তৃতীয় দফায় ৮১ উপজেলায় ভোট আজ। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন নির্দলীয় পদ্ধতিতে হলেও মাঠ পর্যায়ে পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক রূপ লাভ করেছে। নির্বাচন ঘিরে উৎসবের আমেজের পাশাপাশি রয়েছে নানা শঙ্কাও। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোট গ্রহণ। এ দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ১১৯ জন প্রার্থী।
নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যও এসব এলাকায় টহল দেবেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় নির্বাচনী সহিংসতা বেশি হওয়ার আশঙ্কার কথা ইসিকে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ইসি কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেছে, ভোট গ্রহণে কারচুপি ও কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলন করে হামলা-মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতনসহ নানা আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিএনপি।
তবে দুই দফায় পরাজয়ের গ্লানি মাথায় রেখে সর্বাত্দক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। খোদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটর করছেন। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছেন তিনি। প্রথম দুই দফায় সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলায় বিজয়ে উজ্জীবিত বিএনপি এখন ধারাবাহিকতা রক্ষায় শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই সার্বিক বিষয় তদারক করছেন।
তার নির্দেশে গঠিত কমিটি দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে কোনো অঘটন হলে নির্বাচন বর্জন নয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার কমিয়ে আনার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত অর্ধশত নেতাকে বহিষ্কারে বাধ্য হয়েছে দলটি। ভোট কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা ছাড়াও বিদ্রোহী ও জামায়াতকে নিয়ে টেনশনে দলটি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নামে নির্দলীয় হলেও বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দুই পর্বের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে তৃতীয় দফায় অগ্রসর হয়েছি। অনেকাংশে বিদ্রোহী প্রার্থী বসিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। আজকের নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীরা বেশি জয়লাভ করবেন বলে আশা করছি। তবে ফলাফল যাই হোক, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুষ্ঠু হলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ভালো ফল করবেন।
তবে মন্ত্রীদের কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে, তারা এবারের নির্বাচনও জোর করে নিতে চান। কিন্তু জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মাঠে সেনা, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী : সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে গতকাল থেকে ৮১ উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের আগে ও পরে পাঁচ দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে।
প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনা সদস্য টহল দিচ্ছেন। প্রতি উপজেলায় দুই থেকে তিনটি গাড়ি টহলে থাকবে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। এ ছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছেন। প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), আনসার একজন (অস্ত্রসহ), আনসার ১০ জন (মহিলা-৪, পুরুষ-৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে।
ঝুঁকিপূর্ণ, দ্বীপাঞ্চল, পার্বত্য ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা পুলিশের ক্ষেত্রে দুজন হবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৩২৪ জন নির্বাহী ও ৮১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ : তৃতীয় দফায় ভালো ফলাফলের আশায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দল সমর্থিত প্রার্থীরাই বিজয়ী হবেন এমন প্রত্যাশাই করছে দলটি। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে হোঁচট খাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা।
এবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের বশে এনে দল সমর্থিত একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ বেশির ভাগ জায়গায় সফল হয়েছে। দলীয় সূত্রমতে, ফলাফল যাই হোক তা মেনে নিতে এবং সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, হানাহানি, মারামারির মতো ঘটনা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপজেলা নেতাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত এক শীর্ষ নেতা বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত এড়াতে তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংঘাতকে সমর্থন করি না বলেই শ্রীপুরে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার নির্বাচনের আগে বেশ কয়েক দিন সময় পাওয়ায় সারা দেশে সাংগঠনিক টিম কাজ করেছে।
অনেক উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীকে সরে দাঁড়াতে এবং দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করাতে সক্ষম হয়েছে। যে কারণে এবার ভালো ফল করবে বলে আশা করছেন দলীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। আশা করি দল সমর্থিত প্রার্থীরাই বেশি জয়ী হবেন।
বিএনপি : ভোট কেন্দ্র দখলসহ নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চায় বিএনপি।
এবার আরও সতর্ক দলটি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ভোট কেন্দ্রগুলো পাহারা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল কিংবা স্থানীয় প্রশাসন কোনো অনৈতিক হস্তক্ষেপ করলে তৎক্ষণাৎ তা কেন্দ্রকে জানানোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি গুরুতর হলে দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কোনোভাবেই ভোট বর্জন করা যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নির্বাচনে কারচুপি হলে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, 'কালকের (শনিবার) নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকাগুলোয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব সংবাদমাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
সরকারি দলের সমর্থকদের সন্ত্রাস-সহিংসতা ও ভোট কেন্দ্র দখলের তাণ্ডব চললে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করা হবে। ' জানা গেছে, তৃতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই অনেক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলছেন। বড় ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্টদের ডেকে সমাধান করে দিচ্ছেন। দলের নেতাদের তিনি বলেছেন, যে কোনো মূল্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনে ১৯-দলীয় জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনতে হবে। সূত্রমতে, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াসহ নানা কারণে তৃতীয় ধাপে অর্ধশতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গতকাল পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জু, নেত্রকোনার মদন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের আজাদ এবং অর্থ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দকে বহিষ্কার করা হয়।
জানা গেছে, ৮১ উপজেলায় মোট ১ হাজার ১১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন চেয়ারম্যান পদে ৪১৯, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২৩ এবং সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭৭ জন। মোট ভোটার ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ১৩ জন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।