সাগরের বাবা-মা লালমনিরহাট দাদুবাড়ি গেছেন, আজ আসবেন। সাগরের দাদা বেঁচে নেই, দাদি আছেন। আর আছেন দাদার ছোট ভাই। যিনি সাগরদের বাসায়ই থাকেন। সাগর ও সাগরের ছোট বোন ঝিলের পছন্দের দাদু।
দাদা মারা যাবার পর সাগরের বাবাই ছোট চাচাকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসেন। নিজের মাকে আনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উনি মুরগী, হাঁস আর শিম গাছ ফেলে আসতে রাজি হন নি। তাই ছোট চাচাকে নিয়ে আসেন। সাগরের বাবার মতে,‘সংসারে ময়মুরব্বী থাকা লাগে, যিনি সব সময় আল্লাহবিল্লা করবেন, বাকিদেরকে আল্লাহবিল্লা করার জন্য বকাঝকা করবেন, তাহলে না সংসারের রহমত আসবে। ’
মা বলেন,‘সংসারে যেমন ময়মুরব্বী থাকতে হয় তেমন বাচ্চাকাচ্চাও থাকতে হয়, বাচ্চাকাচ্চা হলো বেহেস্তের ফুলা।
বাচ্চাকাচ্চা ছাড়া সংসার দোজখখানা। ’ তিনি বেহেস্তের ফুল আনার জন্য সাগরকে বিয়ে দিতে চান।
বাবা বলেন,‘ছাগল দিয়া হালচাষ করতে দেখছো কোন দিন ? দেখ নাই, সে ছাগলেরও অধম, তারে দিয়া বিয়াশাধি হবে না। আমার সন্তান হয়ে জন্ম নিছে, বাবা হিসাবে আমার দায়িত্ব করে যাব - খাকদাক, ঘুমাক, যা ইচ্ছা তাই করুক, কোন আপত্তি নাই। তার প্রতি আমার কোন চাওয়া নাই, তারে নিয়া আমার কোন আশাও নাই।
’
তবে মা আশা ছাড়েন না, চুপে চুপে মেয়ে খোঁজেন। একবার এক মেয়েপক্ষ সাগরকে দেখতোও এসেছিল। মেয়েপক্ষ আবার বেশি চালাক, আগাম খবর না দিয়েই এসেছিল। বাসায় সেদিন সাগর ছাড়া আর কেউ ছিল না। সাগর তাদের বসতে দেয়।
সামনের হোটেল থেকে জনপ্রতি একটা করে কোকের বোতল আর পুড়ি এনে সামনে দিয়ে বলে,‘খান, কোক দিয়া চুবাইয়া চুবাইয়া পুড়ি খান। ’ মেয়ে পক্ষ পরষ্পরের দিকে তাকিয়ে উঠে চলে যান, সেই যে যান আর ফিরে আসেন না।
মা বাসায় ফিরে বাড়ি মাথায় তোলেন,‘এই জীবনে তুই কোনদিন কোক দিয়া চুবাইয়া চুবাইয়া পুড়ি খাইছস, না কাউরে খাইতে দেখছস ? বেকুব ! তোর বাবা ঠিকই কয় তুই ছাগলেরও অধম। ’ সাগর নির্বিকার।
আজ বাসায় সাগর ও তলতা ছাড়া আছে ঝিল ও দাদু।
দাদু সাগরকে নিয়ে চুড়ান্ত পর্যায়ে ত্যক্তবিরক্ত। তিনি নাস্তার টেবিলে তলতাকে খোঁজেন। ঝিল বলে,‘শুয়ে আছে, ভাইয়া তার পা থেঁতলে দিয়েছে। ’
দাদু ঠোঁট বাঁকান,‘উজবুক, দুইটা উজবুক। উজবুক আর উজবুকের সাগরেদ।
’ এমন সময় সাগর একটা সানগ্লাস পড়ে লাঠি ঠুকে ঠুকে অন্ধর মত ঘরে আসে। দাদু ও ঝিল হাঁ হয়ে তাকায়। ‘দেখ, উজবুকের কারবার দেখ ?’ সাগর এসে টেবিলে বসে হাতিয়ে হাতিয়ে প্লেটে রুটি নেয়। দাদু এবার সরাসরি বলেন,‘বিষয়টা কী তোর ?’
‘একজন অন্ধ কতটা কষ্টে থাকে তা বুঝতে চেষ্টা করছি,’ বলে সাগর দাদুর প্লেটের কাছের কলার ফানা থেকে কলা নিতে হাত বাড়ায়। দাদু সাগরের হাতে এক থাপ্পর মারেন,‘অন্ধের কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করো, কলার ফানাতো ঠিকই দেখো ? খোল, সানগ্লাস খোল,’ দাদু ধমকে ওঠেন,সাগর সাথে সাথে সানগ্লাস খোলে ফেলে।
‘উজবুক !’ দাদু বকতে বকতে উঠে চলে যান,‘অন্ধের কষ্ট বুঝবে, অন্ধের ! উজবুক জানি কোথাকার ?’
দাদু চলে গেলে ঝিল বলে,‘ভাইয়া বাসায়া তুই অন্ধর কষ্ট ঠিক বুঝতে পারবি না। ’
‘ঠিক বলেছিস, বাসার কোন দিকে ক’কদম দিলে কী পায়ে লাগবে তা আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি। সব মুখস্থ। ’
‘হু, তাছাড়া দাদু তোকে অন্ধের কষ্ট নিতেও দিবে না। ’
‘কোন অপরিচিত জায়গায় গিয়ে অন্ধর মত চলাফেরা করলে কেমন হয় ?’
‘এটা ব্যাটার আইডিয়া, তুই কোন অপরিচত পাড়ায়ই যা,’বলে ঝিল উঠে চলে যায়।
ঈদের আগে আজ তার শেষ ক্লাস, তাড়াতাড়ি বেরতে হবে। ঝিল চলে গেলে সাগর চোখ ছোট করে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কলায় কামড় দেয় আর ভাবে কোন দিকে যাওয়া যায় ?।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।