এসো নীপবনে
ঠিক কি দিয়ে শুরু করবো চিন্তা করছি। ভ্রমন বিষয়ক লেখা লিখতে এতো ভালো লাগে। কি বলবো। যারা ভ্রমন পিপাসু তারা মাত্রই বুঝবেন। নতুন জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা, ইচ্ছা পূরণ হলে সেই আনন্দকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় ভ্রমন বিষয়ক লেখা লিখা।
মাস পার হয়নি বান্দর বন থেকে ফিরে আবার বান্দরবন গেলাম এই মাসের ১৮ তারিখে। এবার আর বন্ধুদের নিয়ে নয়। আমার মা আর এক মাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে। এও আমার এক স্বভাব। যে আনন্দ আমি পেয়েছি, সেই আনন্দ আমার পরিবারকেও দিতে আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠে।
সেই ইচ্ছা পূরণেই এ বার বান্দরবন যাওয়া। তবে এবার নীলগিরি আর নীলাচল যাওয়া হয়নি। এইটা যেমন পীড়া দিচ্ছে তেমনি, গতবার যেতে না পারা প্রান্তিক লেক এ যাওয়াটা ছিলো, অসম্ভব আনন্দের।
শহর থেকে মাত্র ১৮ কিঃ মিঃ দূরে, ন্যাচারাল পার্ক ও প্রান্তিক লেক। এতো কাছে থেকেও অনেকেই এদিকে যেতে চায় না।
কেন? এই উত্তর খুঁজতেই আমার যাওয়া। সকাল সকাল ই বের হয়ে পড়লাম। একটা জীপ গাড়ি নিলাম। ভাড়া ১৫০০ টাকা চাইলেও ১,২০০ টাকায় রাজী হলেন। এখন ট্যূরিস্ট কম।
সরকারী ছুটি ছাড়া এখানে তেমন ট্যুরিস্ট থাকেনা বললেই চলে।
এর আগে বললেও আবারও বলি, বান্দরবনের রাস্তা অত্যন্ত ভালো। সেনাবাহিনী বোধহয় এখানকার রাস্তার দায়িত্বে আছে। তাই কোথায়ও ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা নেই। পীচ ঢালা কি সুন্দর রাস্তা।
বান্দরবন শহর থেকে প্রান্তিক লেকে যেতে সময় লাগে মাত্র ২৫-৩০ মিনিট। রাস্তার পাশে কি সুন্দর গাছ!
বেশ কিছু পথ পার হওয়ার পর শুরু হয় কাচা পথের রাস্তা। তবে ইট বিছানো। অবশ্য কোথায়ও কোথায়ও ইট উঠে গেলেও জীপ নিয়ে যেতে কোনো সমস্যা হয়না। বেশ কিছু দূর ভেতরে আসতেই দেখলাম, এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু মুরগীর ফার্ম।
পাহাড়ের কোল ঘেষে যে সমান জমি সেখানে হয় চাষ হচ্ছে, নয়তো কেউ ফার্ম খুলেছে। আবার এতটুকু জলাভূমি মজা পুকুর হয়ে নেই। চাষ হচ্ছে মাছের। দেখতে ভালোই লাগে।
আঁকা-বাকা পথ পেরিয়ে চলে এলাম প্রান্তিক লেক।
প্রথমেই চোখে পড়লো বিশাল এক সাইন বোর্ড।
একটু সামনে এগুতেই চোখে পড়ল আরেকটি সাইনবোর্ড।
ব্যবস্থাপনায় এল,জি,ই,ডি তাই বোধহয় এই অবস্থা। এখানে একটা সরকারি অফিস আছে। তবে তা সব সময় বন্ধ থাকে।
রাস্তা দিয়ে নেমে এলাম লেকের ধারে। আহা চোখ জুড়িয়ে গেল। এবার কথা নয় কিছু ছবি দেখা যাক।
-পাহাড়ি ফুল, শিশিরে ভেজা। কি সুন্দর না!
