যতক্ষণ আছ হেথা স্থিরদীপ্তি থাকো, তারার মতন।
জাহিদ রুমান
প্রতিদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতায় চোখ বুলিয়ে দিনের কাজ শুরু করি। কাগজে কী দেখি- পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু, ফ্লাইওভার ধ্বসে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি, দুই শীর্ষনেত্রীর পারস্পরিক তর্কযুদ্ধ- কাদা ছোড়াছুড়ি, প্রকল্পে দুর্নীতি, পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ-সমাবেশ, পুলিশের রণপ্রস্তুতি এরপর হরতাল-পিকেটিং-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-গ্রেপ্তার- এমনি নানা দুঃসংবাদ, আঘাত-প্রতিঘাতের ধ্বংসকাব্যে ঠাসা প্রতিদিনের কাগজের পাতা। ভীতি, অনিশ্চয়তা আর দুর্ভাবনায় ঘেরা তাই প্রতিটি সকাল। কখনো কখনো ভাবি- একটু আলো কিংবা ভালোর ঠিকানা বুঝি কাগজওয়ালাদের জানা নেই।
এত কিছুর মধ্যেও প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস এলে আমরা ‘বিজয়’ এর কথা ভাবি। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা- শব্দগুলো আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে নতুন দ্যোতনা নিয়ে। আনন্দে উদ্বেল হয়ে কিংবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে আমরা গেয়ে উঠি বিজয়ের গান- পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল... মুক্তির মন্দির সোপান তলে...।
হ্যাঁ, এরই মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪১ বছর কেটে গেছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, যোগাযোগ, শিল্প-বাণিজ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ সর্বত্র আমূল পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।
সময়ের সঙ্গে আমরা অনেকখানি বদলে গেছি। তবু ডিসেম্বর মাস এলে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে জোরালো হয়ে উঠে- শৃঙ্খল মুক্তির যে দুর্বার শপথে একাত্তরে আমরা জীবনবাজি রেখেছিলাম, ত্যাগ করেছিলাম নিজের সর্বস্ব; সেই লক্ষ আদৌ অর্জিত হয়েছে কি? আমরা কি পেয়েছি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক মুক্তি, জীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি? আমাদের সার্বিক অবস্থান আজ কোথায়? আমরা কি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি? পরনির্ভরতা আর বিদেশি ঋণের বোঝা কেন আমাদের কাঁধে চেপে আছে? সার্বিক দুরবস্থার উত্তরণের আকাক্সক্ষা আমাদের মধ্যে আছে কি? নাকি রাজনীতির নামে আমরা কেবল হানাহানি, স্বার্থলিপ্সা, আত্মচিন্তা আর সংঘাতে লিপ্ত থেকেছি?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আশার চেয়ে হতাশাই বেশি জেগে ওঠে। স্বাধীন দেশে যে ধরনের সর্বজনীন মানবাধিকার, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি গড়ে উঠবে আশা করেছিলাম, তা অর্জিত হয়নি। এদেশের আপামর জনসাধারণের ভাগ্যেরও সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটেনি। জীবনযাপন, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, প্রযুক্তিসহ অন্যান্য সুবিধা সমাজের একটি ক্ষুদ্রতম অংশের জন্য সীমাবদ্ধ।
কৃষক-শ্রমিক, মজুর-মুটেসহ সাধারণ নিম্নবিত্ত বৃহত্তর মানুষের জীবনের ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। ক্ষমতাসীনরা দেশের উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের উন্নয়ন, মসনদ কুক্ষিগত রাখতেই বেশি ব্যস্ত থেকেছে।
তবু একাত্তর পরবর্তী গত চার দশকে আমাদের অর্জন নেহায়েত কম নয়। হতাশার উল্টো পাশে আমাদের আশা, সম্ভাবনার দিকও অসামান্য। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশ গণতন্ত্রায়নের পথে এগিয়ে চলছে।
এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র শক্তিশালী ভিত্তি না পেলেও রাষ্টের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। আইন ও বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার কথা জোর গলায় বলা হচ্ছে। আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। সারাদেশের অবকাঠামোগত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
শহর-গ্রাম সর্বত্র নিজ নিজ অবস্থানে মানুষের ব্যক্তিগত সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতার সোপান বেয়ে আমরা অনেক কিছুই অর্জন করেছি, পূর্বে যা অকল্পনীয় ছিল।
কিন্তু আমাদের আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের ইতিবাচকভাবে অনেক অনেক বদলে যেতে হবে, পরিবর্তন আনতে হবে চিন্তা-মানসিকতায়। সব কিছুর আগে বর্তমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন আনা বাপ্রতিদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতায় চোখ বুলিয়ে দিনের কাজ শুরু করি।
