আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প- নীলার কান্না

আমার লেখা কেও পড়ুক আর না'ই পড়ুক, আমি লিখব, লিখেই যাব। "আহমেদ সজীব আমান। " কিছুক্ষণ আগেই শরীফের সাথে তার বৌয়ের পুরা মারকাট ঝগড়া হয়ে গেল। প্রসঙ্গঃ গাড়ি। এখন শরীফ বাইরের বারান্দায় বসে পা নাচাচ্ছে আর বিড়বিড় করছে।

তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে বেশ আনন্দিত। কারণ, শরীফ প্রথম বারের মত তার বৌকে পরাজিত করতে পেরেছে। বৌকে পরাজিত করতে পেরে, পতি আনন্দিত হয় না এমন স্বামী খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তবে শরীফ বেশ দুশ্চিন্তায় আছে, যে কোন সময় সিডর কিংবা আইলা শুরু হয়ে যেতে পারে। তার বৌ কিছুক্ষণ ধরে নিরব, এ বাপ্যারটা বেশ সন্দেহজনক।

বৌ প্রায় দুই বছর যাবত গাড়ি গাড়ি করে তার আরামের ঘুম হারাম করে আসছে। তার ঘাড়ে কি করে যে এই গাড়ির ভূত চেপেছে তা আল্লাহ মালুম। গাড়ি কি কেনা বললেই কেনা? তার ইনকাম সীমাবদ্ধ, মাসে যে কই টাকা বেতন পাই তা দিয়ে গাড়ি কেনার স্বপ্ন একটা ঘোড়া রোগ। করে তো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব; পজিশন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। বেতন যা পাই তা দিয়ে মোটামুটি ভাবে চলে যাই তাদের সংসার।

ভাগ্যিস তার বাপে একটা ফ্ল্যাট কিনে রেখে গেছিল তা না হলে বাড়ি ভাড়া দিতে দিতে জীবন শেষ হয়ে যেত। বাজারে জিনিশ পত্রের যা দাম তাতে ঠিক মত চলায় দায়। পেয়েছে একটা যুক্তি, ব্যাংকের জমানো টাকা। সে ছয় বছর ধরে তিলে তিলে কিছু টাকা জমিয়েছে। সেটাও বেশী না।

গত মাসে চেক করেছিল, সবমিলে চার লাখ পঁচিশ হাজার টাকা। এই কটা টাকায় কি নতুন গাড়ি পাওয়া যাই? শরীফ অবশ্য চেষ্টা করেনি তা নয়। কয়েকটা শোরুম ঘুরে তার গাড়ি কেনার ইচ্ছা মাঠে মাডার হয়েছে। গতকাল হাজী সাহেবের কাছে গেছিল। হাজী সাহেব পুরান গাড়ির ব্যাবসা করে।

শরীফ তার কাছে প্রায় যায়। হাজী সাহেব শরীফকে খুব স্নেহ করেন। শরীফের সেখানে ঘন ঘন যাবার প্রধান কারণ হল গাড়ি দেখা। সে যে গাড়ি কিনতে চায় সেটা এখন হাজী সাহেবকে জানাইনি। কাল একটা কালো রঙের জিপ সে দেখে এসেছে, খুব মনে ধরেছে গাড়িটা, দেখে মনে হয় একদম নতুন।

আজ সে হাজী চাচার কাছে গিয়ে সাহস করে গাড়ি কেনার কথা বলবে যদি সাধ্যের মধ্যে হয় তাহলে আর কোন কথা নয় কিনেই ফেলবে। শরীফ গাড়ি সম্পর্কে এতটা দূর এগিয়েছে সেটা তার বৌয়ের অজ্ঞাত তাই সকালে এতকিছু। শরীফ চাচ্ছে তাকে সারপ্রাইজ দিতে। শরীফ বারান্দা থেকে উঠে এল, দেখল তার বৌ সিডর আকার ধারন করে তার দিকে তেড়ে আসছে। বলল, - তুমি কি ফাইনাল ডিসিশন নিয়া নিছ যে গাড়ি কিনবা না? - দেখি... - আজ দুই বছর ধইরা তো তুমি দেখতেছ, তোমার দেখা কবে শেষ হবে? - খুব তারাতারি শেষ হবার কথা।

- তুমি থাক তোমার কথা লইয়া, আমার বাপে তোমারে দিতে চাইল, নিলানা। কইলা, যৌতুক নিবানা। অহন জানিনা তুমি ক্যামনে কিনবা? শরীফ তার কথা পুরাপুরি অগ্রাহ্য করে শার্ট প্যান্ট পড়তে থাকে। মানিব্যাগ, ঘড়ি ও অফিসের ব্যাগ নিয়ে সে বের হয়। তার বৌ এমন আচরনে পুরা ভ্যাকাচ্যাকা খেয়ে যাই।

