গত পর্বে সখীপুর-বাসাইল উপনির্বাচনের কিছু কেরামতি পাঠকদের জানাতে চেয়েছিলাম, তারও আগে স্বাধীনতার ঘোষণা ও ৭ মার্চের ভাষণ। আবার সেদিন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে গিনেস বুকে নাম তোলা। রেকর্ড আমরা অনেক করেছি, ভবিষ্যতেও করব। কিন্তু রেকর্ডের মর্যাদা রাখি না। জাতীয় কাজে জাতীয় ঐক্য গড়তে পারি না।
মনের সব রেষারেষি, বিদ্বেষ মুছে কোমরে গামছা বেঁধে দেশের জন্য সবাই এক হতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধের পর খণ্ডিত জাতিকে মাফ করে দিলাম বলে এককথায় বঙ্গবন্ধু একত্রিত করেছিলেন। এখনো যে টিকে আছি বা বেঁচে আছি সে তো সেই মহানুভবতার কল্যাণে। এত বড় একটা কর্মকাণ্ড হলো জাতির হৃদয়ে নাড়া লাগল না। আরেকটু বিনয়ী হয়ে সবাইকে একত্র করার চেষ্টা করলে কিই-বা ক্ষতি হতো? যুদ্ধে সরাসরি জড়িত যারা ছিলেন এখনো বেঁচে আছেন তাদের একটু ডাকলে আসমানের কোনো কানি ভেঙে পড়ত? একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি আসাদুজ্জামান নূর, এখন সাংস্কৃতিক মন্ত্রী।
আলী যাকের, সারাহ যাকের, ফেরদৌস হাসান নাভিল, আইরিশ যাকের, আসাদুজ্জামান নূরের মালিকানার এশিয়াটিক মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিটেড লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ব্যবস্থাপনার ঠিকা নিয়েছিল। নব্বই কোটি রাষ্ট্রীয়ভাবে খরচের বয়ান দেওয়া হয়েছে। নগদে নব্বই হলে সেনাবাহিনী অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন সে তো নয়শ কোটিরও বেশি। মন্ত্রী হয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য বাণিজ্য করা এটা কোনো ভালো কথা? দেশের গান গাইতে আবার টাকা লাগে নাকি, তাও আবার প্রাণের জাতীয় সংগীত? গাড়ি-ঘোড়া, পানি-টানি সাজানো-গোছানোর জন্য আমায় ১০ কোটি দিয়ে দেখতেন, এর চেয়ে ১০ গুণ মানুষ হতো। 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' প্রকৃতই যারা ভালোবাসে তারাই গাইত।
বিজ্ঞাপনী সংস্থা আর জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এক কথা নয়। শুনলাম, তিন লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক, ছাত্রছাত্রীকে ২০০ টাকার খাবার প্যাকেট দেওয়ার কথা ছিল। তাতে দরকার ছিল ছয় কোটি। লোক তো তিন লাখ হয়নি, হয়েছিল আড়াই লাখ, তাহলে টাকার দরকার পাঁচ কোটি। ওই এক কোটির হিসাব কে দেবে, নাকি সব হজম? আর গিনেস বুকে নাম উঠাতে আমরা জাতীয় সংগীত গাই, নাকি দেশকে ভালোবাসতে গাই? জাতীয় সংগীত গাইতে কেউ নড়াচড়া করে? হাসি-তামাশা করে? মুক্তিযুদ্ধের সময় যেখানেই আমরা জাতীয় সংগীত গাইতাম তখন আমাদের চোখও নড়ত না।
কিন্তু এখন সবই নড়ে। ক্যামেরা মুখে পড়লেই সে যে কীসব করে বলতেও লজ্জা করে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এত সব ক্যামেরা ছিল না। তাই তেমন রেকর্ড হয়নি। তবু দু-একটা রেকর্ড যে নেই তা নয়।
সেপ্টেম্বরের ২ বা ৩ তারিখ কুড়িগ্রামে রৌমারীতে অস্ট্রেলিয়ান এক টেলিভিশনে সাক্ষাৎ দিতে গিয়েছিলাম। এখন তো অনেকে অনেক বড় হয়েছে, সেদিন সেই রৌমারীতে কর্নেল শাফায়েত জামিলের ক্যাম্পে বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী এমপি, অধ্যাপক হুমায়ুন খালিদ M.N.A., মেজর জিয়া, ক্যাপ্টেন অলি, ক্যাপ্টেন জিয়া ছিলেন। কাদেরিয়া বাহিনীর সাঁতরে একটা খাল পাড়ের ছবি তারা ধারণ করেছিল। সেখানে স্কুল মাঠে প্রায় দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধা 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' গেয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠানের মিনিট দুই রেকর্ড এখনো আমার কাছে আছে।
