নন্দা যে যুগে চলচ্চিত্রে আসেন সেই যুগটিই ছিল রোমান্টিকতা ও গ্ল্যামারের। সে সময় যে মানবীরা হয়ে উঠেছিলেন দর্শকদের হৃদয়ে আধুনিক স্বপ্নকন্যা, তাদের মধ্যে ছিলেন ওয়াহিদা রহমান, আশা পারেখ, নন্দা, সাধনা, সায়রা বানু।
নন্দার বিপরীতে পর্দায় রোমান্স করেছেন শশী কাপুর, দেবানন্দ, মনোজ কুমার, রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্রর মতো জনপ্রিয় নায়ক। তাদের সঙ্গে জুটি বেঁধে নন্দা উপহার দিয়েছেন অনেক হিট সিনেমা।
নন্দার জন্ম ১৯৩৯ সালের ৮ জানুয়ারি কোলাপুরে এক মারাঠি পরিবারে।
তাদের পরিবারের অনেকেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাস্টার ভিনায়ক নামে পরিচিত তার বাবা ভিনায়ক দামোদর কামাটাকি ছিলেন মারাঠি চলচ্চিত্রের নামকরা অভিনেতা-পরিচালক- প্রযোজক। তবে শৈশবেই বাবাকে হারান নন্দা। ‘বেবি নন্দা’ নামে সিনেমায় অভিনয় শুরু করতে হয় তাকে পরিবারের উপার্জন বাড়ানোর জন্য।
১৯৪৮ সালে ‘মন্দির’ সিনেমায় শিশু শিল্পী হিসেবে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়।
এরপর ‘জাগ্গু’, ‘জাগৃতি’, ‘আংগারে’, ‘জগৎ গুরু শঙ্করাচার্য’-র মতো সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন।
বলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক-অভিনেতা-প্রযোজক ভি. শান্তারাম ছিলেন নন্দার আত্মীয়। ফলে চলচ্চিত্রে প্রবেশের পথটা নন্দার জন্য সহজ হয়েছিল। এল. ভি. প্রসাদের ‘ছোটি বাহেন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৫৯ সালে নায়িকা নন্দার আত্মপ্রকাশ ঘটে। সিনেমাটি সুপারহিট হওয়ায় তার কদর বেড়ে যায় পরিচালকদের কাছে।
নায়ক-পরিচালক-প্রযোজক দেবানন্দের হিট ছবি ‘হাম দোনো’তে নায়িকা হওয়ায় রোমান্টিক ইমেজে আবির্ভূত হন তিনি। তবে নন্দার মূল জনপ্রিয়তা ছিল পারিবারিক সিনেমায়। পাশের বাড়ির মিষ্টি মেয়েটি, যে হয়তো কারও ননদ, ছোটোবোন, ভাবী কিংবা সহজ-সরল প্রেমিকা এবং একই সঙ্গে আধুনিক-- এমন চরিত্রেই মানানসই ছিলেন তিনি।
বি আর চোপড়ার ‘কানুন’ সিনেমায় নায়িকা ছিলেন তিনি।
১৯৬০ সালে ‘আঁচল’ ছবিতে অভিনয় করে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেন নন্দা।
এটিই তার জীবনের একমাত্র উল্লেখযোগ্য পুরস্কার।
তিনি সেরা অভিনেত্রী ও পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পাঁচবার মনোনয়ন পেয়েছেন কিন্তু আর কোনো পুরস্কার পাননি। অথচ তিনি ছিলেন ষাটের দশকের প্রথম সারির নায়িকা।
১৯৬৫ সালে তার অভিনীত ‘গুমনাম’ ছিল সুপারহিট।
নতুন নায়কদের জন্য তিনি ছিলেন খুব ‘লাকি’।
নন্দা অনেক নতুন নায়কের জন্য সুপারিশ করেছেন, যাদের অনেকেই পরবর্তিতে হিট নায়ক হয়েছেন। শশী কাপুর, রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্রর মতো সুপার স্টারও এই তালিকায় আছেন।
১৯৬৫ সালেই ‘যব যব ফুল খিলে’ সিনেমায় পারিবারের মিষ্টি মেয়ের ইমেজ ঝেড়ে ফেলে আধুনিক গ্লামার গার্লের ভ‚মিকায় আসেন নন্দা। থ্রিলার ‘ট্রেইন’ ছবিতে রাজেশের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন নন্দা। তিনিই এ সিনেমার নায়ক হিসেবে রাজেশ খান্নার নাম প্রস্তাব করেছিলেন প্রযোজক রাজেন্দ্র কুমারের কাছে।
কারণ এর আগে ১৯৬৯ সালে সুপারহিট থ্রিলার ‘ইত্তেফাক’ এ নন্দা-রাজেশ জুটি হিসেবে কাজ করলেও রাজেশ খান্না তখনও ছিলেন নবাগত। ‘ইত্তেফাক’ সিনেমায় নন্দার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়। তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে নমিনেশনও পান। কিন্তু পুরস্কার পাননি।
১৯৭২ সালে রাজেশ খান্না-নন্দা অভিনীত ‘জরু কা গোলাম’ও সুপারহিট হয়।
সিনেমাটি ছিল দারুণ হাসির। ভিম সিংয়ের পরিচালনায় ওম প্রকাশ, রাজেশ খান্না ও নন্দা নির্মল পারিবারিক বিনোদন উপহার দেন দর্শককে।
সত্তর দশকে নন্দা মূলত পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন। কখনও মা, কখনও ভাবীর ভূমিকায় তাকে দেখা গেছে। ঋষি কাপুর-পদ্মিনী কোলাপুরী অভিনীত হিট সিনেমা ‘প্রেমরোগ’-এ মায়ের ভ‚মিকায় অভিনয় করে ফিল্ম ফেয়ারে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়নও পেয়েছিলেন নন্দা।
কিন্তু এবারও পুরস্কার পাননি।
সুন্দরী ও বন্ধুসুলভ ব্যবহারের জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয়তা পেলেও কখনও প্রেমের সম্পর্কে কারও সঙ্গে জড়াননি নন্দা।
পরিচালক সুরজ প্রকাশ তার এক স্মৃতিচারণে বলেছিলেন এক সুদর্শন মারাঠি সামরিক অফিসার নন্দার প্রেমে পড়েছিলেন এবং প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা করতে শুটিং সেটে আসতেন। কিন্তু তার সঙ্গে বিয়ে হয়নি নন্দার।
বান্ধবী ওয়াহিদা রহমানের ঘটকালিতে ১৯৯২ সালে ৫৩ বছর বয়সে পরিচালক মনমোহন দেশাইয়ের সঙ্গে বাগদান হয় নন্দার।
কিন্তু মনমোহন দেশাই দুর্ঘটনাক্রমে ছাদ থেকে পড়ে মারা যাওয়ায় বিয়ে আর করা হয়নি নন্দার।
নব্বই দশক পর্যন্ত কিছু কিছু সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেও পরবর্তীতে পুরোপুরি অবসর জীবনে চলে যান তিনি।
২৫ মার্চ হার্ট অ্যাটাকে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ওয়াহিদা রহমান, হেলেন, আশা পারেখ এরাই ছিলেন তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী। তবে কারও কাছেই তেমন কোনো গভীর বেদনার কথাও বলেননি।
নীরব অভিমানেই যেন চলে গেলেন এক সময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।