতে হবে। আর হয়ে ওঠে না। ”
মানুষের একাকিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করেন এক পাঠক। উত্তরে সমরেশ মজুমদার নিজের লেখা ‘কেউ কেউ একা’ ও ‘অনেকেই একা’ উপন্যাসের কথা উল্লেখ করে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “দিনের ২৪ ঘণ্টার যে কোনো সময়ে কি আমরাও একা থাকি না?’
“যত বয়স বাড়ে, মানুষ ততই একা হচ্ছে। অনেক সময় একা হতে মানুষের ভীষণ ভাল লাগে।
”
গরমের মধ্যদুপুরে একা বাসায় বসে বই পড়তে সমরেশ মজুমদারের ভীষণ ভাল লাগে বলে জানান।
অনেকের কাছেই নারীবাদী উপন্যাস সাতকাহনের স্রষ্টার কাছে ভক্তদের প্রশ্ন ছিল বাংলার নারীদের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে।
উত্তরে সমরেশ মজুমদার বলেন, “গত ৬৭ বছরে বাঙালির জীবনে কী হয়েছে, জানি না। তবে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছে।
“মেয়েদের উন্নয়ন ঘটেছে।
তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। একটি ছেলে যেভাবে বাবা-মার দায়িত্ব নেয়, একটি মেয়েও এখন সেভাবে দায়িত্ব নিচ্ছে। ”
জীবনের একটা সময় চা বাগানে কাটানো সমরেশ মজুমদার নিজের শৈশব-কৈশোরের কথা এবং কষ্টের কথাও বলেন।
তার ভাষায়, “আমার পিতা-পিতামহ একপ্রকার দারিদ্র্যসীমায় বাস করতেন। এরপরও তারা আমার পড়ালেখায় বাধা দেননি।
তাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে হত। ”
তার লেখা উপন্যাসগুলোতে দুঃখভাব কেন থাকে- পাঠকদের এ প্রশ্নের জবাবে সমরেশ মজুমদার বলেন, “মানুষের দুঃখের পরিবর্তন হয়নি, তাই দুঃখ থাকবে। ”
“বামফ্রন্টের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এসেছে। এরপর আবার সেই অত্যাচার। মানুষের দুঃখ কমেনি।
তাই মানুষের জীবন থেকে দুঃখ যাবে না,” রাজনৈতিক পরির্বতনও ছুঁয়ে যায় লেখকের কথায়।
সবশেষে সমরেশ মজুমদার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আন্দোলনের সূচনাকারী মাস্টারদা সূর্যসেনসহ বিপ্লবীদের স্মরণ করে বলেন, “আমি জীবনে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। তবে আজ চট্টগ্রামে যে ভালবাসা পেয়েছি তা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। ”
কবি সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে চট্টগ্রামে সমরেশ মজুমদারকে স্বাগত জানান কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাতিঘরের স্বত্ত্বাধিকারী দীপংকর দাশ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।