আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণে রায়

বিগত চার দলীয় জোট সরকারের একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আট বিশিষ্ট নাগরিকের আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারকের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দেয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক গাজী সালেহউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ নভেম্বর আনুমানিক পাঁচ হাজার লোককে পাহাড়তলীর ওই বধ্যভূমিতে জবাই করা হয়। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে ওই বধ্যভূমি ‘জল্লাদখানা’ নামেও পরিচিত।     

ওইদিন গাজী সালেহউদ্দিনের বাবা রেল কর্মকর্তা আলী করিমসহ পরিবারের চারজনকে ওই বধ্যভূমিতে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দালালরা।

আবেদনকারীদের পক্ষে আপিল আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।

পরে মুরাদ রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত পর্যবেক্ষণসহ আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে ওই বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করতে হবে। কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, কীভাবে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে- রায়ে তার বিস্তারিত থাকবে। ”

হাই কোর্টে রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ১৫২ ও ১৫৩ দাগে বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য প্রজন্ম-৭১ নামের একটি সংগঠনের পক্ষে আবেদন করা হলে ১৯৯৮ সালে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বধ্যভূমি সংরক্ষণের নির্দেশ দেন।

এরপর ১ দশমিক ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রাথমিকভাবে ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

কিন্তু ২০০৫ সালে তখনকার চার দলীয় জোট সরকার ওই প্রকল্প বাতিল করে টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত নেয়।

সরকারের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জাফর ইকবাল, মুনতাসির মামুন, মিলি রহমানসহ আট বিশিষ্ট নাগরিক হাই কোর্টে আসেন।

২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি হাই কোর্ট রিট নিষ্পত্তি করে দিলে আবেদনকারীরা এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসেন।

“আপিল বিভাগ আজ চূড়ান্ত রায়ে আবেদনকারীদের আপিল মঞ্জুর করল”, বলেন মনজিল মোরসেদ।

ওই জমিতে বধ্যভূমি রয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত করতে আপিল শুনানি চলাকালে একটি কমিটি করে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।

ওই আদেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লার নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটি সংশ্লিষ্ট দুই দাগে বধ্যভূমি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

ওই কমিটি ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে বধ্যভূমি পরিদর্শনে গেলে কমিটির সদস্য শাহরিয়ার কবির সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। ”

এই সংখ্যা সঠিক হলে 'জল্লাদখানা'ই দেশের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি হবে বলে মত দেন আদালতের আদেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির এই সদস্য।

ওই জমি বর্তমানে ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি)- এর দখলে রয়েছে।

শাহরিয়ার কবির সে সময় বলেন, “ইউএসটিসি প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলামও সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি ছাড়া সবাই বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি যেখানে ভবন নির্মাণ করছে সেখানে বধ্যভূমি ছিল।

"আর নুরুল ইসলাম বলেছেন, নির্মাণাধীন ভবনটির স্থানে বধ্যভূমি ছিল না। ছিল আশেপাশে। "

ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালে ওই জমিতে একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করলে ২০১০ সালে একটি রিট আবেদনে আদালত ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশও দেয়।

শাহরিয়ার কবির বলেন, সাক্ষ্যদাতাদের বক্তব্য অনুসারে প্রায় পৌনে ২ একর এলাকা জুড়ে বধ্যভূমি ছিল। পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মানুষের মাথার খুলি, কংকাল ও হাড়গোড়।

“সাক্ষ্যদাতারা বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পরেও সংলগ্ন খালে মাছ ধরতে গেলে জালে উঠে এসেছে মানুষের কংকাল। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই স্থানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করে বিহারিরা। ”

মো. সোলায়মান নামের এক সাক্ষ্যদাতা স্বাধীনতার পর পত্রিকায় প্রকাশিত পাহড়তলি বধ্যভূমিতে ছড়িয়ে থাকা কঙ্কালের ছবিও  সে সময় কমিটির সামনে উপস্থাপন করেন।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।