৪-০-২৫-৩। যেকোনো উইকেট, যেকোনো পরিস্থিতি বা যেকোনো বিচারে টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। এমন বোলিংয়ের পরও কেউ পরের ম্যাচ থেকে আর সুযোগ না পেলে সেটি বড় এক রহস্য। গত বছর দেড়েক সেই রহস্যের বৃত্তে বন্দী ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। ‘ছিলেন’ শুনে ধরে নেওয়ার কারণ নেই যে রহস্যের জট খুলেছে।
বরং কাল আরও বাড়ল। বাড়ালেন হেরাথ নিজেই!
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অমন বোলিং করে ফাইনালে তুলেছিলেন দলকে। বিস্ময়করভাবে ফাইনালে হেরাথকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছিল আনকোরা আকিলা দনঞ্জয়াকে। এর চেয়েও অদ্ভুত, কালকের আগে সেটিই ছিল হেরাথের শেষ টি-টোয়েন্টি! এবারের বিশ্বকাপের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেও দারুণ বোলিং করেছিলেন। তবু সুযোগ মেলেনি।
কাল সুযোগটা পেলেন দলের বাঁচা-মরার ম্যাচে। দলের বাঁচা আর মরার মাঝে দাঁড়িয়েও গেলেন তিনি। অসাধারণ বোলিংয়ে বলতে গেলে একাই ডুবতে থাকা দলকে তুলে নিলেন সেমিফাইনালে। সেমিফাইনাল-স্বপ্নের মৃত্যুর সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গী নিজেদের সর্বনিম্ন রানের লজ্জা, ৬০!
প্রেমাদাসার সেই সেমিফাইনালে পুঁজি ছিল ১৩৯ রান। কাল আরও ২০ কম।
উইকেট খুব একটা সহজ ছিল না, বল থেমে আসছিল, নিচ্ছিল টার্নও। ১২০ রান তার পরও কঠিন কোনো লক্ষ্য ছিল না। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ১-২ করে নিয়েই তো জিতে যেতে পারত নিউজিল্যান্ড। হেরাথ যখন বোলিংয়ে এলেন, ৩ ওভারে ১৮ রানের ভদ্রস্থ একটা শুরুও পেয়ে গেছে কিউইরা। প্রথম বলে গাপটিলের রানআউট যেন বুঝিয়ে দিল সৌভাগ্যের ছোঁয়া নিয়ে এসেছেন হেরাথ।
ওভারের শেষ বলে দারুণ এক ফ্লাইটে বোকা বানালেন টি-টোয়েন্টির সফলতম ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে। পরের ওভারের শেষ দুই বলে আউট রস টেলর ও জিমি নিশাম! হেরাথের বোলিং বিশ্লেষণ তখন অবিশ্বাস্য, ২-২-০-৩! হ্যাটট্রিক না হলেও এক বল পর ফেরালেন লুক রনকিকে। নিউজিল্যান্ডের ইনিংস তখন বিধ্বস্ত জনপদ, ৫ উইকেটে ৩০! সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার সামর্থ্য কিউই ব্যাটিংয়ের ছিল না। শেষ ওভারের আরেকটি উইকেটে হেরাথ উপেক্ষার জ্বালা জুড়িয়েছেন ৫ উইকেট নিয়ে। দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন আরেক স্পিনার সেনানায়েকেও (৩-০-৩-২)।
কিউইদের আততায়ী হয়ে এসেছিল কোরি অ্যান্ডারসনের চোট। ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ নিতে গিয়ে আঙুলের হাড় নড়ে যাওয়ায় ব্যাটিং করতে পারেননি সময়ের সেনসেশন।
অথচ ম্যাচের প্রথম ভাগটা স্বপ্নের মতো কেটেছে কিউইদের। শ্রীলঙ্কাকে এত কমে আটকে দেওয়া তো প্রতিদিন হয় না! শুরুতে আঘাত হেনেছেন ট্রেন্ট বোল্ট, শেষে নিশাম। মাঝে সঙ্গ দিয়েছে বল হাতে নেওয়া বাকি সবাই।
তখন কে জানত, এক হেরাথেই ম্লান হয়ে যাবেন সবাই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ১৯.২ ওভারে ১১৯ (মাহেলা ২৫, থিরিমান্নে ২০, সেনানায়েকে ১৭, কুশল ১৬, থিসারা ১৬; বোল্ট ৩/২০, ম্যাকলেনাহান ২/২৪, মিলস ১/৩০, নাথান ম্যাককালাম ১/৮)।
নিউজিল্যান্ড: ১৫.৩ ওভারে ৬০ (উইলিয়ামসন ৪২; হেরাথ ৫/৩, সেনানায়েকে ২/৩)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৫৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রঙ্গনা হেরাথ
৩.৩-২-৩-৫
৫/৩
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় সেরা বোলিং হেরাথের
১৩
হেরাথের প্রথম ১৩ বলে কোনো রান হয়নি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।