যাপন করছি জীবন যেহেতু যাপন ছাড়া পরিত্রান নেই। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত দিয়ে রাজাকারদের ঘৃণা করে যাব মৃত্যু পর্যন্ত । । বাংলাদেশের পাঁচ জন বাচ্চাকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে পাঁচ রকম উত্তর পাওয়া যাবে । কারন প্রত্যেক বছর তার পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বদলে যায় ।
বিশ্বের আর কোন দেশের মানুষ তাদের ইতিহাস নিয়ে এতো কনফিউজড কিনা আমি জানিনা । তবে ভুলে ভরা সাম্প্রদায়িকতায় পূর্ণ আত্নদাম্ভিক ইতিহাস শিখিয়ে শিশুদের কচি মনকে কলুষিত করার রেকর্ড আছে আর একটি জাতির, পাকিস্তান । পাকিস্তানের National commission for Justice and peace নামক একটি সংস্থা দেশটির সবগুলো প্রদেশে পঠিত ১ম ধেকে দ্বাদশ শ্রেণীর সবগুলো বই গবেষনা করে একটি সেমিনার করে যার শিরোনাম ছিল এরকম ‘Taalim Ya Nafrat ki Aabiari’ । এই রকম শিরোনাম করার কারন হল গবেষনায় দেখা যায় ২২ টি বইয়ের প্রায় ৫৫ টি অধ্যায় বাংলাদেশী ,হিন্দু , খ্রিষ্টান ও ভারত বিদ্বেষে ভরা । সেই সাথে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার ও বিষোদগার করা হয়েছে নির্লজ্জভাবে ।
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানের ৫ম শ্রেণীর উর্দু বইয়ে বলা হয়েছে
“আমাদের্ উচিত ভারতীয় হিন্দুদের ঘৃণা করা কারন তারাই পাকিস্তানকে বিভক্ত করেছিল”।
৮ম শ্রেণীর পাকিস্তান স্টাডিজ এর একটি অধ্যায়ের কয়েকটি লাইন এরকম
“ভারত পূর্ব পাকিস্তানের কতিপয় নেতার সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তান আক্রমন করে ও পাকিস্তান থেকে আলাদা করে”।
৯ম ১০ম শ্রেণীতে পাকিস্তানী কিশোররা ৭১ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে । কি জানতে পারে? দেখুন
“পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার কারন :
১. ইয়াহিয়া সরকারের অদক্ষতা
২. পূর্বপাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্যে হিন্দুদের আধিপত্য
৩. ভাষা সমস্যা
৪. ৭০ এর নির্বাচন”।
বইটিতে আরও বলা হয়েছে
“পাকিস্তানের শিক্ষাখাত এর নিয়ন্ত্রক ছিল কিছু হিন্দু শিক্ষক ।
তারা মানুষকে উস্কে দিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে । এ কারনে পশ্চিম পাকিস্তানীদের ঘৃণা করত পূর্ব পাকিস্তানীরা”।
আবার বলা হয়েছে,
“রাশিয়া ভারতকে সাহায্য করেছিল কারন পাকিস্তানে ছিল আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি”।
পাকিস্তানের পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়নি বাঙ্গালীর ভাষা আন্দোলন , ৬ দফা আন্দোলন , গনঅভ্যুত্থান , শিক্ষা আন্দোলন । ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে বলা হয়েছে নিছক পাক ভারত যুদ্ধ ।
যেখানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী দেশপ্রেমের প্রতীক, ভারত আক্রমনকারী আর বাঙ্গালীরা বিশ্বাসঘাতক , ভারতীয় দালাল । এভাবে পাকিস্তানীদের মনে শৈশব থেকে বাঙ্গালীদের বিশ্বাষঘাতক জাতি হিসাবে পরিচিত করে রোপন করা হয় সাম্প্রদায়িকতার বীজ।
এবার আমার পয়েন্টে আসি । জাপানের পাঠ্যবইয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চীন আক্রমন ও চীনাদের উপর জাপানীদের অত্যাচারের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কারনে চীনা সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক আগে প্রতিবাদ জানায় কিন্তু বাংলাদেশ এর কোন সরকার কি এ পর্যন্ত পাকিস্তানীদের ঘৃণ্য এই ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ একবারও কি করেছে ? করেনি । কারন সামরিক অপশক্তি আর নির্বাচিত অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো নিজেরাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কখনো করেছে বিকৃত আবার কখনো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে , আবার কখনো ইতিহাস পরিনত হয়েছে একক ব্যাক্তির গুনগাথায় ।
এইসব মেরুদন্ডহীন সরকারগু্লোর কাছে প্রতিবাদ আশা করা মূর্খের স্বর্গে বাস করার নামান্তর । এখনই যথার্থ সময় আমাদের জন্য ইতিহাসের প্রতিটি নায়ককে তার পূর্ন সম্মান দিয়ে সত্যকে স্বীকার করে নেয়া এবং পরাজিত শক্তিকে সত্য ইতিহাস স্বীকার করে নিতে বাধ্য করা ।
তথ্যসূত্র :
১.eurasia.com Pakistan
২.the radical truth (পাকিস্তানী ব্লগ)
৩.jihad watch
৪.what are we teaching our children –Raza Rumy (e tribune)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।