লিখে খাই, সবার ভাল চাই
হাসপাতালে ডাক্তার রোগী দেখছিলেন। তার পেছনে ইন্টার্নি ডাক্তার। সঙ্গে আছেন ডাক্তারকে সাহায্যকারী। যাকে বলে কম্পাউন্ডার। দেখতে দেখতে ডাক্তার এক রোগীর সিটের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেন।
রোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডাক্তার রোগীকে ধমক দিয়ে বলতে লাগলেন, তোমাকে বলেছি টক জাতীয় কিছু খাবে না। অথচ তুমি জাম্বুরা খেয়েছো। রোগী ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। না, স্যার আমি জাম্বুরা খাইনি। এবার ডাক্তার আরও জোরে ধমক দিয়ে বলেন, আবারও মিথ্যা কথা বলছো।
কখনও আর টক জাতীয় কিছু খাবে না। এবার রোগী সব স্বীকার করে বলে, স্যার আমি খেয়েছি। আর কখনও খাবো না। তারপর ডাক্তার তাকে চেকআপ করে চলে যান। কম্পাউন্ডার তো অবাক।
ওই বেটা জাম্বুরা খেয়েছে। স্যারের সামনে তো খায়নি। স্যার কিভাবে বুঝলো? ইতস্তত করতে করতে ডাক্তারকে জিজ্ঞেসই করে ফেলল। স্যার আপনি কিভাবে বুঝলেন যে ওই রোগী জাম্বুরা খেয়েছে? ডাক্তার বললেন, আরে রোগীর সিটের নিচে আমি জাম্বুরার টুকরা দেখতে পেয়েছি। তাই তাকে বলেছি।
কম্পাউন্ডার বেটা খুবই চতুর। রোগীদের সামনে এমন ভাব দেখায় যেন সে ডাক্তারের চেয়েও বড় কিছু। পরদিনই সে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরতে থাকে। রোগীদের খোঁজখবর নিতে থাকে। হঠাৎ এক রোগীর সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে, তুমি জুতার ফিতা খেয়েছো? সর্বনাশ, তুমি মানুষ না অন্য কিছু।
রোগী চিৎকার করে বলতে থাকে, না স্যার আমি জুতার ফিতা খাইনি। আর জুতার ফিতা তো খাওয়ার কিছু নয়। সেটা আমি কিভাবে খাবো? কম্পাউন্ডার আরও জোরে চিৎকার করে ধমক দেয়। বলে, বেটা মিথ্যা বলার আর জায়গা পাও না। আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা।
সিটের নিচ থেকে জুতা বের করে বলে ওঠে, তাহলে এই জুতার ফিতা কোথায়? ডাক্তার জাম্বুরার টুকরা দেখে যেমন রোগীকে বলেছিলেন, তেমনি কম্পাউন্ডার সিটের নিচে ফিতা ছাড়া জুতা দেখে রোগীকে ধরে বসেন। সেটা খাওয়ার বস্তু কিনা তা দেখেননি। কম্পাউন্ডার আসলে ডাক্তারকে অনুকরণ করেছেন। বাঙালি জাতি নাকি অনুকরণ করতে খুব পছন্দ করে। তাই তো দেশের কোথাও একটি ঘটনা ঘটলে দেখা যায় এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পরপর একই ঘটনা ঘটতে থাকে।
ইভটিজিংয়ের কথাই ধরা যাক। ইভটিজারের যন্ত্রণায় যখন এক কিশোরী আত্মহত্যা করে বসলো, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল আত্মহত্যার ঢেউ। এভাবে ইভটিজিংয়ের বলি হলো অনেকে। শিক্ষামন্ত্রী ছুটে গেলেন বিভিন্ন জায়গায়। শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিলেন।
দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ গেল জেলায় জেলায়। সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে এক সময় তা কমে আসে। আবার যখন দেখা যায়, নেশাদ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেয়ার ঘটনা ঘটছে, তা-ও ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। আতঙ্ক সৃষ্টি হয় সর্বত্র। হাসপাতালে একের পর এক রোগী ভর্তি হতে থাকে।
ক’দিন আগে বিরোধী দলের আন্দোলনে দেখা গেছে, পেট্রল বোমার ব্যবহার। এক পর্যায়ে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এতে দগ্ধ হয়েছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। আন্দোলন দমাতে পুলিশ কথায় কথায় গুলি ছুড়েছে। মরেছে মানুষ।
তাও ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। এক সময় দেশের আনাচে কানাচে কিশোর-যুবকদের মধ্যে চুল বড় করে রাখার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। চুল বড় রাখার প্রবণতারোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাড়িয়ে লম্বা চুল কেটে দিতে দেখা গেছে তাদের। ভাল কিছু অনুকরণের চেয়ে মন্দটাকেই সমাজ গ্রহণ করে দ্রুত।
এখন স্কুল-কলেজের ছাত্রদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। ফেসবুকে ফ্রেন্ডশিপ করতে ব্যাকুল তারা। পড়ার ফাঁকে, ক্লাসের ফাঁকে যুবকরা ফেসবুক দেখছে। আগে যেখানে শীতের রাতে লেপের নিচে বই নিয়ে ছাত্ররা পড়তো। এখন সেই হাতে উঠেছে ফেসবুক চর্চা।
বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করা। আড্ডা দেয়া। সম্প্রতি যে অনুকরণ সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ব্যাংক লুটের ঘটনা। কিশোরগঞ্জের পর বগুড়ায় ঘটেছে একই কায়দায় সোনালী ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনা। আরও কি ঘটে দেশে কে জানে।
আসলে ডাক্তারের জাম্বুরা থেরাপি অনুকরণ করতে গিয়ে কম্পাউন্ডারের মতো জুতার ফিতা খাওয়ার থেরাপি আবিষ্কার করছি আমরা। ফলে ঘটছে নানা ঘটনা। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি? দাদাকে জিজ্ঞেস করলে উল্টো ক্ষেপে যান তিনি। বলেন, আজ ১০ জন তোরা ল্যাংটা হয়ে রাস্তায় হাঁট, কাল দেখবি এক শ’ জন হাঁটছে। আর তুই এসেছিস্ উপায় খুঁজতে।
জানিস্ না বাঙালি অনুকরণপ্রিয়। এ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা কঠিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।