আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিজিবিজিঃ ০১ রথ দেখা ও কলা বেচা

Do not pray for easy lives. Pray to be stronger men. "Do not pray for tasks equal to your powers. Pray for powers equal to your tasks. Then the doing of your work shall be no miracle, but you shall be the miracle. " --Phillips Brooks

গ্রাম বাংলায় একটা কথা আছে “কাম নাই কুত্তার আইলে আইলে দৌড়। ” এর মানে হল, যার কাজ না থাকে সে ফালতু কাজ বেশী করে।
আমার একই অবস্থা। সাইটে তেমন কাজ নাই। কয়দিন ধরে ভাবছি, কি লেখা যায়! কিছু একটা লেখার জন্য সারাক্ষণ হাত পা নিশপিশ করে।

কিন্তু কলম হাতে নিলেই নানা রকম সরল আর বক্র রেখা ছাড়া আর কিছুই লেখা হয় না। মহা সমস্যা। কি করা যায়? আমি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম। রাতে ঘুম হয় না, সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি না, অফিসের কাজে মনোযোগ নেই – ইত্যাদি নানান সমস্যায় আমি জর্জরিত হয়ে গেলাম। একসময় আমার স্বভাবেও অদ্ভুত পরিবর্তন এলো।

বাসায় সবার সাথে বিনা কারণে ঝগড়া করি আর এদিকে সাইটের মিস্ত্রিরা ভুলভাল কাজ করলে আমি ওদের পিঠে হাত বুলিয়ে মোলায়েম গলায় বলি, “ ছিঃ! দুষ্টু এভাবে কাজ করে না। ”
আমার কথা শুনে ওরা বিশ্রী রকম হ্যা হ্যা করে হাসে। একদিন আড়াল থেকে শুনলাম কোন এক হারামি ইবলিশের মতো খিক খিক করে হাসতে হাসতে বলছে, “স্যারের মাথা আউলায় গ্যাছে। ”
আমি দেখলাম এ-তো বিরাট সমস্যা! এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা না হলে আমার মান সম্মান বাঁচানোই দায় হয়ে যাচ্ছে। আর আমি কোন সমস্যায় পড়লেই, প্রথম যার নামটা আমার মাথায় আসে তিনি হলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতাজী।

নেতাজীর পিতৃ প্রদত্ত একটা নাম আছে। কিন্তু সেই নামে আমরা তাঁকে ডাকি না। তার মতো মহান নেতাকে একমাত্র নেতাজী নামেই ডাকা যায়।
সে যাক। নেতাজীকে ফোন করলাম।

তিনি আমাকে হতাশ করে দিয়ে ফোন ধরলেন না। সম্ভবত ঘুমাচ্ছেন। নেতারা এমনই। কাজের সময় কাছে পাওয়া যায় না।
মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য অফিসে এসে ড্রয়ার থেকে ডায়রিটা বের করে আবারো লেখায় মনোনিবেশ করার চেষ্টা করলাম।

গতকাল কি যেন একটা লিখতে চেয়েছিলাম, লেখার মাঝখানে হঠাৎ সাইটে একটা কাজ দেখানোর জন্য উঠে গিয়েছিলাম বলে লেখাটা আর শেষ করতে পারিনি। আজকে সাইটে ষ্টোর কিপার নেই। পুরো অফিস জুড়ে বসে আছি। বিরক্ত করার কেউ নেই। তাই ভাবলাম নিজের মনে খানিকক্ষণ লেখালেখি করি।

ইদানীং একমাত্র লেখালেখি আর বই পড়া ছাড়া অন্য সব কিছু বিষের মতো লাগে।
লিখতে গিয়ে দেখলাম গতকাল আসলে কি নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম সেটা মনে নেই। ডায়রির শেষ পাতায় কেবল তিন অক্ষরের একটা শব্দ লেখা – বলদ। আমি বুঝলাম না এই কথার কি মানে হতে পারে।
আচ্ছা, লেখা লেখি থাক।

অন্য কিছু করি। কি করা যায়? আজকে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যে একটা দুর্দান্ত ক্রিকেট ম্যাচ আছে। খেলা দেখা যেতে পারে।
আমার সাইটে খেলা দেখার সুবন্দোবস্ত আছে। খেলা এমনিতে বাসাতেও দেখা যায়, আবার নেতাজীর বাসাতেও দেখা যায়।

