শিক্ষা আনে চেতনা , চেতনা ঘটায় বিপ্লব আর বিপ্লব দেয় মুক্তি।
পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের আবির্ভাব কোনও বিস্ময়কর ঘটনা নয়, বরং এটি একটি স্বাভাবিক সত্যর প্রতিষ্ঠা। যে ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক অবাস্তবতার মধ্যে পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তান একত্রিত ছিল, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে সেই অবাস্তবতা চিরকালের জন্য তিরোহিত হলো। এই অঞ্চলের সামাজিক পরিমণ্ডল। ঐতিহাসিক স্মৃতি,নৃতত্ত্বগত অতীত, ভাষা এবং আকাঙ্ক্ষা পাকিস্তান থেকে ভিন্ন ছিল।
কিন্তু তৎসত্ত্বেও ধর্মের নামে একটি অস্বাভাবিক বন্ধন নির্মাণ করা হয়েছিল, যে বন্ধন পঁচিশ বছর পর্যন্ত আমাদের পীড়া দিয়েছে, নির্যাতিত করেছে এবং লাঞ্ছিত করেছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির ফলে এই অঞ্চলের জন্য একটি ভৌগৌলিক স্বাভাবিকতা নির্মিত হয়েছে, ঐতিহাসিক ক্রমধারা অব্যাহত রয়েছে এবং সামাজিক দিগ্বলয় থেকে অপরিচ্ছন্নতা দূর হয়েছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে দেখেছি যে, ধর্মকে রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডে অতিতে বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে। করা হয়েছে শুধু মাত্র বিশেষ গোত্রের শাসন খমতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য। পাকিস্তানি আমলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ধর্মকে তাদের শোষণের অস্ত্ররূপে ব্যবহার করেছিলেন।
মানুষে মানুষে মানুষ হিসেবে যে ঐক্যবন্ধন, যে ঐক্যবন্ধন খুধা তৃষ্ণা আকাঙ্ক্ষার সমতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে সে ঐক্যবন্ধনকে পাকিস্তানী শাসকরা ভয় করতেন। তাই তারা গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন নেতিবাচক ব্যবধানের উপর, যার ফলে একটি বিরোধকে চিরস্থায়ী মূল্যদেবার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে দুই বিরোধী আদর্শের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য শাসনযন্ত্র নির্মাণ করা হয়েছিল। বাঙ্গালীদের পক্ষে আবেগ ভুলে গিয়ে, অনুভূতিকে হারিয়ে এবং আপন অস্তিত্বের শেষ লিপি মুছে দিয়ে শুধু একটি অবধারিত ধর্মীয় নিয়মে পাকিস্তানে সচল থাকা সম্ভবপর হয়নি। তারা প্রতিবাদ করেছে,ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, কখনও-প্রত্যাশায় অপেক্ষা করেছে, কিন্তু আপন দাবী কখনও পরিত্যাগ করেনি।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা বাঙ্গালীরা চিন্তায় ও কর্মজগতে একত্রিত হলাম এবং বাংলাদেশের প্রকৃতি, ঘটনা, ইতিহাস এবং মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে বাস করবার অধিকার দাবী করলাম।
পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী তাদের নিষ্ঠুর শোষণ-নিষ্ঠায়, বিকৃত স্বার্থপরতায় আমাদের দিকে পিছনে ফিরে দাঁড়িয়েছিলো, যার ফলে জীবনের যথা তথ্যকে অস্বীকার করে তারা এক অস্বাভাবিক জীবন নির্মাণ করতে চেয়েছিল, যেখানে জীবনের অঙ্গীকার ছিল না।
বাংলাদেশ প্রতিষ্টিত হয়েছে এবং আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তিও গঠিত হয়েছে। আমরা গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে আমাদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রকে গড়ে তলবার সুযোগ পেয়েছি। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের দেশ শত্রু-কবল মুক্ত হলো, আমরা একটি বিশেষ মুহূর্তকে আবিষ্কার করেছি, যে মুহূর্তে আমরা পুরোনো বন্ধনদশা থেকে নতুন সূর্যোদয়ে উপস্থিত হয়েছি। , যখনএকটি যুগ শেষ হচ্ছে এবং বহুদিন পর্যন্ত রুদ্ধবাক একটি জাতির আত্মা আপন কণ্ঠস্বর খুঁজে পেয়েছে।
আজকের দিনে আমরা দুর্ভাগ্যর সময়সীমা অতিক্রম করে জাতির আত্মা আপন কণ্ঠস্বর খুঁজে পেয়েছে। আজকের দিনে আমরা দুর্ভাগ্যর সময়সীমা অতিক্রম করে নিজেকে আবিস্কার করবো। আজকের উৎসব নতুন পদক্ষেপের উৎসব , নতুন সুযোগের উম্মোচনের উৎসব এবং অপেক্ষমাণ ভবিষ্যতের জয়ের উৎসব।
মুখবন্ধ
সৈয়দ আলী আহসান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।