মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, ধর্মান্ধতা ও দলান্ধতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।
http://www.thenewsbangla24.com থেকে নেয়া।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ : ভারতের ছায়াছবি-গুন্ডে :
যশরাজ ফিল্ম এর ভান্ডামি : আলী আব্বাস জাফরের তথ্য সন্ত্রাস!
প্রবীন আইনজীবী মুজিবুর রহমান মুজিব
(বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বি,এল,এফ কমান্ডার)
চলচ্চিত্র একটি বলিষ্টতম গনমাধ্যম। পাক-ভারত-বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাস প্রাচীন। ঐতিহ্যমন্ডিত।
গৌরব জনক।
ভারতের বোম্বাই,কোলকাতা,মাদ্রাজি চলচ্চিত্র-পথ পরিক্রমা ও পরিক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমে একটি পর্যায়ে এসে পৌছেছে।
বিশেষত: বোম্বাই চলচ্চিত্রের বাজার বিশ্বব্যাপী। চাহিদাও মেটামোটি কম নয়। ভারতের কতেক খ্যাতিমান অভিনেতা,গুনী নির্মমাতার অভিজ্ঞতা-আন্তরিকতা ও মিন্সিয়ানার কারনে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সৌকর্য্য-সৌন্দর্য্য ও অস্বাভাবিক প্রভাব প্রতিপত্তিকে উপেক্ষা করার উপায় নাই।
যদিও বোম্বাই ও মাদ্রাজি মারদাংগা মার্কা ছায়াছবি সমূহ অশ্লীলতা ও যৌনতায় ভরপুর।
উদার আকাশ সংস্কৃতি-স্যাটেলাইট চ্যানেল সমূহের কল্যান ও বদৌলতে যুব সমাজের একাংশ দিশাহারা না হলেও মাতোয়ারা-ত- বটেই।
বিশাল ভারতবর্ষ-বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশি রাষ্ট্র। একাত্তরের পরিক্ষিত বন্ধু, একাত্তার সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারত সরকার-বাংলাদেশের প্রবাসি সরকারকে সাহায্য-সহায়তা করেছেন, সময়মত স্বীকৃতি দিয়েছেন। ভারতের সরকার ও জনগন বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শরনার্থীগনকে আশ্রয় দিয়েছেন।
খাদ্য সরবরাহ করেছেন। বিশ্ববিবেককে জাগ্রত এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বপক্ষে জনতম সংগ্রহের জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী এবং তাঁর সরকার বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক-কুটনৈতিক অভিযান করেছিলেন। বিশ্বজনমতকে অবহিত করতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম পাকিস্তানের আভ্যন্তরীর ব্যাপার নয়। কারন পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল-কায়েমী শাসতগোষ্ঠী বহিবিশ্বে প্রচার করছিরেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলন-সংগ্রাম-লড়াই পাকিস্তানের আভ্যন্তরীর ব্যাপার। অবশ্য পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর অপ-প্রচার ব্যর্থতায় পর্য্যবসিত হয়েছিল, বিশ্ব জনমত বাংলা ও বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের স্বপক্ষে এসেছিল।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে, নিকট প্রতিবেশি ভারতের সরকার ও জনগন কখনের সাহায্য-সহযোগিতা-সহমর্মিতার কথা বাংলাদেশের কোন সরকার ও জনগন কখনও অস্বীকার কিংবা উপেক্ষা করেন নাই।
ভারত বাংলাদেশের মধ্যে-সীমান্ত,ব্যবসা-বানিজ্য-বৈষম্যযুক্ত বানিজ্যনীতি,গংগার পানির ন্যায্য হিস্যা না পেলেও সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ায় ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকলেও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মোটামোটি সুসম্পর্ক বিদ্যমান, দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণ না হলেও একেবারে শীতলও নয়।
এহেন ভারতর্ষের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত একটি চলচ্চিত্র-গুন্ডে-ভারতবর্ষ ও সমগ্র বাংলাদেশর কর্ম-ধর্ম-বয়স-পেশা-নির্বিশেষে সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ভারতের বিখ্যাত প্রযোজনা সংস্থা-যশরাজ ফিল্ম-প্রযোজিত-বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক আলী আব্বাস জাফর পরিচালিত ভারতীয় চলচ্চিত্র-গুন্ডে- বোম্বাই ও কোলকাতায় মুক্তি পাবার পর খোদ কোলকাতায়ই প্রতিবাদের ঝড় উঠে। গুন্ডে কর্তৃপক্ষ কোলকাতায় ছবিটি বাংলায় ডাবিং করে বাংলা ভার্ষন সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহ সমূহে প্রদর্শনের জন্য প্রেরন করেন।
