আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই দস্যুরা একবার সফল হলে বারবার এধরনের দুষ্কর্ম করার সাহস পাবে

জনারণ্যে নির্জনতায় আক্রান্ত। নির্জনতাই বেশী পছন্দ, নিজের ভেতরে ডুবে থাকতেই ভাল লাগে। কিছুটা নার্সিসিস্টও। দেশীয় বাজারে ইলিশ মাছের দাম সহনীয় রাখার্থে সরকারী সিদ্ধান্তে বিদেশে ইলিশ মাছ রপ্তানী বন্ধ করা হয়েছিলো। তাছাড়া দেখা গেছে ইলিশের দাম সহনীয় থাকলে অন্যমাছের দামও তুলনামুলকভাবে জনগনের হাতের নাগালে থাকে।

কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে ব্যর্থ করে দিতে অনৈতিক ও অসাধু কৌশল নিয়েছে ইলিশ রপ্তানীকারকরা। তারা গত কয়েকমাসে এক হাজার মেট্রিকটনেরও বেশী ইলিশ মজুত করেছে। এখন সরকারের উচ্চপর্যায়ে এই মাছ নষ্ট হয়ে যাবার ভয় দেখিয়ে বিদেশে রপ্তানীর তদবির করছে। আজকের পত্রিকার একটি নিউজ Click This Link দেখে নিজেকে সংযত রাখতে পারলাম না। তাই আমার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া দেখাতেই ব্লগে বসা।

এই দুস্কর্ম করে একবার যদি তারা সফল হয় তাহলে বারবার একই কাজ তারা করবে। প্রতিটি সেক্টরে যদি এরকম করা শুরু হয় তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্র সবকিছুর উপর তার নিয়ন্ত্রন হারাবে। তাদের এই কাজ দেশের মানুষের স্বার্থে নেয়া সরকারী সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোরই আরেক নাম। মুনাফালোভী ব্যবসায়ী(!)দের এই কর্মকান্ড মজুতদারী ও কালোবাজারী ও চোরাচালানেরই সমার্থক। এই অসাধু ব্যাবসায়ীদের কৌশল কোনভাবেই সফল হতে দিতে শুভ ও বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমরা পারি না।

এভাবেই সরকারের অনেক সিদ্ধা্ন্তের সুফল সাধারন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর আগেই হাইজ্যাক হয়ে যায়। আমাদের সমাজে এ্ই অসাধু, সুযোগসন্ধানীদের জয়জয়কার হতে কোনভাবেই পারে না। এসমাজ তা না হলে দিনদিন শ্বাপদসংকুল হয়ে উঠবে, সাধারন এবং বিবেকসম্পন্ন মানুষরা সমাজ থেকে হারিয়ে যাবে। রপ্তানীর সুযোগে দেশের বাজারে ইলিশ দুর্মু্ল্য হয়ে যাওয়ায় বানিজ্য মন্ত্রণালয় বাস্তবতা বিবেচনায় গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ তারিখে বিদেশে ইলিশ মাছ রপ্তানী নিষিদ্ধ করে দেয়। তখন এর সুফল ইলিশ মাছ ছাড়িয়ে সাধারন মাছের বাজারেও পড়ে ।

সরকারের সিন্ধান্তের ফলশ্রুতিতে অন্যমাছের দামও আগের তুলনায় সহনীয় হয়ে উঠে। "মাছে ভাতে বাঙ্গালী" এই প্রবাদ বাক্য এখন বাঙ্গালী ভুলতে বসেছে। নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়া, নতুন নতুন ব্রিজ-কালভার্ট নির্মান, পোকা-মাকড় নিধনে কিটনাশক ব্যবহারের কারনে এমনিতেই আমাদের মাছের প্রাচুর্য্য নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মৎস্যচাষে এসে ঠেকেছে। মিঠাপানির মাছ বলতে এখন আমরা নিয়ন্ত্রিতপরিবেশের চাষ করা মাছকেই বুঝি। আর প্রাকৃতিক পরিবেশের মাছ বলতে সামুদ্রিক মাছই এখন সম্বল।

একসময় আমাদের সিংহভাগ মাছের যোগান আসতো মিঠাপানির প্রাকৃতিক উৎস থেকে। আর এখন যেটা যোগান দেয় সামুদ্রিক মাছ। আর সেই সামুদ্রিক মাছের সিংহভাগই ইলিশ। ইলিশ মুলত সামুদ্রিক মাছ। যদিও প্রজনন মৌসুমে নদীতে আসার কারনে এমাছ ধরা পড়ে।