তবে সব জায়গায় সুযোগ সুবিধা সমান না। এই যেমন, নেতাজীর বাসায় অনেকে মিলে হৈচৈ করে খেলা দেখা যায়। খেলা দেখার মাঝে মাঝে সিগারেট খাওয়ার বিরতিও দেয়া যায়। বাসায় সিগারেট খাওয়া যায় না। তবে “চা” খাওয়া যায়।

নেতাজীর বাসায় আরেক সমস্যা “চা” পাওয়া যায় না। সাইটে এই দুই সমস্যার কোনটাই নাই। ইচ্ছা মতো চা খাও, সিগারেট খাও কেউ কিচ্ছু বলবে না। একটাই সমস্যা – খেলা দেখতে হয় একা একা। আর জমজমাট খেলা একা দেখে কোন মজা নাই।


আবশ্য খেলা যে আমি একা দেখি – কথাটা পুরোপুরি সত্য না। খেলা দেখার সময় আমার ষ্টোরকিপার আমার সঙ্গ দেয়। বলা হয়নি। আমার প্রোজেক্টের ষ্টোরকিপারের নাম মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম। ডাকনাম বাবুল।

বাড়ি ফেনী। প্রায় পাঁচ ছয়মাস হল আমার প্রোজেক্টে এসে কাজ শুরু করেছেন। মিশুক লোক। তার ঘরেই আমি খেলা দেখি। আমাদের কোম্পানিতে আবার নিয়ম হলো – ষ্টোরকিপারকে সাইটে থাকতে হবে।

বাবুল সাহেব বেশীরভাগ সময় সাইটেই থাকেন। মাঝে মধ্যে বাসায় যান। বাসায় তাঁর স্ত্রী আর ফুটফুটে দুই ছেলে-মেয়ে আছে। এঁদের রেখে ভদ্রলোক কিভাবে সাইটে থাকেন সেটা আমার বোধগম্য হয় না। বাস্তবতা বড়ই কঠিন এক খেলার নাম।


খেলা শুরু হওয়ার আগেই হেড অফিস থেকে ফোন এলো – বাবুল সাহেবকে অফিসে যেতে হবে। ফোন পেয়ে আমাদের দুজনেরই মন খারাপ হয়ে গেল। কারণ খেলা দেখা উপলক্ষে আমরা বিশাল প্ল্যান প্রোগ্রাম করে রেখেছিলাম। সব ভেস্তে গেল। বাবুল সাহেব বিরস বদনে অফিসে চলে গেলেন।

আমি এক কাপ চা আর একটা সিগারেট ধরিয়ে খেলা দেখা শুরু করলাম।
খেলা শুরু হলো ধীর লয়ে। এদিন প্রথমেই যে ব্যাপারটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লক্ষ্য করলাম তা হলো – “কনফিডেন্স”। দুই একটা ভুলভাল ছাড়া প্রায় প্রতিটি শট, প্রতিটি রানই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। খেলা দেখার ফাঁকে ফাঁকে সাইটের কাজও একটু দেখতে বের হলাম বা বের হতে হল।

সাইটে প্রায় প্রতিদিনই নানান ধরনের বিচিত্র উৎপাত হয়। আজকের উৎপাতের বিষয় হল – কোন এক সাইটে ইলেকট্রিক কেবল চুরি হয়েছে। সেকারণে প্রত্যেক প্রোজেক্টের ষ্টোর “চুরি প্রুফ” করতে হবে। আমি ওদের কাজ দেখিয়ে দিয়ে এসে দেখি সর্বনাশ হয়ে গেছে। এনামুল সেঞ্চুরি করে ফেলেছে।


কিন্তু না, সেঞ্চুরি করেই এনামুলের মাথা খারাপ হয়ে গেল। অদ্ভুত এক শট খেলে ছেলেটা আউট হয়ে গেল। ধুর! আমি কুফা কাটানোর জন্য অফিসের হাবিজাবি কাজ করা শুরু করলাম। কিন্তু বেশীক্ষণ নিজেকে কাজে ব্যাস্ত রাখা গেল না। আবার খেলায় ফিরে এলাম।

