কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন প্রযুক্তি আমাদের প্রতিদিনের কাজগুলোকে সহজ করে দিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের অ্যাপলিকেশন বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে নানা কাজ করা যাচ্ছে। কাজের জন্য সব সময় যে অন্যের তৈরি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে, এমন নয়। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানা থাকলে নিজেই তৈরি করে নেওয়া সম্ভব কাজের বিভিন্ন সফটওয়্যার বা অ্যাপ। তবে প্রোগ্রামিং অর্থাৎ কম্পিউটারকে দিয়ে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার লাইনের পর লাইন সাংকেতিক ভাষা লেখা জানতে হবে।
মাতৃভাষায় সেই প্রোগ্রামিং সহজভাবে শেখানোর চেষ্টা করছেন তামিম শাহরিয়ার, কাছের মানুষদের কাছে তিনি সুবিন নামেই পরিচিত। নিজেই চালাচ্ছেন মুক্তসফট নামের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
তামিম পড়েছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে। নিজে ভালো প্রোগ্রামার। সেই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে লিখলেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বই।
এরপর ইন্টারনেটে ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমেও শেখাচ্ছেন প্রোগ্রামিং।
নিজের বই নিয়ে তামিমের কথা—‘আমরা যদি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই প্রোগ্রামিং শেখাতাম, তাহলে এত দিনে তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের মান আরও ভালো হতো। আবার নিজে নিজে শেখার জন্য বাংলায় ভালো বইও তেমন নেই। সামান্য একটা বাংলা বইয়ের অভাবে আমাদের দেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ে প্রোগ্রামিংয়ের মতো এত মজার এবং সুন্দর বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে না, ব্যাপারটা আমি মেনে নিইনি। এটাই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বই লেখার মূল কারণ।
’
তামিম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিনগুলো থেকেই প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন তামিম শাহরিয়ার। ২০০২ সাল থেকে এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় টানা চার বছর অংশ নিয়েছেন তামিম। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে অনলাইন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তামিম সিলেটে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য প্যারালাল ম্যাথ স্কুল চালু করেছিলেন।
এর কিছুদিন পরই যুক্ত হন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে। এখন এর একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য তিনি। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে তামিম তাঁর প্রথম বই লেখা শুরু করেন ২০০৯ সালে এবং ২০১১ সালের বইমেলায় এটি প্রকাশিত হয়। বর্তমানে বইটির দ্বিতীয় খণ্ডের কাজ চলছে। প্রথম খণ্ডের বিষয়গুলো যারা আয়ত্ত করতে পেরেছে, তাদের জন্য উপযোগী হবে এই বইটি।
ফেব্রুয়ারিতে বই প্রকাশের পর সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এটি ওয়েবসাইটে (http://goo.gl/tyQTeX) ছাড়া হয়। এরপর ওয়েবসাইটে বাংলায় বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং সমস্যা দেওয়া শুরু করেন তামিম শাহরিয়ার। এখন ৪৩টি সমস্যা আছে অনলাইনে। বইটিতে যতটুকু শেখানো হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত চর্চা করলেই এসব প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সাধারণত প্রোগ্রামিং সমস্যাগুলো ইংরেজিতে বর্ণনা করা থাকে, কিন্তু এই বাংলায় দেওয়ার বিষয়টি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা এই সমস্যাগুলোর সমাধান করছে। সমাধান করার পর কোনো অংশ বুঝতে অসুবিধা হলে অথবা সমাধান করতে গিয়ে নতুন কোনো প্রশ্ন থাকলে সেগুলো জানানো ও আলোচনার ব্যবস্থা রয়েছে ওয়েবসাইটে।
বইয়ে থাকা বিষয়গুলো আরও সহজভাবে বর্ণনা করে বেশ কিছু ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করেছেন তামিম শাহরিয়ার। এগুলোও পেয়েছে ব্যাপক সাড়া। সম্প্রতি এই ভিডিওগুলো একসঙ্গে ডিভিডি আকারেও প্রকাশ করা হয়েছে।
দ্বিমিক কম্পিউটিং স্কুল
বই, ভিডিও টিউটোরিয়ালে প্রোগ্রামিং শিখিয়েও মন যেন ভরে না তামিমের। তাই অনলাইন স্কুলই চালু করে দিয়েছেন। ২০০৯ সালে চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে উদ্যোগটি এগোয়নি। গত বছর তাহমিদ রাফির সঙ্গে তামিম শাহরিয়ার চালু করেন ‘দ্বিমিক কম্পিউটিং স্কুল’। এটা অনলাইনে তথ্যপ্রযুক্তি শেখার স্কুল।
তামিম বলেন, ‘তাহমিদ রাফি মুক্তসফটে কাজ করার সময় অনলাইনে স্কুল তৈরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি শখের বসে করার মতো কাজ নয়। সৌভাগ্যক্রমে আমি একজন বিনিয়োগকারী পেয়ে যাই, রাফি মুক্তসফটের চাকরি ছেড়ে দ্বিমিকের দায়িত্ব নেন। আমরা শুরু করে দিই। ’ তামিমদের এ স্কুলের ঠিকানা— http://dimikcomputing.com।
বর্তমানে তামিম শাহরিয়ার, মীর ওয়াসি আহমেদ, তাহমিদ রাফি এবং হাম্মাদ আলী ‘প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি’, ‘ওয়েব কনসেপ্টস’, ‘বিচ্ছিন্ন গণিত (ডিসক্রিট ম্যাথ)’ ইত্যাদি কোর্স পরিচালনা করছেন।
প্রোগ্রামিং আড্ডা
তামিম প্রোগ্রামিং শেখানোর কাজটি সব সময়ই যে অনলাইনে করছেন, এমন নয়। অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হচ্ছে ‘প্রোগ্রামিং আড্ডা’। দ্বিমিক কম্পিউটিং স্কুল, মুক্তসফট এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এই আড্ডাগুলো। এখানে তিন-চার ঘণ্টা প্রোগ্রামিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এই আড্ডাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। ইতিমধ্যে ঢাকা এবং ঢাকার বাইবে একাধিক স্থানে এই প্রোগ্রামিং আড্ডার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রোগ্রামিং শেখার ব্যাপারে তামিমের মত—আগ্রহটাই মূল বিষয়। ‘অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত গণিতে সাধারণ ধারণা থাকলে যে কেউ প্রোগ্রামিং শিখতে পারে বলে আমি মনে করি। তবে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর চর্চা করতে হবে।
বই পড়লে বা ভিডিও দেখলেই দক্ষ হওয়া যায় না। ’ তাই চর্চার ব্যাপারেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তামিম শাহরিয়ার। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশে তৈরি হবে পর্যাপ্ত কম্পিউটার প্রোগ্রামার, যাঁরা ছড়িয়ে পড়বেন প্রযুক্তিবিশ্বের আনাচকানাচে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।