সন্ত্রাসী সন্দেহে বেন-গুরিয়েন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এক ফিলিস্তিনি নারীকে বিবস্ত্র করে তল্লাশি করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী আশঙ্কায় ওই নারীর চুল, ব্যাগ, মোবাইল ফোন, আংটি সবই পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর তাকে একটি ছোট্ট ঘরে নিয়ে বিবস্ত্র করে তল্লাশি করা হয়েছে শরীর। তখন অবনত মস্তকে তার দু’চোখে ঝরেছে শুধু অশ্রু।
এ খবর দিয়েছে ইসরাইলেরই প্রভাবশালী পত্রিকা হারেটজ।
এতে বলা হয়েছে, ঘটনার শিকার ওই নরী একজন শিক্ষিকা। তার নাম আজিস ইলিয়াস শেহাদেহ।
তিনি বলেন, যখন আমার সবকিছু কেড়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দেয়া হয় তখন আমি শুধুই কাঁদছিলাম।
হারেটজ লিখেছে, এ লজ্জা আমাদের। সমস্ত ইহুদির।
আমরা যারা ইসরাইলে বাস করি এবং এমন অভিজ্ঞতা অর্জন করি, এ লজ্জা আমাদের।
ইলিয়াস শেহাদেহ জন্মেছেন ফিলিস্তিনের সাফেদ এলাকায়। ১৯ বছর ধরে তিরাত কারমেল এলাকায় ইহুদিদের একটি হাই স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছেন পর্যটনের ওপর। ঘটনার দিন তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সফর শেষে আইলাতে ফিরছিলেন। বিমানবন্দরে তিনি নিরাপত্তা স্ক্রিনিং স্টেশনের কাছে পৌঁছাতেই তাকে শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা করা হয়।
তার সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় যেন তিনি একজন সন্ত্রাসী।
আইলাতের উদ্দেশে তিনি বেন- গুরিয়েন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে হাজির হওয়ার পর নিরাপত্তারক্ষীরা তার দিকে বিশেষ নজর দেয়। এ সময় তিনি তাদের তার শিক্ষক সমিতির সদস্য কার্ড দেখান। নিরাপত্তারক্ষীরা বুঝতে পারে তিনি একজন আরব। কিন্তু তাকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হলো না।
অল্প সময়ের মধ্যে তাকে ডাকা হলো স্ক্রিনিং স্টেশনে। তার পার্স ও সুটকেস খুলে সব তন্ন তন্ন করে দেখা হলো। বলা হলো জুতা, আংটি খুলতে। মোবাইল ফোন নিয়ে গেল তারা দূরে। এই ফ্লাইটে যেসব যাত্রী ছিলেন তাদের কারো সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় নি।
ওদিকে তার পার্স একেবারে ফাঁকা করে দেওয়া হলো। আইলাত বিমানবন্দরে ফিরতি ফ্লাইটের আগে তাকে আরও তল্লাশি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো একটি ছোট্ট ঘরে। তিনি অভিযোগ করেছেন, ওই ঘরের বাইরে অবস্থান নেয় ইসরাইলের একজন নিরাপত্তারক্ষী। অন্যদিকে ঘরের ভিতরে শেহাদেহ’র শরীর তল্লাশি করেন আরেক নারী কর্মকর্তা।
তিনি হাতে পরে নেন গ্লোভস। শেহাদেহ ওইদিন সুন্দর করে চুল বেঁধেছিলেন। ওই নিরাপত্তারক্ষী তার সেই চুল খুলে তার ভেতর বিনুনি দিয়ে দেখেন কোন অবৈধ জিনিস আছে কিনা।
শেহাদেহ বলেন, তারা আমার শরীরের সব জায়গায় হাত দিয়েছে। তারা আমার পোশাক খুলতে বলে।
অন্তর্বাস খুলতে বলে। তখন আমি শুধু অন্তর্বাস পরিহিত। অসহায় আমি কিছু বলতে না পারায় আমার দু’চোখ দিয়ে ঝরছিল অঝোর কান্না। এ নিয়ে যখন অভিযোগ করলাম জবাবে তারা বললো, যদি তুমি সহজভাবে পরীক্ষা করতে না দাও তাহলে এখানেই থাকতে হবে। এক ঘণ্টা ধরে চলে এই দেহ তল্লাশি।
শেহাদেহ’র সঙ্গে এমনটা এবারই প্রথম ঘটে নি। এর আগে যখন তিনি পরিবার নিয়ে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন তখন একবার ঘটেছিল এমনটি। এর কারণ তাদের নামের সঙ্গে যুক্ত ছিল ইলিয়াস শব্দটি। বিমানবন্দরের স্ক্রিনিংয়ে যখন তা ধরা পড়ে তখন তাদেরকে একটি এক্সপ্রেস লাইনে সফর করতে বলা হয়। কিন্তু পরিদর্শকরা যখন তার পাসপোর্টে তার নামের সঙ্গে শেহাদেহ শব্দটি দেখতে পায় তখন তারা তাদেরকে নিয়ে যায় একটি লম্বা লাইনে।
সেখানে শিশুদের খাদ্যও পরীক্ষা করা হয়।
অন্য একবার শেহাদেহ ও তার স্বামীকে বলা হয় বিবাহের সনদ দেখাতে। তারা যখনই কোথাও ভ্রমণে গেছেন তখনই তাদেরকে এভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে।
এর জবাবে ইসরাইলের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, কোন যাত্রী কোন গোত্রের বা কোন জাতির তার সঙ্গে নিরাপত্তা স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। যাত্রীর বস্ত্র হরণের কোনও অনুমতি নেই।
তবে শরীর তল্লাশির কারণ হলো, এর মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয় যে কোন যাত্রী বিমান ও বাকি যাত্রীদের ক্ষতি হতে পারে এমন কোন দ্রব্য বহন করছে কিনা। বিমানবন্দরে শেহাদেহ একাই নন, আরও মানুষ এভাবে নিগৃহীত হয়েছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।