আমি তোমাকে ভালবাসি রাজন। প্লিজ ফিরিয়ে দিওনা। আমি জানি এখনো বয়স হয়নি কিন্তু প্রেম যেকোনো বয়সেই আসতে পারে।
তুমি আমাকে......... পাগলামি করছ কেন।
না আমি ঠিকই করছি।
তুমি যদি ফিরিয়ে দাও তো আজ আর ফিরব না ঘরে।
দেখ বৃষ্টি পাগলামি করার একটু হলেও মাত্রা আছে কিন্তু তুমি সেটা ছাড়িয়ে যাচ্ছ।
সেটা আমি জানি, আর আমি বুঝে শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।
তোমার আমার এখনো ঐ বয়স হয়নি।
অনেক বই পড়ে জেনেছি ভালবাসার কোন বয়স নেই, সুতরাং বয়সের দোষ দিয়ে পার পাবে না।
বল তোমার আমাকে কেমন লাগে? নাকি কেউ আছে?
আমার তোমার মত কেউ নেই, আর তোমাকে আমার পছন্দ...
প্লিজ তুমি আর যাই হিসেবে পছন্দ হোক বোন বলে সম্বোধন করো না।
সত্যি রাজন সেদিন ফিরিয়ে দিতে পারেনি । কোন এক অজানা কারণে মনে হচ্ছিল তাদের একসাথে চলার জন্য বিধাতা সৃষ্টি করেছেন । সেই থেকে দুজনের একসাথে পথচলা । বৃষ্টি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে।
আর রাজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখনো মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হয় ওরা, নদীর তীরে বসে পানি দেখে, মাছরাঙ্গার খেলায় নিজেদের দুষ্টামি, মাছরাঙ্গা যেমন উড়ে যেতে যেতে খাবার তুলে নেয় মাঝ নদী থেকে, একটু আয়েশ করে খেয়ে নেয় আহার। রাজন ভিজিয়ে নেয় একটু পরশ মেখে বৃষ্টির পানিতে । ভালবাসার যখন অন্তিম মুহূর্তে । ঠিক সেই সময় রাজনকে চলে যেতে হয় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
তখন দুমাস পর পর বৃষ্টি আসত রাজনকে দেখতে। রাজন ছুটি পেলেই চলে যেত।
বৃষ্টি কলেজ পাশ করে কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দিল না, সোজা বিদেশ পারি দিল। তাদের শেষ দেখা হয়েছিল এই সিলেট রেল স্টেশনে ৯ মার্চ । বলেছিল প্রতি বছর আসবে কিন্তু আজ দুবছর পেরিয়ে তিন হতে চলেছে।
আসছে মার্চে পূরণ হবে তিন বছর। রাজন দাড়িয়ে থাকে এক বুক আশা নিয়ে কিন্তু আশা পূরণ হয়না। প্রতীক্ষা যেন ফুরাতে চায় না। নদীর তীরে আর যাওয়া হয় না তার । এই স্টেশন টাই এখন অপেক্ষার স্থান।
কালকে নয় মার্চ চলে গেল। সারাদিন এমনকি রাত অবধি রাজনের হলে ফেরার হদিস নেই
সকাল থেকেই ষ্টেশনে বসে ছিল, খুব ভোরে বের হয়েছিল সকালের ট্রেন ধরতে। কিন্তু যাওয়ার আগেই ট্রেন এসে হাজির। প্লান ফর্ম ফাকা, একাকী বসে পুরনো দিন গুলোর কথা ভাবছে সে । দুপুরের ট্রেন আসলে আবার খুঁজে দেখবে কাঙ্ক্ষিত মানুষটি আসছে কিনা, নাস্তা করতে দূরে কোথাও না গিয়ে বাস স্টেশন এর এক রেস্টুরেন্টে বসেছে ।
এমন সময় দেখে বৃষ্টির মত একটা বোরকা পরা মেয়ে সামনের টেবিলে বসছে । বোরকা তাই নিশ্চিত হতে পারছে না। এর আগে অনেক বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাই কিছু বলল না। নাস্তা শেষ করে বসে রইল, দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল কোথায় যায়? না যাচ্ছে না, বিরক্ত হয়ে রেল স্টেশন এ চলে গেল। প্লাট ফর্ম এ বসেছে এমন সময় মেয়েটি এসে পাশে বসল ।
হাতের ইশারায় সালাম দিল। সালাম নিয়ে নাম জিগ্যেস করতেই মুখে কিছু না বলে চোখ পিট পিট করতে শুরু করল। ঠিক বৃষ্টির মত কিন্তু ভয় যদি অন্য কেউ হয়। চোখ বেয়ে পানি ঝরছে মেয়েটির , তার মনে হল মেয়েটি অনেক খুদার্থ তাই কিছু টাকা বের করে দিল হাত পেতে টাকা নেয়ার সময় আলতো করে হাত স্পর্শ করল । রাজন বলল খেয়ে নিন যান, আর যেহেতু কথা বলতে পারেন না তাই একটা কাগজে লিখে নিলে আপনার সুবিধা হবে এমন কি আমাদেরও।
বসে বসে কাঁদছে,
এর বেশি আমি দিতে পারব না। এখন একটু যান না। আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করছি।
তবুও যাচ্ছে না, বিরক্ত হলে আল্লাহ নারাজ হবে, তাই বলল খালা চলেন আপনাকে রেস্টুরেন্টে এ নিয়ে যাই।
খালা বলছ কেন?