যদি দেখাতে পারতাম পাঠক দেখতেন নড়াচড়া তো দূরের কথা, কারও চোখে মটক পড়েনি। 'আমার সোনার বাংলা' উচ্চারণ করলেই তখন বুক জুড়িয়ে যেত। আমরা অন্য জগতে চলে যেতাম। সব কিছুতে মায়ার দরকার। দয়ামায়াহীন এ জগতে কোনো কিছু অর্জন করা যায় না।
এবার সখীপুর-বাসাইল উপনির্বাচনী কেরামতির কথা বলি। পাঠক ধৈর্যহারা হবেন না, এক পর্বে না হয় যত পর্ব লাগে তত পর্ব লিখব। যা বলার অকপটে বলব। গোপনীয়তা নষ্ট করব না, আবার সত্যও লুকাব না।
সখীপুর-বাসাইল আসন শূন্য হওয়া থেকেই শুরু করা যাক।
সবাই জানে, আমি বাবর রোডে থাকি। বাবর রোড না হয়ে আমার বাস মোগল সুন্দরী নূরজাহান রোডে কিংবা জহুরী মহল্লায় হতে পারত, তা হয়নি, হয়েছে প্রথম মোগল সম্রাটের নামে বাবর রোডে। মা কুশিমনির স্কুল থাকলে তাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে পত্রিকা নিয়ে বারান্দায় বসি। সেদিনও বসেছিলাম। হঠাৎ খবর পেলাম শাজাহান আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)।
ওর শরীর খারাপ থাকত জানতাম। রক্তে সুগারের মাত্রা থাকত ২০-২৫, কিন্তু ধর্তব্যের মধ্যে নিত না। তবু কখনো ভাবিনি ওভাবে চলে যাবে। বয়স হয়েছে তাই ১৫-১৬ বছরের পুরান গাড়িতে চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। তবু সাড়ে ৩টায় সখীপুর পৌঁছেছিলাম।
জানাজার কথা ছিল ৪টায়। ঢাকা থেকে বাসাইল হয়ে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে কফিন সখীপুরে পেঁৗছেছিল পৌনে ৫টায়। মস্তবড় জানাজা হয়েছিল সেদিন। আওয়ামী লীগের ছোট ছোট নেতারা যে যা পারছিল বলে যাচ্ছিল। তাদের হাতে মাইক পড়লে আনন্দ বেদনা সব সমান।
শাজাহানের লাশ আসছে সেটাই ছিল মূল কথা। কারা আসছেন, লাশের সঙ্গে কে কে আছেন, ওসব আলোচনা ছিল না। এক সময় উপজেলার বিশাল মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে হেলিকপ্টার নামে। মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, এমপি ড. রাজ্জাক লাশের সঙ্গে ছিলেন। হেলিকপ্টার থেকে নেমে তারা সামনের দিকে আসছিলেন।
আমার দিকে আসাতে এগিয়ে গিয়ে ভাইকে সালাম করেছিলাম। জানাজার আগে বহু নেতা বহু কথা বলেছে। মাননীয় মন্ত্রী লতিফ ভাই আমাকে দু-কথা বলতে আহ্বান করেন। আমার হৃদয় ছিল ভারাক্রান্ত, আমি ছিলাম মুহ্যমান। বলার মতো অবস্থা ছিল না।
শাজাহানকে দিয়ে আওয়ামী লীগ আমাকে কত গালাগাল করেছে, রাজাকার বলেছে। কেন যেন ওসবের কিছুই মনে ছিল না। বুকে ছিল বোঝা, চোখে পানি। আল্লাহর কাছে বলেছিলাম, আমি আমার সমস্ত অন্তর থেকে শাজাহানকে মাফ করে দিয়েছি। দয়াময় প্রভু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ওকে আপনিও মাফ করে দিন।
শওকত মোমেন শাজাহানের শূন্য আসনে নির্বাচন করতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। ২০-২৫ দিন পরের কথা। সারা দেশে ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছিল। মনে হয় দ্বিতীয় ধাপে টাঙ্গাইলের সখীপুর ছিল। ভোটারবিহীন, প্রার্থীহীন জাতীয় নির্বাচনে কেউ অংশ নিইনি।
কিন্তু উপজেলা নির্বাচন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং ১৮ বা ১৯ দলীয় জোট কাউকে কিছু না বলে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাদের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ক্ষুদ্র দল। সখীপুর-বাসাইল আমার নির্বাচনী এলাকা। স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলাম বিএনপি প্রার্থী দিতে আমাদের জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করল না।