- কাশফুল, আরো একটা দেখুন।
এবার কিছু শাপলা ফুল দেখা যাক। লাল শাপলা ফুল গুলো যে কী সুন্দর! জানি না, কতটুকু ভালো তুলতে পেরেছি।
আমরা দেখলাম কিছু ডিমের খোসা ছড়িয়ে রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে কেউ এসেছিলো। একটু এগুতেই দেখা গেল চুলা তৈরি করে রেখেছে কেউ।
সেখানে রাধাও হয়েছিলো। সম্ভবত কেউ এসে এখানে পিকনিক করেছে। একটু এগুতেই দেখা গেল কিছু প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম প্লেট। নোংরা করে রেখে গেছে। কেউ নেই পরিস্কার করার।
একটু পাশেই পাহাড় উঠে গেছে। হলুদ পাহাড়। মনে হয় কেউ কেটে রেখেছে। পাহাড়ের মাটি নিয়ে গেছে।
একটু এগোতেই ভালো করে লক্ষ্য করলাম পাহাড়ের গায়ে কিছু গর্ত।
আসলে এগুলো পাখির বাসা।
কি পাখির বাসা কে জানে। তবে কি নিস্তব্ধ, সুনসান এলাকা। কোনো কোলাহোল নেই, কেবল পাখির কলরব। পাখি বিশেষজ্ঞরা এখানে আসতে পারেন।
প্রচুর গাছ আর প্রচুর পাখি। আর পাখির ডাক এক এক সময় এক এক পাখির ডাক আমার মন ভরিয়ে দিয়েছে। এখানে বসার জন্য বেশ কয়েকটি জায়গা করে দেয়া আছে। অবশ্য অবহেলায় সেগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।
বুঝতেই পারছেন, এখানে গাছের চেয়ে আগাছাও কম নয়।
তবু এতো বিশাল দীঘি ইচ্ছে তো করেই নৌকা চালানোর। কিন্তু কোনো উপায় নেই। প্যাডেল বোট না হলেও সাধারণ নৌকা থাকলেও হতো। বৈঠা দিয়ে ঘুরে দেখা যেতো। এখানে অনেক মাছ।
যারা বরশি নিয়ে মাছ ধরেন, তাদের জন্য উপযুক্ত জায়গা। পাহাড়, লেক আর নীল আকাশ এক সাথে এমন সমাহার খুব কম দেখা যায়। এক সময় ফয়েজ লেক ছিলো। এখন তা তো পার্ক হয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস এক সময় এই প্রান্তিক লেক ও সুন্দর একটা পার্ক হবে।
পাহাড়ের পাশ দিয়ে হাটার পথ রয়েছে। আমি আর আমার ছোট ভাই, এগিয়ে গেলাম কিছু দূর। এরপর ফিরে এলাম। কে জানে, কোনো জন্তু-জানোয়ার আছে কিনা? তবে পাহাড়ে অচেনা জায়গায় অনেকে এক সাথে এডভেঞ্চারের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। শুধু পায়ে হাঁটা পথ ধরে এগুলেই হয়।
এরপর চলে এলাম আরেক দিকে। লেকের পানি বেশি হয়ে গেলে অন্য দিকে বের করে দেয়ার জন্য একটা ট্যানেল দেখা গেল। সেই ট্যানেল দিয়ে পানি চলে যাচ্ছে জমির সেচের কাজে।
এক নারীকে দেখলাম লেক থেকে পানি নিয়ে যাচ্ছে।
আরো কিছু ছবি।
- আমার ছোট ভাই, ব্লগার বিকারগ্রস্থ মস্তিস্ক।
আজ এখানেই শেষ। বান্দরবন গেলে অবশ্যই প্রন্তিক লেক যাবেন। প্রন্তিক লেক নিয়ে লেখা লেখি করুন। এটাকে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলুন।
আমরা না গেলে এক দিন ঠিকই পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।
বান্দরবন বিষয়ক আমার অন্যান্য লেখা-
বাংলাদেশের দার্জিলিং- বান্দরবন (পর্ব-১)
বাংলাদেশের দার্জিলিং- বান্দরবন (পর্ব-২)
বাংলাদেশের দার্জিলিং- বান্দরবন (পর্ব-৩)
বাংলাদেশের দার্জিলিং- বান্দরবন (পর্ব-৪)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।