রাজধানী থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত জাতীয় এ উদ্যান থেকে দিনে দিনেই বেড়িয়ে আসা সম্ভব।
সাতছড়ি’র অর্থ সাতটি ছড়া। পাহাড়ে ছড়ার অর্থ ঝরনা। এসব পানির ধারার কিছু কিছু এখনও দেখা মেলে। প্রায় ২৪৩ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত সাতছড়ি জঙ্গল রঘুনন্দন পার্বত্য বনভূমির অংশ।
বনের প্রাচীন ইতিহাস হচ্ছে, জুম চাষ করতে করতে এক সময় রঘুনন্দন পাহাড়ের বনভূমি শেষ হয়ে যায়। পরে ১৯০০ সালের দিকে কাঠ উৎপাদনের জন্য প্রচুর গাছ লাগান হয়। ১৯১৪ সালে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে খাতায় নাম লেখায় এই পাহাড়ি এলাকা।
২০০৫ সালে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা নিয়ে জাতীয় এ উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেন পাখির রাজ্য।
প্রায় ১৯৭ প্রজাতির জীবের বসবাস। এর মধ্যে ১৪৯ প্রজাতিই পাখি। এছাড়া ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণীর সন্ধান মিলেছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে।
বনের উল্লেখযোগ্য পাখি হল ফিঙ্গে, কাঠ ঠোকরা, মথুরা, বন মোরগ, ধনেশ, লাল ট্রগন, পেঁচা, সুই চোরা ইত্যাদি। প্রাণীদের মধ্যে আছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, লজ্জ্বাবতী বানর, কুলু বানর, মায়া হরিণ, খিদির শুকর, বন্য শুকর, বেজি, গন্ধ গোকুল, বনবিড়াল, মেছো বাঘ, কটকটি ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, গিরগিটি, বিভিন্ন রকম সাপ, গুইসাপ প্রভৃতি।
পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ৩টি হাঁটা পথ আছে। একটি আধা ঘন্টার, আরেকটি এক ঘন্টার এবং অন্যটি তিন ঘন্টার পথ।
আধা ঘন্টা হাঁটা পথের শুরু সাতছড়ি রেঞ্জ কার্যালয়ের প্রবেশ মুখে। প্রধান রাস্তার পাশে ‘ওয়াইল্ডারনেস এরিয়া’ চিহ্নিত সড়কের দক্ষিণ দিক থেকে এ পথের শুরু। চক্রাকারে ঘুরে আবার একই জায়গায় এসে পথের শেষ হয়েছে।
প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথে একটি মরা শুকনা নদী অতিক্রম করা ছাড়া বাকি পথ ঘাসে ঢাকা।
এ পথেই রয়েছে সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে একমাত্র ত্রিপুরা বা টিপরা আদিবাসীপাড়া।
এই আধা ঘন্টার পথের শুরুতে ডান দিকের প্রথম বাঁক ঘুরলেই চলে যাওয়া যায় টিপরা পাড়ায়। আর বাঁক না ঘুরে আরও কিছুটা পথ এগিয়ে দ্বিতীয় বাঁক ঘুরলেই এক ঘন্টার পথের শুরু।
একটু সকালের দিকে গেলে এ পথে দেখা মিলতে পারে উল্লুকের মতো বিপন্ন প্রাণী।
তবে সেজন্য থাকতে হবে চুপচাপ।
তিন ঘন্টার হাঁটা পথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ কিলোমিটার। অন্য দু’পথের পাশ থেকেই এর শুরু। আর পূর্ব দিকের চাকলাপুঞ্জি চা বাগানের কাছাকাছি প্রধান সড়কে এসে শেষ হয়েছে।
শুকিয়ে যাওয়া পানির ধারা থেকে তৈরি হয়েছে বেশিরভাগ পথ।
উল্লুক, চশমা হনুমান, মুখপোড়া হনুমানসহ নানান রকম পাখির দেখা মিলতে পারে এ পথে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে যে টিপরা পাড়াটি আছে সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ২৪টি পরিবারের বসবাস। বনে ঘুরতে ঘুরতে বেড়িয়ে আসতে পারেন টিপরা পাড়া থেকে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক জনপ্রতি ২০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ছাত্র জনপ্রতি ১০ টাকা। বিদেশীদের জন্য ৫ আমেরিকান ডলারের সমমূল্যের টাকা।
উদ্যানের বনভোজন কেন্দ্র ব্যবহার করতে চাইলে জনপ্রতি খরচ ১০ টাকা। এছাড়া গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাস পার্কিং ২৫ টাকা।
উদ্যানের নির্ধারিত গাইড সেবার খরচ প্রতি ঘন্টায় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
যেভাবে যাবেনঢাকা থেকে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল সিলেটগামী যে কোনও বাসে মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে সেখান থেকে বাস কিংবা ম্যাক্সিতে সাতছড়ি।
এছাড়া ঢাকা থেকে রেল ও সড়কপথে হবিগঞ্জ গিয়ে সেখান থেকেও সাতছড়ি যাওয়া যায়।
ট্রেনে হবিগঞ্জ যেতে হলে নামতে হবে সায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন। এখান থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার।
ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস।
শ্রেণীভেদে ভাড়া ১০০ থেকে ৬৭৩ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১২৫ থেকে ৮৫৭ টাকা।
এছাড়া ঢাকার সায়দাবাদ থেকে অগ্রদূত পরিবহন, দিগন্ত পরিবহন ও বিছমিল্লাহ পরিবহন সরাসরি হবিগঞ্জ যায়।
ভাড়া এসি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
যেখানে থাকবেনঢাকা থেকে দিনে দিনেই সাতছড়ি বেড়িয়ে আসা সম্ভব। তবে ভালোভাবে সাতছড়ি দেখতে চাইলে দু’তিন দিন প্রয়োজন।
সাতছড়ি জঙ্গলে বনবিভাগের একটি বিশ্রামাগার আছে। বনবিভাগের অনুমতি নিতে পারলে সেখানে থাকা সম্ভব।
নইলে রাতে থাকতে হবে হবিগঞ্জ শহরে।
এ শহরে কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল আছে। সেগুলো হল হোটেল আমাদ, হোটেল সোনার তরী, হোটেল জামিল।
৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় দু’জনের থাকার মতো রুম পাওয়া যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।