ভাসমান ভালোবাসা
মাস দেড়েক আগের কথা। অফিস শেষ করে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম, ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছিল। ফুটপাত ধরে হাঁটছিলাম । ঢাকার রাজপথ দেখে মনে হচ্ছে না রাত্রি হয়েছে বরং রাতের ঢাকা শহর যেন লাস্যময়ী তরুণীর মতো হয়ে ওঠে । ব্যাস্ত রাস্তা বিপণি বিতান গুলো আলোর ঢিবি জ্বেলে রেখেছে।
রাস্তা জ্যাম করে চলছে বাস, রিক্সা, প্রাইভেট কার, এ্যাম্বুলেন্স । হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম গ্রামের বাড়ির কথা, সেই মফঃস্বলের কথা যেখানে পড়াশোনা করেছি, সেখানকার রাতগুলোর সাথে এই ঢাকার রাত মেলাচ্ছিলাম। ঠিক তখুনি গাড়ির হর্নের আওয়াজ মানুষের কথার আওয়াজের সাথেই একটি আওয়াজ কানে ভেসে এলো “বাজান পিঠা খাইয়া যাও” । শাড়ি পরহিত মধ্য বয়স্ক এক মহিলা রাস্তার পাশে চিতই পিঠা ভেজে বিক্রি করছে। একটা কাঠের বক্সের উপর পিঠা ভেজে রেখেছে।
সামনে একটা খালি কাঠের বেঞ্চ । এগিয়ে গিয়ে বসলাম । ধনিয়া-মরিচের ভর্তা দিয়ে দুটো পিঠা খেলাম। পিঠা খেতে খুবই ভালো লাগলো আরও ভালো লাগলো মহিলার মুখে বাজান ডাকটা। না, আমার মা আমাকে বাজান বলে ডাকেন না।
কিন্তু, যান্ত্রিক এই শহরে যন্ত্র মানবের মদ্ধে যে মাতৃহৃদয় থাকে সেখান থেকেই হয়ত মহিলা আমাকে ডেকেছিল। খালা বলে সম্বোধন করে টুক টাক কথা বললাম মহিলা কোথায় থাকে, পরিবারে আর কে কে আছে, দিনে কত টাকা আয় হয় এই সব আর কি। তারপর আরও কয়েকদিন ওই দোকান থেকে পিঠা খেয়েছি।
শহরে এখন T-20 বিশ্বকাপ চলছে তাই রাস্তার পাশ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে হকার আর ভাসমান দোকানদারদের। ওই পিঠা বিক্রেতা খালাও উচ্ছেদ হয়ছে, রাস্তার পাশে তাঁকে আর খুঁজে পাই নি।
ভাসতে ভাসতে কোথাও চলে গেছে হয়তো , এরা তো ভাসমান! শুধু ভাসমান নয় এদের মাতৃহৃদয়, যে হৃদয় কখনও ভেসে যায় না। আলোকিত সাজানো গোছানো শহরে এরা স্থায়ী হয় না কোথাও, স্থায়ী হয় কিছু কিছু সন্তানের মনে...। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।