এবার দেখি অবস্থা পাল্টে গেছে। ধুমায় চার-ছয় আসছে সাকিব-মুশফিকের ব্যাট থেকে। আমি আর নড়তে পারলাম না। সিগারেট আর চা খেতে খেতে রান গিয়ে ঠেকল ৩০০ ছাড়িয়ে ছাব্বিশ অর্থাৎ ৩২৬ –এ। আমি খুশীতে একা একাই নাচলাম কিছুক্ষণ।

আজকে পাকিস্তানের আর রক্ষা নাই। ব্যাটারা অনেকদিন ধরে হাত ফসকে যাচ্ছে, আজকে একেবারে ছাই দিয়ে ওদের ধরা হয়েছে। হারা ছাড়া ওদের আর কোন উপায় নাই। হঠাৎ করে দেখি দরজার ওপাশ থেকে কোন ফাজিলেরা যেন উকি দিয়ে দেখছে যে আমি কি করে। আমি বজ্র কণ্ঠে হুংকার দিলাম, “অ্যাই, কে রে!!”
আওয়াজ পেয়ে হি হি করে হাসতে হাসতে দুদ্দার করে বদমাইশগুলো পালিয়ে গেল।


খেলা শেষ করে দেখি মোবাইলে ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজ পাঠিয়েছে আমার বউ। ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। রাত আত্মায় ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়েছে। ম্যাসেজটা পড়েই আমার ব্রহ্মতালুতে যেন আগুন ধরে গেল।

কোন মানে হয় এইসব ফাইজলামির? এই দিনে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিলে হতো না? অবশ্য ছেলের কথা মনে হতেই মনটা নরম হয়ে গেল। নাহ! ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। দায়িত্ব বলে একটা পেইনফুল কথা আছে। তাছাড়া ছেলেটা কয়দিন ধরে কষ্ট পাচ্ছে। বাবা হয়ে এটা সহ্য করা কঠিন।


তাহলে উপায়? আমি ভাবলাম, আচ্ছা দেখাই যাক না! কোন না কোন ব্যবস্থা হয়েই যাবে।
হয়েও গেল। ক্লিনিকে গয়ে দেখি ওখানে খেলা দেখার ব্যবস্থা আছে। ওয়েটিং রুমের এক কোনায় মাথার ওপর একটা টিভি ঝোলানো আছে। ক্লিনিকে আসা সবাই সেখানে খেলা দেখছে।

হা হা হা। রাখে আল্লাহ্‌ মারে কে? নাহ, উদাহরণটা বোধহয় জুতসই হল না। আচ্ছা, না হোক। বাংলাদেশের জেতার দিন ভুলভাল সব মাফ। আমি ফাঁকা দেখে একটা সিটে বসে খেলা দেখতে লাগলাম।

আমাদের সিরিয়াল আসতে দেরি আছে। ততক্ষণ খেলা দেখা যাক।
পাকিস্তান ইনিংস তখন অনেকখানি এগিয়ে গেছে। যদিও উইকেট পড়েনি। তবে রান রেট বেড়ে গেছে অনেক।

এর মধ্যে একটা উইকেট পড়ার পর আমি উত্তেজনায় এমন হালুম করে উঠেছিলাম যে সবাই চমকে গিয়েছিল। সে যাক, খেলা দেখতে গেলে এমন একটু আধটু হয়ই। খেলা আগাতে লাগলো। উইকেটও পড়তে লাগলো। খেলায় চরম উত্তেজনা।

এমন সময় কোত্থেকে আফ্রিদি নামলো। গায়ের জোরে আন্দাজে ব্যাট চালিয়ে পর পর কয়টা ছয় মারলো। খেলাটা নষ্ট হয়ে গেল। এদিকে আমরা খেলা দেখায় এমনই মত্ত ছিলাম যে যখন আমাদের সিরিয়াল আসলো তখন আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক সুযোগ সন্ধানী ফাজিল বুড়া তার পরিবার নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে পড়লো। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর যদি কেউ সিরিয়াল ব্রেক করে, তাহলে তাঁকে যা বলা উচিৎ তা-ই বললাম।

