আমি মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারাতে চাইনা আজ স্বদেশ(হিন্দি) সিনেমাটা দুইবার দেখলাম। আগেও দেখেছি। তার পরেও কেমন জানি একটা টান একটা ভালোলাগা কাজ করে। দেশাত্মবোধ জেগে ওঠে। মনে হয় আমি যদি আমার দেশের সকল সমস্যা দূর করে দিতে পারতাম।
কি নেই আমাদের? আমাদের দেশের মানুষ অনেক মেধাবি,অনেক আবেগি। আম্মুর কাছে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ একে অপরকে কিভাবে নিজের জান বাজি রেখে সাহায্য করেছে শুনেছি ওই সময় নাকি নিজের সন্তানের চেয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মানুষ বেশি ভালবেসেছে। আমরাতো সেই সকল মানুষদেরই সন্তান। তাহলে কেন আজ আমাদের এই অবস্থা? ১৪-ই ডিসেম্বর চলে গেলো। আমরা শেষ হয়ে গিয়েছি সেইদিনই।
কিন্তু সেই প্রক্রিয়া আজও চলছে অন্যরকম ভাবে। আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে অনেকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ অঙ্কুরেই ঝরে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ বুদ্ধিজীবী। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের সব বাবামাদের উচিত নিজ নিজ সন্তানকে আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিক্ষা দেয়া। কেনো জানি আমার মনে হয় আমরা একটা চরম মুহূর্তের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের এখন আর বসে থাকার সময় নেই। যে যেই অবস্থানে আছে তার সেই অবস্থান থেকেই নিজের দেশের জন্য কিছু করার সময় এসেছে। আমি ব্লগে দেখেছি অনেক ব্লগার যারা দেশকে নিয়ে অনেক স্পরশকাতর। দেশকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে। যেখানে দেশকে নিয়ে চিন্তা না করা মানুষের সংখ্যা নেহায়েতি অনেক কম।
তাহলে কেন পারছিনা? আমরা কি তাহলে গুটিকয়েক মানুষের কাছে হেরে যাচ্ছি? আমার মনে হয় সমস্যা আমাদের কেন্দ্রে। আমরাদের সন্তানরা পরিবার থেকে এ বিষয়ে খুব কম শিক্ষাই নিয়ে আসে। আমি দেখেছি যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী ভুল পথে চলে যাচ্ছে। আর আমরা এ জন্য তাদেরকেই দোষারোপ করে থাকি। কিন্তু আমরা কি খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে তাদের মধ্যে কয়জন শিক্ষার্থী পরিবার থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে এসেছে? আমদের অধিকাংশ পরিবার চায় তার ছেলে বা মেয়ে একটা ভালো অবস্থানে যাক, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হোক কিন্তু তারা যদি সঠিকটা জেনে আসতো তাহলে হয়তো প্রেক্ষাপট আরেকটু অন্যরকম হতো।
“বাবা তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। যে অবস্থানেই যাও দেশর জন্য কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মনে রেখ অনেক শহীদের রক্তে অর্জিত আমাদের এই দেশ। এই যে স্বাধীনতা তোমরা আজ উপভোগ করছ তা তোমাদের পূর্বপুরুষদের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া। তাদের এই উপহারকে কক্ষনো অশ্রদ্ধা করোনা।
বাবা তুমি-ই আগামীর চালিকা শক্তি। তাই তোমার উপর অনেক দায়িত্ব। ” এ রকম কথা যদি কোনো ছেলে বা মেয়ে পরিবার থেকে শুনে আসে আমার মনে হয়না সে খুব সহজেই ভুল পথে পা বাড়াবে। আমি এখনও ছাত্র। আমি আমার চার পাশের তরুন প্রজন্মকে সব সময় সঠিক পথে চলার কথা বলি।
যে যেভাবে বোঝে তাকে সেভাবে বলি। আমার এক ছাত্র চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। একদিন তাকে অনেক কথা বললাম। কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক তা বললাম। সে মাদ্রাসায় পড়ে।
এ জন্য আরো বললাম তোমাকে ইসলাম সম্পর্কে সঠিকটাই সব সময় জানতে হবে এবং জানাতে হবে। কেউ একটা কথা বললে তার ভালো মন্দ বিচার করতে হবে। ভালো মন্দ বিচার করার বয়স হয়নি তার বা এসব কথা তার ভালো লাগারও কথানা। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে মনোযোগ সহকারে আমার কথা গুলি শুনলো। তাকে বললাম বড় হওয়ার সাথে সাথে তোমার দায়িত্বও অনেক বেড়ে যাবে।
আমি জানি আমার কথায় তার মনে এক ধরনের পরিবর্তন আসবেই। ছোট ছেলেমেয়েরা বাবার বা মায়ের মুখে গল্প শুনতে অনেক পছন্দ করে। সেই গল্পের বিষয় কি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসের গল্প হতে পারেনা? আমার অনেক ভালো লাগে যখন দেখি ২১শে ফেব্রুয়ারিতে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তাদের বাবার হাত ধরে শহিদ মিনারে ফুল দিতে এসেছে। আমরা কেন ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ফুল দিতে যাই সেই গল্প তাদের শুনাতে হবে। আমাদের এই সব শিশুরাই একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে।
আমি নিশ্চিত বলে দিতে পারি তারা কখনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে আসবেনা। আর যারা এই মুহূর্তে স্কুল কলেজে পড়ছে তাদেরকে বুঝানো আরো সহজ কারন তারা প্রায় সবই বোঝে শুধু একটু পরিচর্যা দরকার। মাঝে মাঝে দেশের কথা চিন্তা করে আমিও হতাশ হই বটে কিন্তু আশা ছাড়িনা। আমার বিশ্বাস এ দেশ একদিন পরিবর্তন হবে ঠিক যেমনটি আমরা দেখতে চাই।
সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।