রাজন লাফ দিয়ে দাঁড়াল, বলল আবার কথা বলেন তো?
খালা বলছ কেন? বলেই নেকাব খুলে দিল।
তুমি? বৃষ্টি! মনে হচ্ছিল শরীরের রক্ত শীতল হয়ে আসছে, থপাস করে বসে পরল। অনেকক্ষণ কোন কথা নেই, চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করল।
তোমার এ অবস্থা কেন? মাথার চুল এলোমেলো, জট বেধে যাচ্ছে তো?
বাধুক, মরে গেলেই বা কি? কে আছে আমার?
এতক্ষণ বৃষ্টি কেঁদেছে, এখন সে স্বাভাবিক। ও জানত রাজন দেখলেই কান্না শুরু করব, দুজনে কাঁদলে সামলাবে কে?তাই আগে অনেকক্ষণ কেঁদে এখন রাজনকে সামলাচ্ছিল।
মরে যাবে মানে ? আমার খোঁজখবর নিয়েছ কোন দিন?
কিভাবে নেব?
তোমার নাম্বার দিয়েছিলে? আমার নাম্বার তো জানতে, কল করনি নিজেই।
কল করেছি কয়েকদিন কিন্তু সংযোগ পেতাম না। আর আব্বু চাইত না আমি... আচ্ছা থাক, তাছাড়া তোমাকে প্রতিদিন ফেসবুকে ফলো করতাম। তুমি প্রায় ছয় মাস কোন ছবি আপলোড দিচ্ছ না কেন?
আমাকে দেখতে কিন্তু আমায় দেখতে দিতে না কেন? আমি যে এতো দিন......
থাক কেঁদো না, এবার এসেছি তো, যা ইচ্ছে কর।
ইচ্ছে আছে অনেক কিছু করার , কিন্ত বৈধ করে নিতে হবে।
তাই! বলেই হাসি দিয়ে হাত ধরে হাটতে শুরু করল বৃষ্টি, রাজন সাথে সঙ্গ দিল।
আমি জানতাম তুমি আসবে, তাই ... আচ্ছা থাক, তোমার কথা বল।
প্রতিদিন তোমার প্রোফাইল দেখে ঘুমাতে যেতাম, কিন্তু মাস ছয়েক তুমি কোন ছবি দিচ্ছ না, কোন একটিভিটিস ও নেই। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই বাধ্য হয়ে পরীক্ষা শেষ করে চলে এলাম। মাত্র পনের দিনের ছুটি।
আমি সিলেট এসেছি পাঁচ তারিখ, প্রতিদিন খুঁজেছি, ফেসবুকে বাসার নাম্বার দাওনি, ইমেইল ও চেক কর না ? সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।
সব গল্প হবে পরে, তোমার আব্বু আর আম্মু কেমন আছেন?
আব্বু তো আমার ওইখানে চলে গেছে, আম্মু এবার আমার সাথে যাবে।
ও আচ্ছা। তা আমার কথা মনে আছে তাঁদের? হুম আছে, মাঝে মাঝে জিগ্যেস করে যোগাযোগ হয় কিনা, আমি বলি হয় না। আচ্ছা, তুমি কি যেন করতে চাইলে?
তোমাকে চিরদীনের জন্য পেতে যা ইচ্ছে করব।
বল তুমি কি হবে আমার?
তোমার যা ইচ্ছে তা পূরণ করতেই এসেছি জাহাঁপনা?
আমার কাছে তো খুব বেশি টাকা নেই।
সে চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। আমি সেই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। আমার জন্য যে মানুষটি এতদিন অপেক্ষা করে রইল তার প্রতিদান দেব না?
চল বিয়ে করি।
চল।
আজ সকালের ট্রেন এ বৃষ্টি চলে গেল। আবার অপেক্ষার পালা তবে ফিরে পাবার অনেকাংশ নিশ্চয়তা আছে এখন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।