বয়স এখানে কোন ফ্যাক্টর না। তার উপর আফ্রিদি কিছুতেই আউট হচ্ছে না।
ভদ্রলোককে “হাল্কা” কিছু কথা শুনিয়ে দিয়ে আমি আমার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের পুরোটা ছাড়লাম খেলার ওপরে। আমরা বন্ধুরা মিলে যখন খেলা দেখি তখন একটা জিনিষ আমরা খুব খেয়াল করে দেখেছি। টিভিতে খেলা দেখলেও স্লেজিং চমৎকার কাজ করে।

ক্লিনিকেও আমি দু’একজন সঙ্গী পেয়ে গেলাম স্লেজিং করার জন্য। সেই তীব্র স্লেজিং এর তোপে আফ্রিদি লুলা হয়ে গেল। একটা ক্যাচের ব্যবস্থাও করে দিলাম। কিন্তু না। ক্যাচ মিস।

আর এই রকম একটা খেলায় ক্যাচ মিস, তো ম্যাচ মিস।
কিন্তু স্লেজিং কি তাই বলে থেমে থাকবে? কখনোই না। খেলায় জিতি আর হারি কোন ব্যাপার না। আমাদের আফ্রিদির উইকেট চাই। শালা সাকিবের বলে ছয় মারে! এতো বড় সাহস!
যাক! কি শান্তি!!! আফ্রিদি আউট! তাও সেই সাকিবই দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউট করেছে শয়তানটাকে।

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!!
এর মাঝে আমাদের সিরিয়াল চলে আসলো। খেলার উত্তেজনায় আমার চোখ মুখ ততোক্ষণে লাল হয়ে গেছে। মাথার চুল উষ্কোখুষ্কো। চোখে বুনো দৃষ্টি। সেই অবস্থাতেই ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে ঢুকলাম।

ডাক্তার আমাকে দেখে কি ভেবেছে জানি না। তবে এই দৃষ্টিতে অনেকে প্রায়ই আমার দিকে তাকায়। আমি মাইন্ড করি না। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের একটা প্রবাদ আছে – মাইন্ড করলে শাইন করা যায় না।
আমিও মাইন্ড করলাম না।

চোখ লাল করে হাসি মুখে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম, “ডাক্তার সাহেব, ভালো আছেন?”
ডাক্তার অত্যান্ত সতর্ক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ জী। ” একটু থেমে বললেন, “সমস্যা কি আপনার?”
আমি বত্রিশ দাঁত বের করে বললাম, “ নাহ! আপাতত আমার কোন সমস্যা নেই। তবে ছেলেটার কি যেন হয়েছে। একটু যদি দেখে দিতেন। ”
আমার কথায় ডাক্তার যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

ছেলেকে টিপে টুপে দেখতে লাগলো। ছেলেও কম যায় না। ওকে দেখতে দেখতে ডাক্তার একবার ওর খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। আর যায় কোথায়? চুলের মুঠি ধরে দিল এক হ্যাঁচকা টান। বেচারা ডাক্তার ঘাবড়ে গিয়ে কয়েক কদম পেছনে সরে গেল।

আমি প্রায় হেসে ফেলেছিলাম। কোন রকমে হাসি ঠেকিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখি, ও প্রবল উৎসাহ নিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় প্রথমবারের টানটা ঠিক জুত মতো হয়নি। আরেকবার এক্সপেরিমেন্ট করে দেখার ইচ্ছা।
আমি দেখলাম ব্যাপারটা তো খারাপ না।

এখানেও একটা খেলা শুরু হয়ে গেছে। ডাক্তার ভার্সেস আট মাস বয়সী এক কৌতূহলী শিশু। এখানে ইন্টারাপ্ট করাটা ঠিক হবে না। আমি ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ছেলের পরবর্তী অ্যাটাকের অপেক্ষায়।
ডাক্তার ততোক্ষণে হ্যাঁচকা টানের ধকল সামলে উঠেছে।

