আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্কুলগুলো ব্যবসা কেন্দ্র, অভিভাবকরা উন্মাদ হয়ে যায়

আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। ডিসেম্বর আসলে বাচ্চাদের বাবা-মায়েরা যুদ্ধে নামবার প্রস্তুতি নেন। ভাত-দুধ-ডিম-হরলিক্স খাওয়ান না খাওয়ান দুইবেলার বদলে পাঁচ বেলা বই গুলিয়ে জোর করে ঠিকই খাইয়ে দিচ্ছেন বাচ্চাকে। এই সুযোগটা হারাতে চাইবে কেন স্কুল ব্যবসায়ীরা? চট্টগ্রামের সেরকম একটি স্কুলের কথা বলি। যেকোন ক্লাসের ভর্তি ফরম কিনতে হবে ৩০০ টাকা দিয়ে।

ভাবছেন ফরম কিনেই বাচ্চাকে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দিবেন? না মশাই তা হবে না। এসব ফরম প্রথমে বাছাই হবে। বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু বাদ যাবে। তারপর একটা রেজাল্ট দিবে। রেজাল্টে আপনার বাচ্চার নাম আছে দেখে খুশীতে মিষ্টি বিতরন করার কিচ্ছু নাই।

পথ অনেক বাকি এখনও বন্ধু। যারা ফরম বাছাই প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ন হয়েছে এবার তাদের বাবা-মায়ের পালা। তাই বলে আপনারা নিজেরাই পড়তে বসে যাবেন না। বাচ্চাদের বাবা-মা কে ডাকা হবে এক ইন্টারভিউতে। নাহ জ্ঞানের কিছু জিজ্ঞেস করবে না।

আপনার পকেটে মালপানি কেমন আছে,গাড়ীতে এসি আছে কিনা অথবা বাড়ীটা ডুপ্লেক্স কিনা এসব জিজ্ঞেস করবে। যান আপনার পালা এবার শেষ। এবার আবার আপনার মাসুম শিশুর পালা। তার ডাক পড়বে ভাইভা বোর্ডে। চশমা পরা ৬০ বছর বয়সি নির্লজ্জ মানুষগুলো তাকে জিজ্ঞেস করবে "বাবু বলতো হন্ডুরাসের রাজধানী কি? অথবা বাবা বলতো দেখি ম্যারাডোনার দাদা কোন পায়ে ফ্রি-কিক নিতেন? আপনার বাচ্চা মুখ কালো করে রুম থেকে বেরিয়ে আসবে।

এত কম বয়সে এরকম অত্যাচার যে সে আগে হয়নি। যাই হোক দুদিন পর রেজাল্ট দিবে। রেজাল্ট মূলত আপনার পকেটের মালপানির উপর নির্ভর করবে। যদি মালপানির হিসাব কম পড়ে তবে আপনার বাচ্চা টিকবে না। কিন্তু কথা হল বাচ্চা স্কুলে টিকেনি এ জন্য জীবনের প্রথমেই বাচ্চার মস্তিস্কে একটা ধাক্কা দিয়ে দিলেন আপনি।

সে জানবে সে পরীক্ষায় পাশ করেনি। অথবা আপনি যদি তথা-কথিত পিতা-মাতা হন সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে ভর্তি পরীক্ষায় না টেকার জন্য কিছু বকাঝকাও করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন বাচ্চাকে নষ্ট করার প্রথম ধাপ আপনি পার করলেন। আর হ্যাঁ রেজাল্টে যদি আপনার বাচ্চার নাম আসে তবে আনন্দের কিছু নাই। পথযে আরেকটু বাকি।

ভাইভাতে যারা উত্তীর্ন হয়েছে তাদেরকে এবার ডাকা হবে লিখিত পরীক্ষার জন্য। আসল পরীক্ষাটি এখন। এবার আপনার বাচ্চাকে মারুন,কাটুন,হাত ভেঙ্গে ঠ্যাংয়ে ধরিয়ে দিয়ে পড়ালেখা গিলিয়ে দেন। উত্তীর্ন না হলে যে পাশের বাসার ভাবীর কাছে আপনার মুখ দেখানো দ্বায় হয়ে যাবে। প্রয়োজনে বাচ্চার ক্রিকেট ব্যাট কেড়ে নিন,ফুটবল পুড়িয়ে ফেলুন।

খেলাধুলা করে কিচ্ছু হয় না। একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে না পারলেতো বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। যাক সব প্রস্তুতি সেরে বাচ্চা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এবার রেজাল্টের পালা। রেজাল্টও দিয়েছে।

কিন্তু আপনার বাচ্চার নামটি দেখতে পারছেন না। দেখতে পারবেন কিভাবে? প্রতি ক্লাসে আমজনতা থেকে কেবল ২০ জন নিয়েছে। হুমমএটা একটা সামরিক স্কুল। এবার বলুন হতাশ লাগছে? দোষটা কার? স্কুলগুলো ব্যবসা করছে আপনার বাচ্চাকে নিয়ে, তাদের একটুও দোষ দেখি না। কিন্তু আপনি আপনার বাচ্চার সাথে কি করেছেন? পড়ালেখার জন্য পারলে তার জীবন নিতে চেয়েছেন।

আপনার এমন আচরনের সুযোগ কেন নিবেনা স্কুলগুলো ব্যাখ্যা করুন। উপরের ভর্তি প্রক্রিয়াটি চট্টগ্রামের একটি সামরিক স্কুলের। আমার জানামতে এই ডিসেম্বরে তাদের ৪৩ হাজার ফরম বিক্রি হয়েছে। প্রতি ফরমের দাম ৩০০ টাকা করে। যতুটুকু জানি প্রতি ক্লাসে ২০-৩০ জন করে নিচ্ছে তাদের কর্মকর্তাদের বাইরে।

আর আমাদের অভিভাবকরা বাচ্চার উজ্জল ভবিষতের কথা চিন্তা করে সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এদের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে যারা একদম ফাইনালি উত্তীর্ন হয়েছে তাদেরকে সরাসরি বিসিএস ক্যাডার বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিসিএসেও এত ধাপ পার করতে হয় না। বাবা-মা হইলে কেন জানি মাথায় কি আসে? বাবা-মা হবার পর তারা ভাবে না তারাও একসময় বাচ্চা ছিল? তারাও পড়ালেখা করেছে। কিভাবে করেছে সেটা ভাবে না।

নিজের আনন্দ,উদ্দীপনার কথা কেবল বাচ্চাকে গল্পই করে। বাচ্চার গল্প বলার জন্য কোন পথ রাখে না। এই বাচ্চাগুলো বুড়ো হয়ে তার নাতি নাতনিদের শৈশবের কোন গল্পই বলতে পারবে না। কারন আমরা তাকে একটা দুঃসহ শৈশব উপহার দিচ্ছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।