গত কয়েকবছর ধরে, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে, অনেক মানুষের জীবনের একটি বড় সময় গেছে দেশের বাকি মানুষদের কিছু সহজ সত্য জানাতে। কি সহজ সত্য? যেমন একাত্তরে যে গণহত্যা হয়েছে, যৌন নির্যাতনকে যে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, ধর্ম নিরপেক্ষতা যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি মৌলিক অংশ ছিল, যুদ্ধাপরাধের বিচার যে নতুন করে নয় বরং স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতকে যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুর্নবাসনের সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল - এসব। ঘরের খেয়ে বনের ডাইনোসর তাড়ানো মানুষগুলোর কষ্ট অনেক কমে যেত যদি দেশের মানুষ স্কুল থেকে পাশ করার সময় এই ব্যাপার গুলো পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার সময় জেনে বের হত।
চতুর্থ শ্রেণীতে নিশ্চয় অল্প কথায় বাংলা বইয়ে একাত্তরের গণহত্যার ব্যাপারটি জানিয়ে দেয়া যায় তাই না? তার সাথে যদি কোন শহীদ বুদ্ধিজীবির উপর ইংরেজীতে একটি ছোট্ট প্রবন্ধ থাকে ক্ষতি কি? পঞ্চম শ্রেণীতে বাহাত্তরের সংবিধানের চারটি মূলনীতি - গণতন্ত্র, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র এসবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে কিছু সহজ প্রশ্ন করা যেতে পারে। যেমন, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ যদি ঠিক হয় তাহলে আমাদের পাহাড়ী অবাঙ্গালী জাতিগোষ্ঠীর প্রতি ন্যায়বিচার হয় কিনা? হলে বা না হলে তার কারণ কি? ছোট মাথা ছোট বুদ্ধিতে যা লিখবে লিখুক! কিন্তু ব্যাপারটি হৃদয়ে তো গেঁথে যাবে।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে না হয় গণহত্যার ব্যাপারটি সংখ্যার আঙ্গিকে না দেখিয়ে এর নৃতাত্ত্বিক ও অত্যাচারের বৈচিত্র্যের দিক থেকে পড়ানো হবে। তার সাথে না হয় ইংরেজীতে আরো দু'জন শহীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল আর ইতিহাসে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র বিস্তারিত পড়ল আর ১৯৭২ সালের দালাল আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইতিহাস নিয়ে দু'পৃষ্ঠা পড়ল। সপ্তম শ্রেণীতে আমরা প্রথম বারের মত বীরাঙ্গনার ইতিহাস খুব সহজ আর অনেক রেখেঢেকে বলব যাতে অত্যাচারের বর্ণনা কারো মনের উপর অতিরিক্ত চাপ না ফেলে। নীলিমা ইব্রাহিমের আমি বীরাঙ্গনা বলছি থেকে বয়সের উপযুক্ত করে সম্পাদনা করে একটি প্রবন্ধ রাখা যায়। ইংরেজীতে আমরা না হয় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কথা রাখলাম।
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যুদ্ধাপরাধীর পুনর্বাসন নিয়ে আলাদা একটি অধ্যায় যদি আমরা রাখতে পারি তাহলে কিশোর কিশোরীদের কাছে পরিষ্কার হবে ১৯৭১ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের যদ্দুর আগানোর কথা ছিল সেটি এগুতে পারিনি কেন। বাংলা বইয়ে একটি প্রবন্ধ রাখা যেতে পারে কি করে বিদেশী দেশগুলি এই ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিল। যারা গণিত পড়বে তাদের একটি অধ্যায়ে কি করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের পরিসংখ্যানকে যাচাই করতে হয় তার একটি সহজ ধারণা দেয়া যেতে পারে। ভুগোলে উল্লেখ করা যেতে পারে আমাদের দেশের টপোগ্রাফী কি ভাবে দুই পক্ষের রণকৌশল নির্ধারণ করে দিয়েছিল। নবম শ্রেণীতে ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং এটি বানচালে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারগুলো বিভিন্ন বিষয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে যোগ করা যেতে পারে।
দশম শ্রেণীতে সৃজনশীল প্রশ্নগুলো এমনভাবে করতে হবে যাতে করে যখন ছাত্রছাত্রীরা পাশ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকবে তখন তারা যেন আগামীতে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হতে যাচ্ছে সে সময় যে অপপ্রচার চলবে তার মোক্ষম জবাব দেয়ার জন্য একদম শুকনো বারুদের মত প্রস্তুত হয়ে থাকে।
আমরা সবাই মিলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এদের কাছে এখন থেকে ধর্না দিলে ২০১৬ সাল থেকেই হয়তো পাঠবইগুলোতে এসব জরুরী তথ্য চলে আসতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।