দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া না!
জুতোর ফিতাটাও বাঁধা হলো না। কোন মতে পায়ে গলিয়েই দে ছুট। রীতিমত লং-জাম্প দিয়ে সিড়ির দু-তিন ধাপ একবারে পার হচ্ছি। বেশ কবার পরতে পরতে পরলাম না। ঠিক তখনই ফোনটা আবার বেজে উঠলো।
রাহাত। এই নিয়ে তৃতীয়বার।
- কোই রে তুই?
- এইতো অটো থেকে নামছি। তোরা অর্ডার দিয়ে দে।
- চাপা মারোস তাই না? সাউন্ড পল্যুশন কি পুরা কন্ট্রোলে এসে গেছে এই দেশে? আটো থেকে নামলে রাস্তায় কোনো শব্দ নেই কেন?
- দোস্ত! আর তিরিশটা মিনিট দে।
আমি ঠিক ঠিক পৌছে যাবো।
আজ রাহাতের বার্থ ডে। ট্রিটের উপলক্ষ্য এটাই। আমার এই মহা কিপটা বন্ধুটা যে সত্যি সত্যিই ট্রিট দিয়ে বসবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।
দুপুরে সাধারনত ঘুমাই না আমি।
আজকেই যে কেন ঘুম পেয়ে বসলো কে জানে! আর এলার্ম ঘড়িবাবাজীরও বিট্রে করতে হবে আজই? অবশ্য ঘড়ির দোষ দিয়ে আর কি লাভ?ভেজালতাতো বাধিয়েছি নিজেই। সেই এএম পিএম এর চিরন্তন ঝামেলা!
- এই অটো ! রেলগেট যাবা ??
- বসেন মামা।
প্রথম যাত্রী হিসেবে উঠলাম। মানে অটো ছাড়ার আরো কিছু দেরি। আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে।
জুতোর ফিতা বাঁধতে লাগলাম। ভাগ্য ভালো যে ফিতার ফুল এঁকে মাথা উঠাতে উঠাতেই দুজন যাত্রী ম্যানেজ হয়ে গেলো। আমার সামনেই বসলো। আপছা ভাবে দেখলাম একজন বয়স্ক লোক- যার বয়স চল্লিশ বললেও কম বলা হয়। আরেকটা মেয়ে- যার বয়স বিশ বললে বেশিই বলা হয়।
মেয়েটার চোখে চোখ পরতেই ধাক্কা খেলাম। অটোতে সামনে কোনো মেয়ে বসা মানেই অলিখিত নিয়ম- সামনে তাকানো নিষেধ। তবে কেন যেন আজ নিষেধ মানতে পারছিলাম না। আবার চোখাচোখি হলে চোখ নামিয়ে নিলাম এবং আরেকটা ধাক্কা খেলাম। লোকটা মেয়েটির হাত ধরে রয়েছে!
**
করুন চোখে মেয়েটির দিকে তাকালাম।
এবার মেয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। একজন পুরুষ সবার সামনে হাত ধরে থাকার পরও মেয়ের মুখ এমন অভিব্যক্তিহীন কেন? সে কি বিষাদগ্রস্ত? না হয়েই পারে না। নিশ্চয়ই দ্বিগুন বয়সের কাউকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করার বিষাদ। জোর করে মেয়ের চোখে হতাশা খোজার চেষ্টা করলাম।
- মামা, আপ্নে রেলগেট বলছিলেন না?
- হ্যা।
নেমে পড়লাম অটো থেকে।
অটো আরো একজন যাত্রীর অপেক্ষায় কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। আমিও পাশে দাঁড়িয়ে। আবার রাহাতের ফোন। ফোনটা বের করে হাতে নিতে না নিতেই অটোটা চলা শুরু করলো।
বেজেই চলেছে ফোন। আমিও ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়েই রয়েছি আমি। দূরত্ব বাড়ছে অটোটার।
স্যরি রাহাত। মাফ করিস- ফোনটা পকেটে রেখে উঠে পরলাম পেছনের অটোতে।
**
কি করছি-কেন করছি কিছুই জানি না। একেবারে সামনের সিটে বসেছি। অটোওলার পাশে। চোখ সামনের অটোতে। প্রায় আধাঘন্টা চলার পর ওরা নেমে পড়লো।
আমিও নামলাম। যায়গাটা মেডিক্যাল কলেজের সামনে।
পিছু পিছু ঘুরতে লাগলাম। বুড়োটার ফলমূল কেনা দেখে আন্দাজ করলাম মেডিকেলে কাউকে দেখতে টেখতে এসেছে হয়তো। আমাকে দেখেনি কিংবা দেখলেও চিনতে পারেনি যে আমি তাদের অটোতেই ছিলাম।
হঠাৎ মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। ভীষন অবাক হচ্ছে হয়তো। ভয়ও কি পাচ্ছে? সে লোকটাকে আস্তে আস্তে কি যেন বলছে দেখে আমি একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম। ব্যস্ততার ভান করতে হবে। যেন কারো জন্য অপেক্ষা করছি।
হঠাত দেখি লোকটাও এদিকে তাকিয়ে আছে! ফোনটা বের করে কথা বলার ভান করতে হবে কারো সাথে। কিন্তু ওটা বের করেই থ হয়ে গেলাম। ১৫ টা মিসড! সবগুলো রাহাতের নাম্বার থেকে। সাথে সাথে ফোন দিলাম
- রাহাত। স্যরি রে, ফোন সাইলেন্ট ছিলো।
- তুই কোথায়?
- আমি আসতে পারছি না। পরে সব বলবো তোরে।
- তুই কোথায়?? রাহাত রেগে গেছে।
- আরে,মেডিক্যাল কলেজের সামনে।
- তুই আবার কারও পিছু নিয়েছিস ! ওর কন্ঠে হতাশা।
চুপ করে রইলাম। রাহাত আবার বললো
- কেন এই পাগলামি করিস? তুই কবে বুঝবি যে নিধি ইজ নো ম্যোর। ও তিনমাস আগে পৃথিবীর সব্বাইকে ছেড়ে চলে গেছে!
- না রাহাত। নিধি আমার সামনেই আছে। তবে একটা লোক আছে ওর সাথে।
লোকটা নিধির হাত ধরে ছিল কেন বুঝতে পারছি না।
- এক পা-ও নড়বি না, যেখানে আছিস সেখানে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আসছি।
সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার নিধি নেই। সাথের লোকটাও নেই।
রাহাত আসছে। আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি- ঠিক সেখানেই, যেখানটায় নিধি আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছিলো আজ থেকে তিন মাস আগে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।