কোলকাতার রানীগঞ্জের প্রতিবাদের ঝড় উঠে। কারন রানীগঞ্জের কয়লা শ্রমিকদের জীবন ও সংস্কৃতিকে এই চলচ্চিত্রে অপমান করা হয়েছে।
বোম্বাই সিনেমা –গুন্ডে- দেখার মত্তকা হয়নি আমাদের। বাংলাদেশী পত্র-পত্রিকায় –গুন্ডে-ছায়াছবির বিরূপ সমালোচনা, প্রতিবাদের ঝড় দেখেছি,পাঠ করেছি,-গুন্ডের- নায়িকা লাস্যময়ী প্রিয়াংকা চোপড়ার উদাম পেট সমেত পোষ্টারও দেখা গেছে পত্রিকায়।
এমনিতেই শর্ট-কাট পোষাক এবং খুল্লাম-খোল্লাই স্বভাবের প্রিয়াংকা চোপড়া বেপরোয়া স্বভাবের চিত্রনায়িকা।
বোম্বাই ফিল্মের মক্ষিরানী প্রিয়াংকা চোপড়া নাভি কিংবা পেট প্রদর্শন আমাদের কৃষ্টি-কালচার-সংস্কৃতি ও বিবেক বোধে আঘাত হানলেও আমাদের কিছু করার নেই কিংবা আমজনতা দর্শকের কিছু যায় আসে না, কিন্তু –গুন্ডে- ছায়াছবিতে ইতহাস বলতে গিয়ে ইতিহাসের যে জঘন্য বিকৃতি ঘটিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের আপামর জনগন নিশ্চুপ-নীরব থাকতে পারে না। প্রতিবাদ জানাতেই হয়।
বাংলাদেশের ফেলানীরা অসহায়ের মত ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স(বিএসএফ) এর হাতে নীরবে জান দিতে পারে, ন্যায় বিচার না পেতে পারে কিন্তু মান দেবে না, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-অখন্ডতা-সংহতি-ইতিহাস-ঐতিহ্যের অপমান-অবমাননা হলে এক বিন্দু ছাড় দেবে না, বরদাশত করা হবে না। অভিবক্ত ভারতবর্ষেই চলচ্চিত্র এ শিল্প সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু-প্রান-কেন্দ্র ছিল বর্তমান ভারতে।
ফলত: ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের পরিচালক-প্রযোজক-নায়ক-নায়িকা-কলাকুশলীগন অপেক্ষাকৃত প্রবীন, অভিজ্ঞ ও পারঙ্গম।
সময় ও সুযোগ মত ভারতীয় দাদারা-দাদাগিরী দেখাতে কার্পন্য করেন না। ভারতীয় সিভিল সার্ভেন্টদের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। আই,সি,এস-আই,পি,এস অফিসারদের নামডাক ও অনেক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সারা ভারতে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় ছায়াছবি –গুন্ডে- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তাদের মুর্খতার পরিচয় দিয়েছে।
আলী আব্বাস জাফর পরিচালিত যশরাজ ফিল্ম এর –গুন্ডে- ছায়াছবিতে শুরুতেই ইরফান খান এর কন্ঠে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়- ১৬ই ডিসেশ্বর ১৯৭১।
শেষ হল ভারত পাকিস্তানের তৃতীয় যুদ্ধ। প্রায় নব্বই হাজার পাকিস্তানী সৈন্য সেদিন আত্মসমর্পন করে ভারতীয় সেনা বাহিনীর কাছে। এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পন। এই যুদ্ধের ফলে জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ, বাংলাদেশ।
এই বর্ণনা ও ঘোষনার মাধ্যমে ভারতীয় ছায়াছবি-গুন্ডে- কর্তৃপক্ষ চরম মুর্খতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তি বাহিনী ও জনগনের সঙ্গে চুড়ান্ত বেয়াদবি করেছেন।
শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষা প্রার্থনা করলেই এই ধর্তব্য অপরাদ ও বেয়াদবির ক্ষমা পাওয়া যায় না, এই অমার্জনীয় অপরাধের বিষয়টি শেষও নিষ্পত্তি হয় না।
বলা হয়ে থাকে কিছু ব্যতিক্রমবাদে চলচ্চিত্র শিল্পের নির্মমাতাগন তাদের উর্বর মস্তিস্ককে অধিকতর সচল ও চালু রাখার জন্য দেশী-বিদেশী রঙ্গীন পানীয় পান করে থাকেন। ক্ষেত্র বিশেষ ভাং-গাজা জাতীয় “ড্রাই ড্রাগ” ও সেবন করেন। শোনা যায় এসব ড্রাই ও লিকুইড মাল-ইস্তেমাল করলে নাকি মুড আসে, আর এসব মুডি নির্মাতাগন শূন্যমার্গে বিচরন করে ভাব ও আবেগ আল্ধুত হয়ে অভিনব শিল্পকর্ম উপহার দেন। -গুন্ড- ছায়াছবির শূন্যমার্গে বিচরনকারি নির্মাতাগন টাল-মাটাল হয়ে হয়ত এই অভিনব ও আজব চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলন, কিন্তু বাংলাদেশি দর্শক-জনতা- আশ্চার্য্য হয়ে যান-বাস্তবতা বিবর্জিত-বস্তাপচা সস্তা কাহিনীর মানহীন-গুন্ডে- ছায়াছবি ভারতের ফিল্প সেন্সর বোর্ড এর ছাড়পত্র পায় কি ভাবে?
