৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা ভুল ট্রেনে উঠেছেন, জনগণ তাতে ওঠেনি। সে ট্রেন পড়ে গিয়েছে। তারা বলে, গোপালিরা নাকি কপালি হয়। হায়রে কপালি। গোপালিকে এখন ক্রেন দিয়ে টেনে তুলতে হবে।
’
গতকাল রোববার ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি-সমর্থিত প্যানেলের কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয় না। আওয়ামী লীগই বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। সরকারের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন দেশে দূত পাঠাচ্ছে।
কিন্তু সমর্থন মিলছে না।
ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, যাদের ভরসায় এ সরকার টিকে আছে, তারাও দূরে সরে যাচ্ছে। ‘স্বঘোষিত’ প্রধানমন্ত্রী ভারতের দুজন মন্ত্রীর কাছে তিস্তার পানির কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, পানি দিতে পারবেন না।
একটি দৈনিক পত্রিকার সংবাদ উদ্ধৃত করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, সবকিছু দিয়ে হাসিনার সরকারের প্রতি সমর্থন ছাড়া আর কিছুই পায়নি বাংলাদেশ।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, এখন কানেকটিভিটির নামে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে হত্যা, তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না তিস্তার পানি পাই ততক্ষণ ট্রানজিট দেওয়া যাবে না। ’
আইনজীবীদের এই অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। বিচারপতিদের কোন স্বাধীনতা নেই।
সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তাঁদের সেভাবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সমস্ত বিচার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগের হাতে শৃঙ্খলিত, নিয়ন্ত্রিত। ’ তিনি দাবি করেন, বিএনপি সরকারের সময় তাঁরা বিচার বিভাগে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। এখন বিচার বিভাগ, প্রশাসনসহ সব জায়গায় সরকার দলীয়করণ করছে। মেধা, যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি উদ্যোগেরও সমালোচনা করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। জনগণের স্বার্থে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের লোকজনের কুইক রেন্টালের ভর্তুকি দিতে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের ওপর বোঝা চাপানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে সব কিছুর দাম বাড়বে। জনগণের প্রতি এই সরকারের সামান্য সহানুভূতি থাকলে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না।
অতিদ্রুত নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বিদেশিরাও দ্রুত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। জনগণ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। সময় থাকতে কথা না শুনলে পরবর্তী সময় আরও বেশি মাশুল দিতে হবে।
সরকার সারাদেশে গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে যে অত্যাচার চলছে একদিন তার জবাব দিতে হবে। কত গুম-খুন হচ্ছে তার হিসাব তাঁদের কাছে আছে।
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ ও র্যাবকে সরকার আওয়ামী লীগের কর্মীবাহিনীর মতো ব্যবহার করছে।
দল পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, অনেকে বলে বিএনপি নাকি দুর্বল হয়ে গেছে। বিএনপি দুর্বল হয়নি, অনেক শক্তিশালী। আইনজীবীদের নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। তবে সংগঠনের নিয়ম হলো কিছুদিন পরপর পরিবর্তন আনা।
অনেকে দলে যোগ দিচ্ছেন। তাঁদেরও জায়গা দিতে হবে।
খালেদা জিয়া আবারও বলেছেন উপজেলা নির্বাচন শেষে তাঁরা আন্দোলন শুরু করবেন। তিনি সবাইকে সরকারের অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মিয়া।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।