স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলকে কারাগারের পাঠানোর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ধর্মঘটে যান রাজশাহীর চিকিৎসকরা।
এরপর চিকিৎসকদের সাত সংগঠনের বৈঠক শেষে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন বিএমএ ও স্বাচিপের রাজশাহী শাখার সভাপতি ডা. এস আর তরফদার।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের মুক্তির ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এজন্য রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। ”
তিনি সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যায় প্রশাসনের কর্মকর্তার তাদের সঙ্গে কথা বলে ডা. শিমুলকে রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে মুক্তি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রশাসনের সঙ্গে ওই বৈঠকের পর চিকিৎসকদের সাত সংগঠনের নেতারা নগরীর কুকিজার কমিউনিটি সেন্টারে বৈঠকে বসেন।
রোববার ডা. শিমুলকে মুক্তি দেয়া না হলে রাজশাহী বিভাগে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুমকি দেন চিকিৎসক নেতা এস আর তরফদার।
গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বাচিপের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের ডলফিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হক টিপু।
ধর্মঘটের কারণে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসক নেই, সেবা দিচ্ছেন কেবল শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা।
ভুল চিকিৎসার অভিযোগে টিপুর স্ত্রী শারমিন আক্তার তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন।
ধর্মঘটের কারণে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসক নেই, সেবা দিচ্ছেন কেবল শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা।
ওই মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হলে শামিলকে কারাগারে পাঠান মহানগর হাকিম।
এর প্রতিবাদে রাজশাহীর সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার বিকালে শুরু হয় ধর্মঘট।
রাজশাহী মেডিকলে কলেজ হাসপতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলো খোলা থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে চিকিৎসকরা না যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
এই পরিস্থিতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আশরাফুল ইসলাম (৩৫) নামের এক রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে শুক্রবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
তার ছোটভাই আরিফুল ইসলামের অভিযোগ, ধর্মঘটের কারণে কোনো চিকিৎসা না পেয়েই আশরাফুলের মৃত্যু হয়েছে।
একই হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবুর (৮) বাবা হারুন অর রশিদ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর নর্থ বেঙ্গল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার ছেলের পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে তিনি আর রিপোর্ট পাননি।
“সকাল থেকে তিনবার গেছি রিপোর্টের জন্য। কিন্তু হয়নি।
এইদিকে ডাক্তারও নাই। আমার ছেলের চিকিৎসা হচ্ছে না। ”
চাঁপাইনবাগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে রাজশাহীতে এসে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা না পেয়ে ফিরে যান আবু বকর সিদ্দিক।
স্বজনদের অভিযোগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আশরাফুল ইসলামকে (৩৫) বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেলে আনা হলেও শুক্রবার দুপুরে তার মৃত্যু হয় বিনা চিকিৎসায়।
নাটোর থেকে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে রাজশাহী আসা রাকিব চৌধুরী জানান, তার বাবার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে।
কিন্তু মেডিকেলে এসে কোনো ডাক্তার পাননি। কোনো ক্লিনিকেও ভর্তি করাতে পারেননি।
স্বজনদের অভিযোগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আশরাফুল ইসলামকে (৩৫) বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেলে আনা হলেও শুক্রবার দুপুরে তার মৃত্যু হয় বিনা চিকিৎসায়।
এই অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাবাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন রাকিব।
রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন- এমন অভিযোগের জবাবে ‘বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ও নার্স এসোসিয়েশন’, রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মকলেসুর রহমান বলেন, “রোগীদের জিম্মি করতে আমরা চাই না।
তবে বাধ্য হয়ে ধর্মঘটে যেতে হয়েছে। ”
তিনি বলেন, “চিকিৎসাকালীন একজন রোগী মারা যেতেই পারে। কিন্তু হত্যা মামলা দিয়ে একজন নামি দামি চিকিৎসককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর মামলা দিলে আমাদের আপত্তি থাকত না। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।