একদা নদী থেকে সংগ্রহ করা ইলিশ এখন আর নদীতে তেমন পাওয়া যায়না। নদীর দুষনের কারনে আগের মত আর ইলিশ নদীতে আসে না। বাংলাদেশের অগভীর সমুদ্র অঞ্চল থেকেই বর্তমানে ইলিশ মাছ শিকার করা হয়। এই ইলিশ আজ থেকে ১৫ বছর আগেও সমাজের প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষের মাছ হিসেবে পরিগনিত হতো। সমাজের উঁচু শ্রেনী এমাছ নিয়ে নাকসিঁটকানো অবস্থায় ছিলো।

কিন্তু ১ যুগের ব্যবধানে এখন গনেশ উল্টে গিয়ে ইলিশ এলিট শ্রেনীর মাছে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। অন্য প্রাকৃতিক মাছের যোগান কমে যাওয়া এবং বৈধ ও অবৈধ উপায়ে ইলিশ দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। প্রান্তিক মানুষতো দুরের কথা সমাজের মধ্যবিত্তরাও এখন ইলিশ মাছ কেনার ক্ষমতা রাখে না। প্রতিদিন একজন কর্মক্ষম মানুষের ২৫০০ কিলো ক্যালরি খাবার দরকার; কিন্তু আমাদের দেশে একজন সাধারণ মানুষ গড়ে খাবার পাচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ কিলো ক্যালরিরও কম। এই খাবারের মধ্যে প্রাণিজ খাদ্যে থাকা প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ ১০০ গ্রাম অর্থাৎ প্রায় ৫০০ কিলো ক্যালরি।

তবে আমাদের দেশের বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ প্রোটিন সংগ্রহ করে মাছ থেকে। কারন গরুর মাংস বা মুরগীর মূল্য সিংহভাগ মানুষেরই নাগালের বাইরে, তাই মাছই তাদের ভরষা। সমাজের উচ্চশ্রেনীর কিছু ব্যাতিক্রমবাদে বর্তমান বাংলাদেশে মাছ বা মাংশের অপর্যাপ্ততার কারনে মানুষের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। এ থেকে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ ঘাটতির কারণে শারিরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মানুষ সহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, এর প্রভাব পড়বে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে, যেটা ভয়ংকর হতে বাধ্য। তাছাড়া আমাদের দেশে খাদ্যাভ্যাষজনিত কারনে মানুষ প্রোটিন কম ও কার্বোহাইড্রেট (ভাত, রুটি ইত্যাদি) বেশি খায়। বর্তমানে প্রোটিন আরো কম খাওয়ার ফলে কার্বোহাইড্রেটের ওপর চাপ বেড়েছে। এতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কাও রয়েছে।

কিন্তু এপরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি। সরকারী-বেসরকারী অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতেই এপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানতেই হবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন আছে, তাই বলে দেশের মানুষকে পুষ্টি ঘাটতির মুখে ফেলে কোনভাবেই নয়। ১৬ কোটি মানুষের পুষ্টিচাহিদা মিটিয়েই তারপর অন্যকোন চিন্তা। কারন পুষ্টিহীন, শারিরিক ও মানষিকভাবে অপুর্ন একটা জাতি কোনভাবেই দেশটাকে সামনের দিকে নিতে পারে না।

আজ সময় এসেছে এই দেশ থেকে কোন ধরনের মাছ, মাংশ বা খাদ্যশস্য বিদেশে রপ্তানী নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার। গত জুলাই মাসে ব্যাবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সুপারিষেই ইলিশ ছাড়া অন্যমাছ রপ্তানীর উপর নিষেধাজ্ঞা সরকার তুলে নেয়। সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে ব্যবহার করে একটি ভাল উদ্যোগকে কিভাবে ব্যর্থ করে দেয়া যায় সেটা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হলো। মাছ রপ্তানীর লবিয়িষ্টরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, শুভবুদ্ধির ও শুভচিন্তার জয় আমাদের হবেই হবে। আমাদের দাবী মজুতকৃত ইলিশ আটক করে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

সরকার দেশের সাধারন মানুষের জন্য যেসিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তাদের কাছে এবার্তা পৌছে দিতে হবে, এদেশে জনগনের জন্য , জনগনের দ্বারা নির্বাচিত একটা সরকার আছে। আর সবধরনের মজুতদারদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে, তারাই সব নয় বা তাদের জন্য্ই সব নয়। সাধারন মানুষের স্বার্থই সব কিছুর আগে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।