কাগজে কী দেখি- পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু, ফ্লাইওভার ধ্বসে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি, দুই শীর্ষনেত্রীর পারস্পরিক তর্কযুদ্ধ- কাদা ছোড়াছুড়ি, প্রকল্পে দুর্নীতি, পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ-সমাবেশ, পুলিশের রণপ্রস্তুতি এরপর হরতাল-পিকেটিং-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-গ্রেপ্তার- এমনি নানা দুঃসংবাদ, আঘাত-প্রতিঘাতের ধ্বংসকাব্যে ঠাসা প্রতিদিনের কাগজের পাতা। ভীতি, অনিশ্চয়তা আর দুর্ভাবনায় ঘেরা তাই প্রতিটি সকাল। কখনো কখনো ভাবি- একটু আলো কিংবা ভালোর ঠিকানা বুঝি কাগজওয়ালাদের জানা নেই।
এত কিছুর মধ্যেও প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস এলে আমরা ‘বিজয়’ এর কথা ভাবি। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা- শব্দগুলো আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে নতুন দ্যোতনা নিয়ে।
আনন্দে উদ্বেল হয়ে কিংবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে আমরা গেয়ে উঠি বিজয়ের গান- পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল... মুক্তির মন্দির সোপান তলে...।
হ্যাঁ, এরই মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪১ বছর কেটে গেছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, যোগাযোগ, শিল্প-বাণিজ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ সর্বত্র আমূল পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। সময়ের সঙ্গে আমরা অনেকখানি বদলে গেছি। তবু ডিসেম্বর মাস এলে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে জোরালো হয়ে উঠে- শৃঙ্খল মুক্তির যে দুর্বার শপথে একাত্তরে আমরা জীবনবাজি রেখেছিলাম, ত্যাগ করেছিলাম নিজের সর্বস্ব; সেই লক্ষ আদৌ অর্জিত হয়েছে কি? আমরা কি পেয়েছি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক মুক্তি, জীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি? আমাদের সার্বিক অবস্থান আজ কোথায়? আমরা কি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি? পরনির্ভরতা আর বিদেশি ঋণের বোঝা কেন আমাদের কাঁধে চেপে আছে? সার্বিক দুরবস্থার উত্তরণের আকাক্সক্ষা আমাদের মধ্যে আছে কি? নাকি রাজনীতির নামে আমরা কেবল হানাহানি, স্বার্থলিপ্সা, আত্মচিন্তা আর সংঘাতে লিপ্ত থেকেছি?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আশার চেয়ে হতাশাই বেশি জেগে ওঠে।
স্বাধীন দেশে যে ধরনের সর্বজনীন মানবাধিকার, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি গড়ে উঠবে আশা করেছিলাম, তা অর্জিত হয়নি। এদেশের আপামর জনসাধারণের ভাগ্যেরও সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটেনি। জীবনযাপন, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, প্রযুক্তিসহ অন্যান্য সুবিধা সমাজের একটি ক্ষুদ্রতম অংশের জন্য সীমাবদ্ধ। কৃষক-শ্রমিক, মজুর-মুটেসহ সাধারণ নিম্নবিত্ত বৃহত্তর মানুষের জীবনের ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। ক্ষমতাসীনরা দেশের উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের উন্নয়ন, মসনদ কুক্ষিগত রাখতেই বেশি ব্যস্ত থেকেছে।
তবু একাত্তর পরবর্তী গত চার দশকে আমাদের অর্জন নেহায়েত কম নয়। হতাশার উল্টো পাশে আমাদের আশা, সম্ভাবনার দিকও অসামান্য। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশ গণতন্ত্রায়নের পথে এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র শক্তিশালী ভিত্তি না পেলেও রাষ্টের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।
আইন ও বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার কথা জোর গলায় বলা হচ্ছে। আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। সারাদেশের অবকাঠামোগত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। শহর-গ্রাম সর্বত্র নিজ নিজ অবস্থানে মানুষের ব্যক্তিগত সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতার সোপান বেয়ে আমরা অনেক কিছুই অর্জন করেছি, পূর্বে যা অকল্পনীয় ছিল।
কিন্তু আমাদের আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের ইতিবাচকভাবে অনেক অনেক বদলে যেতে হবে, পরিবর্তন আনতে হবে চিন্তা-মানসিকতায়। সব কিছুর আগে বর্তমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন আনা বাঞ্ছনীয়। কাগুজে নয়, চাই সর্বসাধারণের প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ। বিজয় দিবসে কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, সত্যিকারের দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে হবে।
ভাঙন, বিভেদ আর বিদ্বেষ পরিহার করে আমাদের সৌহার্দ্য ও ঐক্যের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দেশ আমাদের সবার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।