আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিঙ্কি দের এলেবেলে মৃত্যু

আজ ফেসবুক খুলে একটা স্ট্যাটাস পড়লাম। বক্তব্যের সারাংশ এই যে, ভারতের একটি গ্যাং রেপ নিয়ে পত্রিকায় এতো লেখালেখি হচ্ছে অথচ এদেশের পিঙ্কির আত্ম্যহত্যা এবং দাফন নিয়ে প্রভাবশালীদের বাঁধা দেয়া নিয়ে কোন শিরোনাম নেই। খবর যা এসেছে তাও দায়সারা গোছের। এই বৈষম্য কে তিনি কটাক্ষ করতে চেয়েছেন। বিবেক ঘুমাচ্ছিল।

ডেকে উঠালাম। কারণ দিল্লীর গ্যাংরেপ নিয়ে কিছুদিন আগে আমি নিজেও লিখেছি। সম্ভবতঃ গল্পটা আকর্ষণীয় ছিল বলে। এখনও খবরটা টাটকা আছে, এই নিয়ে লিখেলে এখনও কিছু পাঠক জুটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সম্পাদক সাহেবও লেখাটা ডাস্টবিনে না ফেলে ছেপেছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পিঙ্কিকে নিয়ে কিছু লিখবো কি না? বিবেক সাহেব একটা দায়সারা গোছের ‘হ্যাঁ’ উত্তর দিয়ে আবার ঘুম দিল। আমি পড়লাম সমস্যায়। দিল্লীর ঘটনায় অনেক মশলা ছিল। চলন্ত বাস, ছয়জনের একটি দল, মেডিকেল ছাত্রী, আরও কিছু যাত্রী আছে সেই বাসে, রেপ শেষে রড যৌনাঙ্গে প্রবেশ করিয়ে দেয়া, এরপর নগ্ন করে ফ্লাইওভারে ফেলে দেয়া প্রতিটি কাণ্ডই একেকটি চটকদার মশলা। যেকোনো পত্রিকায় ছাপলে পাঠক গোগ্রাসে গিলবে।

এমন সুযোগ কেউ ছাড়বে না। তাই কেউ ছাড়েও নি। প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় এসেছে। আমি নিজেও একটা আর্টিকেল লিখেছি। পিঙ্কির ব্যাপারে সেই মশলা নেই।

নেহাতই সাধারণ ঘরের অষ্টম শ্রেণীর একটি মেয়ে। চলতি পথে ইভ টিজিং। মাঝে কিছুদিন ইভ টিজিং নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। বিশেষ করে সিমির আত্মহত্যার পরে। তবে এখন ইভ টিজিং ব্যাপারটা বাজার বেশ মন্দা।

অনেকদিন কেউ মরে না। শুধু মরলে হবে না, মৃত্যু টা দারুণ এক্সাইটিং হতে হবে। কিছু বীভৎসতা থাকলে ভালো হয়, যেমন রেপ কিংবা এসিড নিক্ষেপ। পিঙ্কির মৃত্যুর প্যাটার্ন টাও খুব বেশী আকর্ষণীয় না। সেই ইভ টিজার রনি তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল।

পুলিশের হঠাৎ মতিভ্রম হওয়ায় রনি নামক সেই ছেলে ধরা পড়েছে এবং পিঙ্কি উদ্ধার পেয়েছে। রনি এখন জেলে আছে। তাই রনির বোনেরা হুমকি দেয়া শুরু করেছে। হুমকি খুব বড় খবর না, তাই পত্রিকায় আসে নি। হুমকিকে এত সিরিয়াসলি নিয়ে, নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য আত্মহত্যা, তেমন মশলাদার খবর না।

অনেকটাই নীরবে থাকল এই আত্মহত্যা। দেশ এখন বিশ্বজিৎ নিয়ে ব্যাস্ত। বিশ্বজিতের সুরৎহাল, ছাত্রলীগ, বহিষ্কার, শিবিরের ছদ্মবেশ, ষড়যন্ত্র। একই খবর ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে প্রথম পাতায় মশলার সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। এর মাঝে পিঙ্কি আসতোও না।

যদি না এলাকার প্রভাবশালীরা তাঁকে কবর দিতে বাঁধা দিত। প্রভাবশালীদের কেন যেন এই সব কাজে বেশ উৎসাহ পায়। দরিদ্র কোন মহিলার অপরাধ প্রমাণ করা, দোররা মারা কিংবা ঢিল ছুঁড়ে হত্যা করা। দিল্লীর রেপ এর ঘটনা কি বিদেশী ঘটনা বলে এত প্রচার পাচ্ছে? মনে হয় না। কোন দরিদ্র কৃষকের মেয়ে যদি দশ জন শক্তিশালী রেপিস্টের খপ্পরেও পড়তো, তারপরও খুব বেশী আলোড়ন উঠত না।

তবে মেয়েটির বয়স যদি পাঁচ বছর হত, তবে একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকতো। আসলে কিছু একটা মশলা চাই। হয় রেপটি হতে হবে খুবই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির, সঙ্গে খুন কিংবা আরও কোন ভাবে আহত করা। শিশু হলেও গল্প হিসেবে খারাপ না। আসলে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দেখতে দেখেতে কেমন একঘেয়ে অনুভব করছি।

নাড়া দেয়ার মত কোন তথ্য না থাকলে, আমরা নিজেরাই সেই খবর পড়ি না। সম্পাদক সাহেবরাও লাচার, ছাপলে সেই খবর পাঠক পড়বে না। এরপর যদি না ছাপানোর জুন্য কিছু পাওয়া যায়, মন্দ না। আর বড় কিছু পত্রিকা না ছাপলে, সেই খবর ‘বড় খবর’ হয় না। তাই পিঙ্কি দের খবর কখনই খবর হয় না।

পিঙ্কি কে হুমকি দেয়া রনির সেই দুই বোনকে যথারীতি পুলিশ এখনও খুঁজে পায় নি। বোধহয় অপেক্ষায় আছে, কয়দিন শিরোনামে থাকে। যেহেতু খুব বড় খবর হয় নি, মনে হয় না তাঁরা খুঁজে পাবে। রনি হয়তো আরও কিছুদিন চৌদ্দ শিকের পেছনে থাকবে। পরিস্থিতি কিছুটা ঠাণ্ডা হলে লেনদেন নিয়ে হয়তো কথাবার্তা শুরু হবে।

বিকাশের মত হয়তো একদিন সব নিয়ম কানুন মেনে জামিনে ছাড়া পেয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য নতুন হুমকি। পিঙ্কির বাবাও মেনে নেবেন, মেয়েতো চলেই গেছে। মামলা করে তো আর মেয়ে ফেরত আসবে না। বিবেক সাহেব, উঠুন।

একটা আর্টিকেল লিখেছি। পিঙ্কি কে নিয়ে। ভেরী গুড। তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দাও। নতুন কোন ঘটনা ঘটে গেলে আবার সুযোগ পাবে না প্রথম পাতায়।

আর হ্যাঁ, এইসব আনঅ্যাট্রাক্টিভ ডেথ এর জন্য আর আমাকে জাগাবে না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।