স্বামী হিসাবে শরীফ ১০০ তে ৯০ পাবার মত। কখনও উঁচু গলায় কথা বলে না। তার বৌয়ের উপরে কোন কথা বলে না। সে রাজশাহীর ছেলে তো তাই, রাজশাহীর ছেলেরা নাকি লাজুক হয়? কিন্তু আজ তার কি হয়েছে? সে এমন করছে কেন? তাকে তো পাত্তায় দিছে না, এটা রীতিমত নীলার তার জন্য অপমান জনক। সে বলল, -আমি কি বলতেছি তুমি কি সেটা শুনছ? হ্যাঁ বা না কোন উত্তর পাওয়া গেল না।

এবার সামনা সামনি হিট। শরীফ বাসা থেকে বের হবার সময় তার পথ আগলে দাঁড়ায়, বলে, -কি হইছে তোমার? আমার কোন কথা কি কানে যাই না? কই যাও? -কিছু না। কোথায় আর যাব, অফিসেই যাই। একথা বলে সে একটানে দরজাটা খুলে বের হয়ে যায়। পেছনে তার বৌয়ের হুংকার শুনতে পাই।

আজ তার অনেক কাজ, সে সিধান্ত নিল অফিসে যাবে না। সোজা হাজী চাচার অফিসের দিকে যেতে লাগল। তার প্রচণ্ড চিন্তা হচ্ছে যদি গাড়িটা বিক্রি হয়ে যায়, কিংবা দাম যদি অনেক হয়। এরকম চিন্তা ভাবনা করতে করতে সে হাজী মোটরস এর সামনে চলে আসে। দেখে তার সেই গাড়িটা আছেই।

চাচা চেম্বারেই বসে আছেন। তাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলেন, -কি শরীফ মিয়া না? আরে এদিক আস। শরীফ এগিয়ে যায়, একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে। চাচা আবার বলেন, -তারপর সব ঠিক তো? তোমার মুখটা এমুন লাগতাছে ক্যান? কি হইছে খুইলা কউ আমারে। - না চাচা তেমন কিছু না।

এমনি। - না মিয়া কিছু তো হইছেই, আহা কউ দেহি? - মানে আপনার বৌমা একটা গাড়ির বাইনা ধরেছে। - আরে মিয়া এই কথা আগে কবানা আমারে? তা তোমার কাছে আছে কত? - জী চার লক্ষ। - আচ্ছা দেহি কি করন যাই। তুমি দেহ কোনটা তুমার পছন্দ হয়।

- চাচা আমার পছন্দ করা আছে। - তাই নাকি? কোনডা? - ঐ কালো গাড়িটা। - ঐটার দাম একটু বেশী পড়ব। তোমার লাইগা পাঁচ করন যাই। - কিন্তু চাচা আমার কাছে আছেই তো চার লাখ।

- অসুবিধা নাই তুমি কিস্তিতে শোধ কইর। যাক শরীফ নিশ্চিন্ত হল, আর তাকে তার বৌ খোঁটা দিতে পারবে না। শরীফ খুব ভালো গাড়ি চালাতে জানে। এই খবর চাচার জানা। চাচা বললেন, -কি চালায়া দেখবা না? এই লও চাবি, আসে পাশেই চক্কর দিয়া আসবা বুঝলা।

আমি কাগজ রেডি করি। এটা তার নিজের গাড়ি হবে এটা সে কল্পনা করতেই পারেনি। অবশেষে সে গাড়ির মালিক হতে চলেছে। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। সে অনেক গাড়ি চালিয়েছে।

কিন্তু আজকের অনুভূতি সম্পূর্ণ আলাদা। শরীফ এস.এস.সি পরীক্ষার পরেই ড্রাইভিং স্কুলে গাড়ি চালানো শিখেছিল। যাক একটা কাজের কাজ করেছিল সে। মামার চাপাচাপিতেই সে গাড়ি চালানো শিখতে গিয়েছিল। মামাকে অনেক থ্যাংকস দিতে ইচ্ছা করছে এই উপদেশটুকু প্রদান করার জন্য।

শরীফ আশেপাশে দুইটা চক্কর দিয়ে ফিরে আসে। গাড়ি থেকে নেমে দেখে চাচা হাতে কাগজ নিয়ে বসে আছেন। চাচা বললেন, - কি কেমুন লাগল গাড়িডা? এক্কেরে পংখিরাজ। তা তুমি নিবা কখন? - এখনি চাচা। আমি চেক বই নিয়ে এসেছি।

- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একটু ঘুইরা আস আমি কাগজ পত্র ঠিক কইরা নিই। - কখন আসব চাচা? - অহনতো বেলা ১২ ডা, তুমি তিনটার দিকে চলে আস। শরীফের আজ অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। তার জমানো সকল টাকা যে চলে গেল গাড়ির পেছনে এ নিয়ে তার কোন দুঃখবোধ নাই। সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে নীলা গাড়িটা দেখে কি পরিমান খুশি হবে? শরীফ গাড়ি নিয়ে তার এপার্টমেন্টর নিচতলার গ্যারাজে।