আমার হয়েছে বিপদ। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে দল করায় তারা চায় আমরা যাতে সংগঠিত হতে না পারি। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার ট্যাঙ্রে খাতা দেখেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই দুদিকেই উচ্চ অবস্থান। পদত্যাগ করে উপনির্বাচনে যাওয়ার আগে '৯৯ পর্যন্ত শওকত মোমেন শাজাহান মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ত।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই গাড়িতে উঠে, এটা সে বুঝত। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী বুঝে কিনা জানি না। সে সব সময় সাধু ভাষায় কথা বলে। এটা তার অভিনয়ও হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধে আমার প্রিয় কবি রফিক আজাদকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা, খাওয়ার টেবিলে যারা সাহিত্যের ভাষায় কথা বলে তাদের সম্পর্কে আপনার মতামত কী? অট্টহাসি হেসে বলেছিলেন, যে খাবার টেবিলে মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সঙ্গে সাধু ভাষায় কথা বলে হয় সে অভিনেতা, না হয় উন্মাদ কিংবা খচ্চর।
উপজেলা নির্বাচনে আবদুল হালিম লালকে আমরা প্রার্থী করেছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল আওয়ামী লীগ ভোট পাবে না। কিন্তু পেয়েছে। তবে অন্য সব প্রার্থী থেকে অর্ধেক ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে। সেই নির্বাচনী প্রচারে যখন যেখানে গেছি এক কথা, আপনাকে অংশ নিতে হবে।
প্রথম প্রথম বিরক্ত হয়েছি। কিন্তু তাদের যুক্তির কাছে টিকতে পারিনি। প্রায়ই শুনেছি বিপদ যখন আসে চারদিক থেকে আসে। আবার সুসময় যখন আসে মেঘের গর্জনে সিংহের বিক্রমে দিগ্বিদিক কাঁপিয়ে আসে। আলাপ-আলোচনা আকাশে বাতাসে দেশ-বিদেশ ছড়িয়ে পড়লে বুঝতে পারি এটা মোবাইলের যুগ, ভালো-মন্দ ছড়াতে সময় লাগে না।
আমার অনেক সহকর্মী এখন সারা দুনিয়া ছড়িয়ে আছে। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আবুধাবি, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইলি্ল-দিলি্ল কোথায় নেই তারা? সবদিক থেকে ফোন আর ফোন। একদিন বড় ভাইয়ের কাছে সব ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, সংসদীয় রাজনীতিতে ভালো হোক, মন্দ হোক সংসদে থাকতে হবে, বর্জন করে চলবে না। হ্যাঁ, চলবে।
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণবিপ্লব করতে পারলে চলবে, অন্য কোনো পথে নয়। অনেকেই মনে করে বড় ভাই আমার চরম শত্রু। মাঝে সাজে তিনি যা করেন বা বলেন তাতে অমন ভাবলে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। কিন্তু আমার কখনো তেমন মনে হয় না। কেন হয় না যুক্তি দিয়ে বুঝাতে পারব না।
কিন্তু মনে হয় না। তার কাজকর্মে আমার জন্য সব সময় ভালোই হয়। দেড় দশক আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠনের ৪-৫ দিন আগে তার মতামত চাইতে গিয়েছিলাম। তিনি তখন আওয়ামী লীগে তেমন ভালো অবস্থানে ছিলেন না, এখনো দলীয় অবস্থান কি, ভালোভাবে জানি না। তবে এক সময় তিনি প্রায় সব নেতার নেতা ছিলেন।
আমার কথা শুনে বলেছিলেন, তুই যদি তোর ইচ্ছায়, আত্দিক তাগিদে দল গঠন করতে চাস নিশ্চয়ই সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বাইরের কোনো শক্তি বা কারও পরামর্শে করলে ভালোও হতে পারে আবার খারাপ হতে পারে। তবে ক্ষমতা অর্জন না করতে পারলে আওয়ামী লীগের কাউকে সঙ্গে পাবি না। এখনো আমাদের ব্যক্তিগত বিরোধ নেই, তর্ক-বিতর্ক রাজনীতি নিয়ে। তাই বাবা-মার অবর্তমানে তিনিই আমাদের অভিভাবক।
