সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব এবং এক সময় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরী এখন কোথায়? জোট সরকার আমলের দোর্দন্ড প্রতাপশালী এ বিএনপি নেতার আত্মগোপন অনেকটাই রহস্যাবৃত্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এবং এক-এগারোপরবর্তী সময়ে নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। দখল করা সরকারি বাড়ি ফেরত দেয়া, শখের হরিণ জব্দ হওয়া, মানি লন্ডারিং, শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের তালিকায় নাম, হাওয়া ভবন দাপিয়ে বেড়ানো, জঙ্গি মদতসহ নানা ঘটনায় যুক্ত হয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন হারিছ চৌধুরী। তাই এত সহজে তাকে কারও ভোলার কথা নয়। কিন্তু এখন কোথায় সেই হারিছ চৌধুরী-দেশে না বিদেশে? আত্মগোপন করে পালিয়ে আছেন, নাকি ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন?
প্রায় সাতটি বছর ধরে গোয়েন্দারা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
দলীয় লোকজন ও ঘনিষ্ঠরাও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু হদিস মেলেনি তার। গোয়েন্দাদের হাতে তার ব্যাপারে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। ধারণামূলক তথ্য ছাড়া কেউ কিছু বলতে পারছে না। ঘনিষ্ঠ স্বজনরাও মুখ খুলতে নারাজ। এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর প্রতিকূল প্রেক্ষাপটে দেশ ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক নেতা একে একে দেশে ফিরলেও ফেরেননি অন্তত ১০টি মামলার আসামি হারিছ চৌধুরী।
এমনকি সাজাপ্রাপ্ত সব নেতা দেশে ফিরে জামিনে মুক্তি পেয়ে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় হলেও তিনিই কেবল ব্যতিক্রম।
হারিছ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হারিছ চৌধুরী বর্তমানে ইরানে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি তার ছোট ভাই ডা. আবদুল মুকিত চৌধুরীর আশ্রয়ে আছেন। এর আগে তিনি একাধিকবার লন্ডনে গিয়েও থেকেছেন। সেখানে তিনি শারীরিক চিকিৎসাও নেন।
পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তাও একই ধরনের তথ্য জানান। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে তার ব্যাপারে আরও খোঁজখবরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৭ ডিসেম্বর হারিছ চৌধুরীর অপর ছোট ভাই বিদেশি আল-রাজি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আবুল হাসনাত চৌধুরী ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার দাফন সম্পন্ন হয় গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগর গ্রামে। লাশ গ্রামের বাড়ি আসার পর থেকে দাফন পর্যন্ত হারিছ চৌধুরী ও আবদুল মুকিত চৌধুরী ইরান থেকে ফোনের মাধ্যমে কয়েকবার কথা বলেন স্বজনদের সঙ্গে।
ঘনিষ্ঠ স্বজন ও পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত হারিছ চৌধুরী ইরানেই আছেন। তার স্ত্রী জোসনা বেগম, ছেলে নাঈম চৌধুরী জনি এবং মেয়ে সামিরা তানজিম বর্তমানে লন্ডনে আছেন। যুক্তরাজ্যের নর্থ লন্ডনের উডগ্রিনের বিলাসবহুল একটি বাড়িতে হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী-সন্তানরা বসবাস করছেন। বাড়িটি হারিছ চৌধুরীর কেনা বলে জানা গেছে। ছেলে লন্ডনে নরওয়েভিত্তিক একটি তেল কোম্পানিতে কর্মরত এবং মেয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত।
হারিছ চৌধুরীরা চার ভাই, পাঁচ বোন। ছোট এক ভাই মারা গেলেও অন্যরা প্রায় সবাই দেশের বাইরে থাকেন।
হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই এবং সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, তার (হারিছ চৌধুরী) সঙ্গে আমার বা এখানকার কোনো আত্মীয়স্বজনের যোগাযোগ নেই। তিনি কোথায় আছেন, কিছুই জানি না। এক-এগারোর পর এবং পালিয়ে যাওয়ার আগে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন।
সে-ই শেষ সাক্ষাৎ। বর্তমানে তিনি ইরানে আছেন বলে কেউ কেউ বলে থাকেন, তবে আমার বিশ্বাস হয় না। যেখানেই থাক, এ সরকারের আমলে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। সরকার পরিবর্তন হলেই হারিছ চৌধুরীও ফিরে আসবেন।
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হারিছ চৌধুরী এখন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও নেই।
না কেন্দ্রীয় কমিটিতে, না স্থানীয় জেলা কমিটিতে- কোথাও ঠাঁই মেলেনি হারিছ চৌধুরীর। অথচ এক সময় তিনি বিএনপির রাজনীতির নেপথ্য নায়ক হিসেবে সমাধিক পরিচিত ছিলেন। তাই অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন ও জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে- কেমন আছেন হারিছ চৌধুরী, তিনি কি আসলেই অসুস্থ? কারও কাছেই মিলছে না এসব প্রশ্নের উত্তর। তাহলে কি বিএনপি রাজনীতির এক সময়ের এ নেপথ্য নায়কের আত্মগোপন রহস্যাবৃত্তই থেকে যাবে?
জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা হারিছ চৌধুরী একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িয়ে পড়ার কারণে এ সরকারের আমলে দেশে ফেরার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রথম ৫০ দুর্নীতিবাজের তালিকায় পাঁচ নম্বরে ছিলেন হারিছ চৌধুরী। দুদক তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে। ওই মামলাসহ আরও কয়েকটি মামলায় সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। সর্বশেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিও রয়েছে।
ঘনিষ্ঠরা জানান, ২০১০ সালের ঈদুল আজহার পর দেশে ফিরে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হারিছ চৌধুরী। তিনি সুপ্রিমকোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন। কিন্তু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তাকে আসামি করায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি।
সুত্র
পলাতক হারিছ চৌধুরী মালয়েশিয়ায় খায়রুজ্জামানের আশ্রয়ে
খোঁজ নেই হারিছ চৌধুরীর : লন্ডনে পরিবার
হারিছ চৌধুরী ইরানে! ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।