নীলাকে ফোন দিয়ে বলল, -নীলা একটু নিচে আসতে পারবে? - কেন? তোমার পা নাই? হাইটা চলে আস। - প্লিজ একটু, একটু আসো। - পারব না। - আসতে বলছি আসো। নাহলে কিন্তু খবর আছে।

- আসছি। শরীফ লিফটের দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। নীলা আসে। বলে, - কি, কি হইসে তোমার? - একটা মজার জিনিষ দেখাব তোমাকে। - মজার জিনিষ? - আসো।

শরীফ তার সদ্য কেনা গাড়ির নিকটে নীলাকে নিয়ে গিয়ে বলল, - এটা তোমার গাড়ি। নীলা তো পুরা হতবাক। যেন গাড়ি না ভূত দেখছে। - কি কোন বলছ না কেন? পছন্দ হয়নি? - এইটা আমাদের গাড়ি? আমাদের? - হ্যাঁ বাবা আমাদের গাড়ি। দাম কত বলতে পারবে? পাঁচ লাখ।

- চল না একটু ঘুইরা আসি? - উ হু আজ না কাল। কাল সারাদিন ঘুরব। - ও কে। চল খাইবা। সকালে তো কিছুই খাওনি।

- গাড়ি কিনে আদর যে উতলে উঠছে। - ধ্যাত তুমি না... সেদিন সারারাত কেবল গাড়ি বিষয়ক কথাবার্তা হল। কাল কোথায় কোথায় যাবে তার প্ল্যান করল। গাড়ি নিয়ে এতটায় মেতে ছিল যে শরীফ তার প্রতিদিনের অভ্যাস মত খবর দেখতে ভুলে গেল। পরদিন সকাল ১০টার দিকে তারা গাড়ি নিয়ে বের হল।

আজকের দিনটা কেমন যেন অন্যরকম। রাস্তা পুরা ফাঁকা। যাবে সে তার শ্বশুর বাড়ি। শাপলা চত্তরের কাছে এসে তার কাছে একটা খটকা লাগল। রাস্তা এতো ফাঁকা কেন? এরকম ভাবতেই দেখল কয়েক জন ছেলে তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘গাড়ি থামা।

’ শরীফ গাড়ি থামিয়ে গ্লাস নামাতেই একজন তার বুকের কাপড় ধরে বলল, ‘সালা আজ হরতাল জানস না? কোন সাহসে গাড়ি বার করছস? তর গাড়ি আমরা অহন পুড়ামু, বাইর সালা। তর বউরেও বাইর কর নাইলে তগরে সুদ্ধা পুড়ায়ে দিমু। ’ শরীফের মনে হল আজ তো হরতাল। কাল গাড়ি কেনার উত্তেজনায় খবরও দেখা হয়নি। শরীফ এবং নীলা একত্রে তাদের অনুনয় করতে লাগল।

কিন্তু কোন কাজ হল না। তাদের একজন ইতিমধ্যে গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছে। শরীফ পিকেটারের পা ধরে বলল, ‘ভাই আমার গাড়িটা ভেঙ্গে দিয়েন না, সারা জীবনের ইনকাম দিয়ে গাড়িটা কাল কিনেছি। একটু দয়া করুন। ’ এতে ঐ পশুটার কোন মায়া হল না উল্টা প্রচণ্ড জোরে একটা লাথি খেল।

শরীফ ও নীলা দেখতে লাগল তাদের গাড়ির অস্থিমোচন। তাদের সামনেই গাড়িটা ভেঙ্গে তাতে পেট্রোল ঢেলে দিল। গাড়িতে আগুন জ্বলছে। এ আগুন যেন গাড়িতে নয় তাদের দেহে জ্বলছে, তাদের পুরা ভবিষ্যৎ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। এখন শরীফ হাসপাতালের আই সি ইউ তে।

তার বড় রকমের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তার পাশে নীলা। নীলার চোখ দিয়ে পদ্মার স্রোতের মত স্রোত বইছে। কি অপরাধ করেছিল তারা যার কারণে তাদের এতবড় শাস্তি পেতে হল? [আমার কিছু কথাঃ এটা একটা গল্প, কিন্তু বাস্তব আরও ভয়ানক। বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নিকট আমার একটা অনুরোধ, আপনারা দয়া করে হরতাল করবেন না।

হরতালকে না বলুন। না বলুন। না বলুন। এটা এনে দিতে পারে শুধু ধংশ। ] বিঃদ্রঃ এটা একটা গল্প।

কোন রাজনৈতিক পোস্ট নয়। কেবল হরতাল বিরোধী একটা গল্প  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.