হে হে করে একটু হেসে চুলটা হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বিব্রত কণ্ঠে বললেন, “ বাহ! আপনার ছেলে তো এই বয়সেই খুব স্পোর্টিং! ভালো! ভালো!”
আমি মনে মনে বললাম, স্পোর্টিং এর দেখেছিস কি? খেলা তো মাত্র শুরু! হা হা হা!
তবে চেহারায় কিছু প্রকাশ করলাম না। বরং খানিকটা সহানুভূতির সুরে বললাম,
“আহ! ছেলেটা খুব দুষ্টু হয়েছে। লাগেনি তো আপনার?” ঘুরে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তুমিই বা কি কর? ওকে একটু ধরে রাখতে পার না?”
কথাগুলো বলার আমার বউ চোখ সরু করে আমার কথাটা শুনল। তারপর শীতল দৃষ্টিতে আমার দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওর চোখের দৃষ্টি দেখে বুঝলাম, বাসায় গেলে আজকে আমার খবর আছে।


তবেরে ভাই, একেই বলে এক ঢিলে দুই পাখী মারা। মজাও নিলাম, আবার বউকে চান্সে পেয়ে একটু শান্টিং-ও দিলাম। এই রকম সুযোগ তো আর বার বার আসে না! ডাক্তারের সামনে তো আর যাই হোক বাঙালি মেয়ে জামাইকে কিছু বলতে পারবে না। হা হা হা।
আমার কথা শুনে ডাক্তার আবারো হে হে করে হেসে উঠে বললেন, “ কি যে বলেন! শিশুদের নিয়েই তো আমার কাজ! ওরা এমন একটু দুষ্টুমি করেই।

কি বাবু ঠিক বলেছি না?”
বাবু কি বুঝলো কে জানে? হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে গেল।
ডাক্তার আবার ওকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে লাগলো। তবে এবার নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে। কিছুক্ষণের ভেতর উনি সবকিছু আবার ভুলে গেলেন। ছেলের কান পরীক্ষা করার জন্য একসময় আবার তাঁর মাথা ওর দিকে এগিয়ে নিলেন।

তবে এবার ওর মা ওর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। সব সময় বদমাইশি করতে দিতে নেই। আমি হতাশ হয়ে ব্যাপারটা লক্ষ্য করছি। এমন সময় আমার ছেলে মুখ ঘুরিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকালো। ডাক্তার সাহেবও ওর দিকে তাকালেন।

আমি স্পষ্ট দেখলাম – হঠাৎ করে ফাঁদে পড়লে মানুষের যেমন হয়, ঠিক তেমনি, ভদ্রলোক “আমি এটা কি করলাম” মার্কা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আমার ছেলের দিকে তাকালেন। চোখগুলো গোল গোল করে তিনি শেষ চেষ্টা করলেন সরে আসার। মুহূর্তের দেরি। আর সাথে সাথে আমার ছেলে বুউউউউ... করে ডাক্তারের সমস্ত মুখে থু থু স্প্রে করে ভিজিয়ে দিল।
আমি আর হাসি থামিয়ে রাখতে পারলাম না।

হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। আমার ছেলেও আমার সাথে খিল খিল করে হেসে উঠলো। ডাক্তার আর আমার বউ অগ্নি দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু করার নেই। আমাদের বাপ-ব্যাটার হাসির ফোয়ারাতে সমস্ত অগ্নি-ভস্ম করা দৃষ্টি ধুয়ে মুছে গেল।


হাসতে হাসতে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে দেখি আর মাত্র দুই বল বাকি আছে খেলার। দুই বল, দুই রান। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। ভাবলাম, দুই বল দেখেই যাই। কিন্তু কিসের কি? প্রথম বলেই চার।

খেল খতম পয়সা হজম।
পাকিস্তানের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ক্লিনিক থেকে বেড়িয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসায় এসে জানলাম নেতাজী আমাদের সাথে বিশাল বেঈমানি করেছেন। চান্সে টিকিট পেয়ে মাঠে খেলা দেখতে চলে গেছেন – কাউকে কিছু জানাননি। তবে খেলা দেখে তার মন ভেঙ্গে গেছে।

সেকারণে জ্বালাময়ী এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন – I am simply frustrated.
হায়! নেতাজীও হতাশ? আপনি হতাশ হলে এই জাতির কি হবে নেতাজী? কে তাঁকে আশা দেবে, কে তাঁকে ভরসা দবে...
আমরা আবার বিজয়ের ধারায় ফিরতে চাই। কিন্তু ---
“রাত্রি পোহাবার আর কত দেরী পাঞ্জেরি?...”



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.