বলাই বাহুল্য মাত্র একটি চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র প্রদান করেন সে দেশের ফিল্প সেন্সর বোর্ড।
ফিল্প সেন্সর বোর্ড সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের পদসহ কর্মকর্তা সমন্নয়ে বিভিন্ন কর্ম পেশার নেতৃত্বস্থানীয় প্রতিনিধিত্ব মুলক ব্যক্তিত্ববর্গের সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী সংস্থা। সংস্থাটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্নও বটে। শোনা যায় অসৎ চলচ্চিত্র নির্মমাতাগন সেন্সর বোর্ড এর ছাড়পত্র পাবার পর কৌশলে অসৎ উপায়ৈ কাটপিসের সমন্বয় ঘটান। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের এককালিন সচিব, বিসিএস, কর্তব্যে অসম্ভব রকমের সৎ ও কর্তব্যনিষ্ট কর্মকর্তা-বন্ধুব’র এম,এ,রউফ মারপত অবহিত হয়েছিলাম অসৎ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে আপোষ না করার কারনে চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তাঁকে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। মামলা-মোকদ্দমার বিবাদী হয়ে অবসর গ্রহন করতে হয়েছে।
ভারতীয় চলচ্চিত্র সোন্সর বোর্ড যে দায়িত্ব জ্ঞআনহীনতার পরিচয় দিয়ে-গুন্ডে-র মত একটি অসত্য ও মিথ্যার বেসাতি সম্বলিত চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র দিয়েছেন যা অমার্জনীয় অপরাধ।
বাংলাদেশের বীর মুক্তিবাহিনী ও মহান স্বাধিনতা সংগ্রাম প্রসংঙ্গে মিথ্যার বেসারতি ও তথ্য সন্ত্রাস করার অধিকার কারো নাই। যশরাজ ফিল্প একটি বেসরকারি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারি কোন কর্তৃত্ব নেই, কিন্তু সেন্সর বোর্ড সরকারের নিয়ম-নীতি মানা সম্বলিত একটি দায়িত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, শিক্ষিত-জ্ঞআনী-গুনীজনদের প্রতিষ্ঠান। একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গবেট গন্ডমুর্খ,ডিগ্রীহীন,মালিক-মুর্খতায় থাকতে পারেন, একজন পরিচালকের বেলায়ও সে কথাই প্রযোজ্য কিন্তু একটি ফিল্স সেন্সর বোর্ড-এ- সে সুযোগ নেই।
-গুন্ডে- কে ভারতীয় ফিল্প সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিয়ে যে অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন তার ক্ষা নেই, কোন যুক্তি নেই।
যশরাজ ফিল্মস ও গুন্ডের ভন্ড পরিচালক আলী আব্বাস জাফরের জানা না থাকলেও অথবা জেনে থাকলে না জানার ভান করলেও ভারতীয় ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের অভিজ্ঞ সদস্য বিশেষত কর্মকর্তা সদস্যদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনদানের গৌরবময় কথা গ কাহিনী অজানা থাকার কথা নয়, সরকারি অভিজ্ঞ আমলাদের জেনে না জানার ভান করারও কোন উপায় নেই।
অথচ প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম একাক্তর সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্য সীমাবদ্ধ ছিল না। একটি নিরবিচ্ছিন্ন-ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফল ও ফসর একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।