২০০৮ সালে মন্ত্রী হলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে দুবার গেছি। সে মন্ত্রিসভায়ও আমার ৩-৪ জন সহকর্মী ছিল। তার মধ্যে ড. রাজ্জাক, দীপঙ্কর তালুকদার অন্যতম। প্রথম রাজ্জাকের অফিসে গেলে মন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে ছুটে এসে সালাম করেছিল। তারপরও একদিন সস্ত্রীক গিয়েছিলাম।
কিন্তু যেদিন ড. রাজ্জাক প্রচার মাধ্যমে বলেছিল, আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নিতে নেত্রীকে বলতে তাকে অনুরোধ করেছি, সেদিন ঘৃণায় মন ভরে গিয়েছিল। আর কখনো যাইনি। তবে রাস্তাঘাটে, সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। কি বলব! কেউ একটু সুবিধা পেলেই কি যেন হয়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় কতবার কতদিন কোলে উঠেছে খাতা-কলম নিয়ে হিসাব করতে হবে।
দিলি্লর পাণ্ডারা রোডে এক বিকালে আমাকে দেখে ছুটে এসে, 'গধসধ, গধসধ, অৎব ুড়ঁ পড়সরহম ড়ৎ মড়রহম?' পুতুলের কণ্ঠ এখনো কানে বাধে। '৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামে কয়েক মাস শেখ মারুফ পাহাড় জঙ্গলে আমার সঙ্গে ছিল। কচু ঘেচু যাই খেয়েছি ওকে পাশে নিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। নিজের পেট ভরাতে না পারলেও ওর পেট ভরাতে চেষ্টা করেছি। জনাব শেখ সেলিম ক্লিনহার্টের সময় যৌথবাহিনীর হাতে অন্যায়ভাবে আটক হলে তার তীব্র প্রতিবাদ করতে স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে গিয়ে জুলুম বন্ধ করেছি।
ছোট বোন রেহেনা মায়ের মতো ব্যবহার তার। কখনো তাকে চাটু মারতে হয়নি। আমার তিন তিনটা ছোট বোন। রেহেনাকে তাদের মতোই মনে করি। রাজপরিবার মনে করে হাত কচলে ছোট বোনকে বড় বোনের মতো আপনি আপনি করে নুইয়ে পড়ি না।
মায়ের পেটের বোনের মতো অন্তর থেকে দোয়া করি। সেদিনও দিলি্ল থেকে ঢাকা ফিরে আমার জন্য বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকার কী দরকার ছিল তার? কিন্তু ছেলে বৌ, নাতি-নাতকুর নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমিও বেরিয়ে যাওয়ার সময় বড় ভাই হিসেবে মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে এসেছি, ভালো থাক নিরাপদে থাক।
কখনো সখনো এক বিষয় লিখতে গিয়ে আরেক বিষয়ের চাপ সামলাতে পারি না। লেখার কথা ছিল সখীপুরের উপনির্বাচন।
২৯ মার্চ যে নির্বাচন হয়েছে তা কহতব্য নয়। শওকত মোমেন শাজাহানের ছেলে অনুপম শাজাহান জয় মাননীয় সংসদ সদস্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় যেমন মামা বলে ডাকে, শাজাহান ও শিপ্রার ছেলে জয়ও মামা ডাকে। জয়ই জয়ী হয়েছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচন নিয়ে যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল।
সরকার কবে যে এ দুর্বলতা থেকে বেরিয়ে আসবে সেটা সরকারই জানে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে উন্মাদের মতো কথা বলে তাকে তো কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা বলা যায় না। নাকে খত দিয়ে বিএনপি আমাদের অধীনে নির্বাচন করছে- এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়া উচিত ছিল। রাজনৈতিক দল নাকে খত দিয়ে তাদের অধীনে নির্বাচন করে এ ভাবনাই তো অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী মনোভাব। রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের অধীন হতে যাবে কেন? তাদের নির্বাচন পরিচালনা করার দায়িত্ব, তা-ই তারা করে।
