নানা সময়ে এই দুনিয়ায় নানা রহস্যময় মানুষের আবির্ভাব হয়েছে। যাদের পরিচয় ও আসল চরিত্র নিয়ে এখনো সংশয় কাটে নি। এরকম কয়েকজনের গল্প এরকম—
ক্যাসপার হজার:
১৮২৮ সালের ২৬ মে জার্মানির ন্যুরেমবার্গ শহরে হাজির হয় এক কিশোর। তার হাতে একটি চিঠি। চিঠিটা কে লিখেছে তার নাম নেই।
চিঠিতে স্থানীয় অশ্বদলের ক্যাপ্টেন ফন ওয়েনিগকে ছেলেটির ভরনপোষনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চিঠিতেই লেখা হয়েছে ছেলেটির নাম ক্যাসপার হজার, জন্ম ১৮১২ সালে। ছেলেটি মুখে কিছু বলে না, শুধু বলে “বাবা একজন অশ্বারোহী ছিলেন, আমি একজন অশ্বারোহী হতে চাই। এমন আজব এক কিশোরের আবির্ভাবে হতবাক ক্যাপ্টেন ওয়েনিগে ছেলেটিকে নিয়ে যান পুলিশ স্টেশনে। পুলিশের জেরাতেই ছেলেটি জানায় তার অতীত জীবনের কথা।
আসলে তার বাবা মা কারও কথাই সে জানে না। তার জীবন নাকি কেটেছে দুই মিটার লম্বা , এক মিটার প্রস্থ ও দেড় মিটার উচ্চতার এক অন্ধকার ঘরে বন্ধী হয়ে। প্রতি সকালে তার বিছানার পাশে পড়ে থাকত কখনো পানি আবার তেতো পানীয় আর রুটির টুকরা। ঘুমন্ত অবস্থায় তার চুল ও নখ কেটে দেওয়া হত। বদলে দেয়া হত তার খড়ের বিছানা।
ক্যাসপারকে নিয়ে জোর তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে কিছু বের না হলেও এর মধ্যে বেশ কয়েকবার আক্রমণ করা হয় তার উপর। ১৮৩৩ সালে এক আততায়ীর আঘাতে হজার মারা যায়। কে আসলে ক্যাসপার হজার এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। সবচেয়ে আলোচিত যুক্তি ছিল ক্যাসপার হজার আসলে ছিল “প্রিন্স অব ব্যাডেন”।
১৮২২ সালে যিনি নিঁখোজ হয়ে গিয়েছিলেন। এই ক্যাসপার হজার কে নিয়ে মুভি পর্যন্ত তৈরি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম The Enigma of Kaspar Hauser মুভিটি তৈরি হয়। ১৯৯৩ সালে Kaspar Hauser নামে দ্বিতীয় মুভিটি মুক্তি পায়। আর IDM রেটও খারাপ না।
গিল পেরেজ:
আগের দিনও গিল পেরেজ ফিলিপাইনের গভর্নরের প্রাসাদে কাজ করেছেন। পরদিন নিজেকে আবিষ্কার করেছেন মেক্সিকো শহরে। ব্যাপারটা আজকের দিনে হলে সমস্যা ছিল না। ঘটনাটি ছিল ১৯৫৩ সালের অক্টোবর মাসের। সে সময়ে কি করে এক রাতে এই বিশাল দুরত্ব পাড়ি দিলেন পেরেজ।
পেরেজ দাবি করলেন, তার বিন্দুমাত্র ধারনা নেই তিনি কিভাবে এত দূরে মেক্সিকো শহরে এলেন। তার তো ম্যানিলায় গভর্নরের বাড়ি পাহাড়া দেয়ার কথা ছিল! পেরেজের এই অদ্ভুত আচরণে হইচই পড়ে যায়। দুমাস পর এ খবর চলে যায় ফিলিপাইনে। আশ্চর্য হলেও সত্য পেরেজের কথা ঠিকঠাক মিলে যায় এবং মেক্সিকোতে পৌছার আগ পর্যন্ত তার পাহাড়া দেয়ার সত্যতাও মেলে।
ডি বি কুপার:
আমেরিকার প্লেন ছিনতাইয়ের ইতিহাসে অসামান্য এক নাম ডি বি কুপার।
তার আসল নাম যে কি তা কেউ বলতে পারে না! ১৯৭১ সালে নভেম্বর মাসে “বোয়িং ৭২৭” ছিনতাই করে কুপার লুট করে নেয় দুই লাখ ডলার। তারপর প্লেন থেকে ঝাপিয়ে পড়ে। এরপর কি হলো? এই কুপার লোকটা এসেছিলই কোত্থেকে! এফবিআই এর দীর্ঘদিন তল্লাশি করে টিকিটিও ধরতে পারে নি। এফবিআইয়ের ধারনা কুপার প্লেন থেকে আর বাঁচতে পারেনি। তবে যুক্তির অভাবে এ কথা বেশিদিন টেকেনি।
রহস্যজনকভাবে কুপার আড়ালে আছে! ডি বি কুপারকে নিয়েও মুভি তৈরি হয়েছে ১৯৮১ সালে The Pursuit of D.B. Cooper নামে।
ম্যান ইন দ্য আয়রন মাস্ক:
আলেকজান্ডার দ্যুমার সেই বিখ্যাত থ্রিলার নয় “ম্যান ইন দ্য আয়রন মাস্ক” একটি সত্য চরিত্র। সতেরো শতকে ফ্রান্সের বাস্তিল কারাগারে বন্দি ছিল এক রহস্যময় কয়েদী। ফ্রান্সের চতুর্দশ লুইয়ের আমলে পিনেরোলোসহ প্রায় সব কারাগারেই দিন কাটিয়েছে এই কয়েদী। কালো ভেলভেটের কাপড়ে তৈরি মুখোশের আড়ালে কয়েদীর মুখ কেউ কখনো দেখে নি।
১৭৭১ সালে দার্শনিক ভলতেয়ার দাবি করেন এই কয়েদি ছিল লুই চতুর্দশের অবৈধ বড় ভাই। ১৮৪০ সালে আলেকজান্ডার দ্যুমা দাবি করেন মুখোশের আড়ালে এ কারাবন্দি রাজার যমজ ভাই। ১৬৬৯ সালের জুলাই মাসে “উসটাস ডগার” নামে তাকে জেলে পাঠানো হয়। জেলার ছাড়া কউ তাকে দেখতে পেত না। খাওয়া কিংবা প্রয়োজন ছাড়া অন্য কথা বললে তৎক্ষনাৎ মৃত্যুদন্ডের হুকুম ছিল।
১৭০৩ সালে তার মৃত্যুর পর যাবতীয় তল্পিতল্পাই ধ্বংস করে দেয়া হয়। এ নিয়েও মুভি তৈরি হয়েছে ১৯৯৮ সালে The Man in the Iron Mask নামে।
.........পরবর্তী আকর্ষণ>বিশালতার উপমা>> ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।