আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তৃতীয় দফায় সর্বত্র উঁচু হারে ভোট

ভারতের ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত তিনটি অঞ্চলের ১১ কোটি মানুষ লোকসভার ৯১টি আসনের প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করলেন গতকাল বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে ছিলেন বেশ কয়েকজন নামীদামি প্রাথী। বিহারে উগ্রপন্থীদের হামলায় দুজন নিহত হওয়া ছাড়া গতকাল অনুষ্ঠিত তৃতীয় দফার ভোট ছিল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। প্রায় সবখানেই ভোট পড়ার হার ছিল বেশ উঁচু। অন্তত কিছু স্থানে তা অতীতের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল।


কংগ্রেস, বিজেপি ও আম আদমি পার্টির (এএপি) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কারা শেষ হাসি হাসবেন, তা নিয়ে গতকাল ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় জল্পনা।
কাল যেসব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোট হলো, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দিল্লির ৭, হরিয়ানার ১০ ও কেরালার ২০টি আসন। এ ছাড়া ছিল জম্মু-কাশ্মীর ও চণ্ডীগড়ের একটি করে, মধ্যপ্রদেশে ২৯টির মধ্যে নয়টি, মহারাষ্ট্রের ৪৮টির মধ্যে ১০টি, উত্তর প্রদেশের ৮০টির মধ্যে ১০টি, বিহারের ৪০টির মধ্যে ছয়টি ও ঝাড়খন্ডের ১৪টির মধ্যে চারটি আসন। ছত্তিশগড়ের মাও-অধ্যুষিত একটি আসন, ওডিশার ২১টির মধ্যে ১০টি এবং আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র আসনেও কাল ভোট হয়েছে।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ৯১টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস জিতেছিল ৪৬টি আসনে, বিজেপির ভাগে ছিল ১৩টি।

প্রধান এই দুই দল ছাড়া বহুজন সমাজ পার্টি পেয়েছিল ছয়টি, বিজু জনতা দল পাঁচটি, সিপিএম চার, জনতা দল সংযুক্ত তিন ও শিবসেনা তিনটি। স্বতন্ত্রসহ অন্যরা পেয়েছিলেন ১১টি আসন।
গতকালের ভোটে ভাগ্য নির্ধারিত হবে লোকসভার স্পিকার কংগ্রেসের মীরা কুমারের। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিহারের সাসারাম কেন্দ্র থেকে। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন কমলনাথ (ছিন্দওয়াড়া, মধ্যপ্রদেশ), ই আহমেদ (মারল্লাপুরম, কেরালা), শশী থারুর (তিরুবনন্তপুরম, কেরালা), কপিল সিবাল (চাঁদনি চক, দিল্লি), অজয় মাকেন (নতুন দিল্লি, দিল্লি), কৃষ্ণা তিরথ (উত্তর-পশ্চিম দিল্লি), অজিত সিং (বাগপত, উত্তর প্রদেশ)।

তাঁরা ছাড়া উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন কংগ্রেসের নবীন জিন্দল (কুরুক্ষেত্র, হরিয়ানা), নাগমা (মিরাট, উত্তর প্রদেশ), রাজ বাব্বর (গাজিয়াবাদ, উত্তর প্রদেশ), কংগ্রেসের সহযোগী রাষ্ট্রীয় লোকদলের জয়াপ্রদা (বিজনৌর, উত্তর প্রদেশ), বিজেপির টিকিটে গাজিয়াবাদ থেকে দাঁড়ানো দেশের সাবেক সেনাপ্রধান বিজয় কুমার সিং।
দিল্লির সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নতুন দিল্লি, চাঁদনি চক ও পূর্ব দিল্লিতে। নতুন দিল্লিতে অজয় মাকেনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির মীনাক্ষী লেখি ও এএপির আশিস খেতান। চাঁদনি চকে কপিল সিবালকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন বিজেপির হর্ষবর্ধন ও এএপির আশুতোষ। পূর্ব দিল্লিতেও হেভিওয়েট লড়াই।

কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দ্বীপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আছেন এএপির রাজমোহন গান্ধী ও বিজেপির মহেশ গিরি। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতেও কংগ্রেসের জয়প্রকাশ আগরওয়ালকে কঠিন চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন বিজেপির মনোজ তিওয়ারি। ভোজপুরি সিনেমার এই হিরো ছাড়াও লড়াইয়ে আছেন এএপির আনন্দ কুমার।
পাঞ্জাব-হরিয়ানার রাজধানী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ের লড়াইটাও বেশ আকর্ষণীয়। কংগ্রেসের সাবেক রেলমন্ত্রী পবন বনসলের জোড়া প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির অভিনেত্রী প্রার্থী কিরণ খের এবং সাবেক মিস ইন্ডিয়া এএপির গুল পানাঙ্গ।

দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানার গুরগাঁওয়ের লড়াইও আগ্রহ ছড়িয়েছে। কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাও ইন্দ্রজিৎ সিংয়ের মূল লড়াই এখানে এএপির যোগেন্দ্র যাদবের সঙ্গে। মহারাষ্ট্রের নাগপুরের লড়াইয়ে রয়েছেন বিজেপির সাবেক সভাপতি নীতিন গড়কড়ি, কংগ্রেসের সাংসদ বিলাস মুত্তেমার ও এএপির অঞ্জলি দামানিয়া।
বিজেপি এই প্রথম দেশজুড়ে ভোট চাইছে নরেন্দ্র মোদির নামে। আর মোদি তাঁর প্রচারে হিন্দুত্বকে প্রচ্ছন্ন রেখে প্রকাশ্যে বড় করে তুলে ধরেছেন উন্নয়ন ও বিকাশকে।

কিন্তু তা করলেও বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, সংবিধানের ৩৭০ ধারার বিলোপ ও অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, কট্টর হিন্দুত্বকেও বিজেপি ছেড়ে দিতে রাজি নয়। এবং সে কারণেই এবারের ভোটে মুসলিম সম্প্রদায়ের রায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
উঁচু ভোটের হার: সার্বিকভাবে গতকাল ভোট পড়ার হার ছিল উঁচু। এর মধ্যে চণ্ডীগড়ে পড়েছে সর্বোচ্চ ভোট, ৭৪ শতাংশ।

গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটের হার লক্ষণীয়ভাবে বেশি। এমনকি গত বছরের আগস্টেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হওয়া উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর ও শামলিতে গড় হারের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। সেখানে ভোট পড়েছে যথাক্রমে ৬৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও ৭০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গতকাল ভোট হওয়া উত্তর প্রদেশের ১০টি আসনে রেকর্ড পরিমাণ ৬৫ শতাংশ ভোট পড়ে। গত লোকসভা নির্বাচনে সেখানে ভোট পড়ে ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ।

দিল্লিতে ভোট পড়ার হার ৬৪ শতাংশ, গতবারের চেয়ে যা ১২ শতাংশ বেশি। ছত্তিশগড়ের বাস্তার আসনে পড়েছে সবচেয়ে কম ভোট, ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে তাও গতবারের ৪৭ দশমিক ৩৩ শতাংশের চেয়ে বেশি। রাতে ইসি বলেছে, অনেক স্থানে নির্ধারিত সময়ের পরও ভোট গ্রহণ অব্যাহত থাকায় চূড়ান্ত ভোটের হার অনেক বেশি হতে পারে।
পশ্চিম-উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ, বাগপত, মীরাট, বিজনৌর, মুজাফফরনগরে আগেরবারের তুলনায় এবার বেশি ভোট পড়েছে।

মুজাফফরনগরে ভোট পড়েছে আগের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। এর অর্থ, মুসলমান-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই প্রবল উৎসাহে ভোট দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষণে এর অর্থ, সম্ভবত দুই সম্প্রদায়েই মেরুকরণ ঘটেছে।
অন্যবারের তুলনায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম এক্সিট পোলের (কেন্দ্রফেরত জরিপ) অনুপস্থিতি। প্রায় সব রাজনৈতিক দলের আপত্তিতে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুথ-ফেরত জরিপে জনমন প্রভাবিত হতে পারে বলেই এই সিদ্ধান্ত। ১২ মে শেষ দিনের ভোট গ্রহণ শেষ হলেই একমাত্র বুথ-ফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করা যাবে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।