তারা দেশের কর্মচারী- That means-Public servant. রাজনৈতিক দল জনগণের servant না। রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক দল দেশ ও জনগণের সেবক। সেবক আর চাকরের পার্থক্য যখন চাকর বুঝে না তখন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়ে পারে না। যেটা বর্তমানে হয়েছে। ন্যায়নীতিহীন বিবেকবর্জিত মানুষ পশুরও অধম।
কত কেন্দ্রে জালিয়াতির জ্বলজ্বলে ছবি দেখা যাচ্ছে তারপরও বলছে সব কিছু সুষুম হয়েছে। চোরের কাছে যদি চুরি অন্যায় মনে হতো তাহলে কি সে চুরি করার প্রেরণা পেত? কদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশকে তিস্তার পানি চোর বলেছে। ৩০-৪০ বছর আগে আমি যে মমতা ব্যানার্জিকে দেখেছি তিনি মোটেই এমন ছিলেন না। ক্ষমতা মানুষকে লাগামহীন করে কিনা জানি না। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির উক্তি তেমনই প্রমাণ করে।
ভারত উজানের দেশ, আমরা ভাটিতে। তাদের ওপর দিয়ে আল্লাহর দান পানি বয়ে আসে। তারা আমাদের ঠকিয়ে পানি সরিয়ে নিচ্ছে তারপরও তারা সাধু আমরা চোর। এ যেন কবিগুরুর 'দুই বিঘা জমি'-
শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, 'বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।
'
কহিলাম আমি 'তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই-
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, 'বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা-
ওটা দিতে হবে। ' কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, 'করুণ রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!'
অাঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, 'আচ্ছা, সে দেখা যাবে। '
বিদীর্ণহিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারিদিকে চেয়ে দেখি-
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালকালের কথা।
সেই মনে পড়ে, জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন-
ভাবিলাম হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন।
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা
হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এল মালী।
ঝুটিবাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, 'আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব-
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব। '
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ,
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ-
শুনে বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, 'মারিয়া করিব খুন। '
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, 'শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!'
বাবু কহে হেসে, 'বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!'
আমি শুনে হাসি, অাঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোরে ঘটে-
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে
আমরা পানি পাই না সেটা আমাদের দোষ, যেমন স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান বলত, দেশে বন্যা হয় সেটা আমাদের দোষ।
পাট চাষ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি সেটাও আমাদের দোষ। কর্ণফুলী পেপার মিলে কাগজ হতো, সিল ছাপ্পর মারতে সে কাগজ যেত করাচিতে। আমরা কিনতাম ৮ আনা দিস্তা, ওরা কিনত ৫ আনা, সেও আমাদের দোষ। তেমনি সেদিন মমতা ব্যানার্জি আমাদের পানি চোর বলেছেন। কিন্তু সরকার তার কোনো যথাযথ প্রতিবাদ করেনি, করার সাহস দেখায়নি।
লেখক : রাজনীতিক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।