দেশের হালনাগাদ শিল্পোৎপাদনের তথ্য জানা যাচ্ছে না। কোয়ান্টাম ইনডেক্স অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রডাকশনের (কিউআইপি) মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতি মাসে শিল্প উৎপাদনের পরিস্থিতি প্রকাশ করে। কিন্তু চার মাস ধরে শিল্পোৎপাদনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
সর্বশেষ অক্টোবর মাসের এই সূচক প্রকাশ করেছে বিবিএস। পরবর্তী কোনো মাসের সূচক প্রকাশ করা হয়নি।
নিয়মানুযায়ী প্রতি মাসে এই সূচক বিবিএসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা।
বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে ৯৬৫টি শিল্প-কারখানার কাছ থেকে উৎপাদন তথ্য নিয়ে এই সূচক প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতি মাসেই এতগুলো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিত তথ্য পাওয়া যায় না। তাই নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে কিউআইপি প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, মাঠপর্যায় থেকে উৎপাদন তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে সূচক প্রকাশ করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সমিতিগুলোর কাছ থেকে উৎপাদন তথ্য পেতেও যথেষ্ট সময় লাগে। নিয়মিতভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উৎপাদনের তথ্যও পাওয়া যায় না। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা অনেক সময় তথ্য দিতে অনাগ্রহ দেখান।
বর্তমানে ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে শিল্পোৎপাদন সূচক প্রকাশ করা হচ্ছে।
নতুন ভিত্তিবছরে ভারের (ওয়েট) পরিবর্তন হয়েছে। কেননা আগে ১৯৮৮-৮৯ ভিত্তিবছর ধরে শিল্পোৎপাদন সূচক প্রকাশ করা হতো। কিন্তু গত দুই দশকে শিল্প খাতের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।
জানা গেছে, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক উৎপাদনের সবচেয়ে বেশি ৩৪ দশমিক ৮৪ ভার রয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ১০০ একক শিল্পপণ্য উৎপাদিত হলে প্রায় ৩৫ এককই রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক।
আর এই শিল্প খাতটি পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মালিকানায় পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি মাসেই বিবিএসের মাঠপর্যায়ের কারখানা উৎপাদন তথ্য নিয়ে সূচকটি প্রকাশ করার কথা। কিন্তু নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হয়তো উৎপাদনের প্রকৃত চিত্র বিবিএস সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই হয়তো বিবিএস এই সূচকটি হালনাগাদ করতে পারছে না। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শিল্প উৎপাদন নিশ্চিতভাবেই কম হয়েছে।
সর্বশেষ চিত্র
হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই শিল্প উৎপাদনের গতিময়তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রতিফলন ঘটেছে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প, খনিজ শিল্প এবং বিদ্যুৎ খাতের পরিমাণ সূচকে (যা কোয়ান্টাম সূচক নামে পরিচিত)।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) প্রস্তুতকারী শিল্পের (ম্যানুফ্যাকচারিং) সূচক নেমেছে। সর্বশেষ অক্টোবর উৎপাদন শিল্পের সূচক হয়েছে ১৯১ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট।
এই সূচকটি জুলাই মাসে ছিল ২৩২ পয়েন্ট।
তবে আগস্ট মাসে ব্যাপকভাবে কমে নেমে আসে ১৮৫ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে। সেপ্টেম্বর মাসে তা আবার বেড়ে হয় ২০৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে। ফলে এই প্রথম চার মাসে প্রস্তুতকারী শিল্পের গতিময়তা থাকলেও তা বেশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
বিবিএসের উপাত্ত থেকে আরও দেখা যায় যে আলোচ্য সময়কালে বিদ্যুৎ উৎপাদনও সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবরে কিছুটা কমেছে। একই রকম প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় খনিজ শিল্প খাতে।
এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে অক্টোবরে বেসরকারি খাতে সিমেন্ট, লোহা ও স্টিল, ওষুধের উৎপাদন কমেছে। আর সরকারি খাতের সার ও পাটজাত বস্ত্রের উৎপাদনও কমেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।