সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই!!দুনিয়ার মজদুর এক হও,হাতে হাতে অস্ত্র তুলে লও। রাজাকার ও মীরজাফর মুক্ত বাংলা চাই,সব মানুষের সমান অধিকার চাই। ।
[উৎসর্গঃমজলুম জননেতা মহামতি ভাসানী'র ১৩২তম জন্ম দিন স্মরণে]
মুখবন্ধ:
মহামতি ভাসানীকে নিয়ে লেখার মত
নাই আমার জ্ঞান-গরিমা।
তাঁর বিস্তৃত জীবনের নাই কোন
শুরু ও শেষ সীমা!!!
তবু তাঁকে নিয়ে লিখব বলে ধরেছি কলম
আমার হৃদয়পটে লেখা শুধু তাঁর ই নাম।
আজ ভাসানীর ১৩২তম জন্ম দিবসে
কিছু কথা বলতে চাই প্রেমের আবেশে।
ভাসানীর আপোসহীন জীবনধারা:
আমাকে দিবানিশি করে আর্তহারা।
ভাসানীর অনমনীয় আদর্শ বুকে ধরে’
আমি আজ সব আইন-কানুন ভঙ্গ করে,
জাকির মাহমুদ থেকে হয়েছি বাঁধনহারা।
মহামতি ভাসানী কে উৎসর্গকৃত আমার কিছু কবিতা:
(১)
ভাসানীর জন্মদিন
আজ তোমার একশত বত্রিশ তম জন্মদিন...
এ জাতি পারবে না কোনদিন পূরণ করতে তোমার ঋণ!!
এ জাতির কল্যানে তুমি ছিলে আজীবন আপোসহীন
দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে তুমি মাথা নত করোনি কোনদিন।
তুমি মান নি কোনদিন মানুষে মানুষে অসম ব্যবধান
তোমার অমোঘ দর্শন ছিলঃপৃথিবীর সব মানুষ সমান।
নির্যাতিত-নিপিড়িত মানুষ ছিল তোমার চিরজনমের সাথি
মজলুম মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তুমি জেগেছ নিশীথরাতি।
তুমি যেখানে দেখেছ অন্যায় সেখানেই মেরেছ তরবারি
স্বৈরাশাসকদের বুকে তুমি আজন্ম সুনামি,সাইক্লোন,মহামারী।
পরাধীনতার গভীর অমানিশায় বাঙালি জাতি যখন মগ্ন
তখন তুমি স্বাধীনতার ডাক দিয়ে দেখিয়েছ বাঁচার স্বপ্ন ।
যেখানেই হয়েছে গরিব নির্যাতন তুমি করেছে তার প্রতিবাদ
মানুষকে ভালোবাসার জন্য তোমাকে পেতে হয়েছে নির্মম অপবাদ।
শতো জেল-জুলুম পারে নি তোমায় স্বীয় আদর্শ থেকে সরাতে
শতো কূ-কৌশল অবলম্বন করেও পারেনি কেউ তোমার নামটি মেশাতে।
তুমি এ দেশের কৃতি সন্তান;তোমার নাম লিখা আছে এ দেশের প্রতিটি ধূলিকণায়
তোমার নামটি আজীবন ধ্বনিত হবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায়। ।
(২)
তোমার অবদান
জাতির সংকটে তুমি দিয়ে গেছ ইঙ্গিত
সারাজীন গেয়েছ মানবতার সঙ্গীত।
মানবতার জন্য তুমি জেগেছ বিভাবরী
অত্যাচারীর বুকে তুমি মেরেছ তরবারি।
মজলুমদের জন্য তুমি করেছ কতো লড়াই
তোমার মতো মহামানুষ নাইকো আজ ধরায় ।
তোমার মতো দরদি আজ বড় দরকার
গরিবের কষ্ট আজ বুঝে না কোন সরকার!!
নিজের সুখ ত্যাগ করে তুমি করেছ মানুষের কল্যাণ
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে শুনি তোমারই জয়গান।
তুমি ঝড়,তুমি বৃষ্টি,তুমি সুনামি-মহামারী
তোমাকে দেখে কেঁপে উঠে সব অত্যাচারী।
তুমি যুদ্ধের রণতরীতে বিজয়ী এক মহাবীর
নির্যাতিত মানুষ আজ খুঁজে তোমার নীড়।
তুমি জেগেছ নিশা;তুমি দেখিয়েছ দিশা
তোমার নাই কোন লিপ্সা,তোমার নাই কোন হিংসা!
তুমি গরিবের বন্ধু,তুমি অত্যাচারীর শত্রু
তোমার কথা মনে হলে ঝড়ে পড়ে শুধু অশ্রু!!
দিবানিশি গেয়েছ তুমি মানবতার গান
এ জাতি ভুলবে না কখনো তোমার নাম। ।
।
(৩)
মহামতি ভাসানী
তুমি মহামতি আবদুল হামিদ খান ভাসানী
তুমি মাননি কারো দাসত্ব,মাননি কারো গোলামি।
সারাজীবন চেয়েছ তুমি গরিব-দুঃখির অধিকার
মানবতার কল্যাণে তুমি সংগ্রাম করেছ বহুবার।
তুমি চাওনি কখনো ক্ষমতা,চাওনি সিংহাসন
মানুষের মাঝেই তুমি চেয়েছিলে শুধু আসন।
তুমি জনদরদি,তুমি বুঝেছিলে গরিবের আকুতি
তাই তো তুমি গরিবদের দিয়েছিলে স্বীকৃতি।
তুমি আজন্ম বীর;সারাজীবন রক্ষা করেছ এ দেশের তীর
কোনদিন বাঙালি জাতি দেখেনি তোমার অবনত শির।
তুমি মাননি আইয়ুব-ইয়াহিয়া,মাননি মুজিব-ইন্দিরা গান্ধী
দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে তুমি করোনি কোন সন্ধি।
তুমি মাননি কোনদিন ভারতের আধিপত্যবাদী নীতি
তুমি অনেক আগেই বুঝেছিলে ইন্দিরার মিছে প্রেম-প্রীতি।
তাবেদারি শক্তির বিরুদ্ধে তুমি ছিলে আজীবন সোচ্চার
স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তুমি আজীবন দিয়েছ অশনিহুংকার।
তুমি ছিলে মজলুম মেহনতি মানুষের চিরদিনের কাণ্ডারি
মানুষের চিরমুক্তির জন্য তুমি জেগে থেকেছ নিশীথশর্বরী।
পানির অভাবে যখন বাংলার নদী-নালা,মাঠ-ঘাট খাঁ খাঁ
তুমি তখন লং মার্চ করে বলেছ ‘ভেঙে ফেলো সর্বনাশা ফারাক্কা’।
তুমি ছিলে খাঁটি মুসলমান;তুমি ছিলে গরিবের সন্তান
তাই তো শুনি তোমার কণ্ঠে গরিব-দুঃখির জয়গান। । ।
(৪)
তোমার কথা ভুলব না আমরা কোনকালে
তুমি গরিবের বন্ধু আবদুল হামিদ খান ভাসানী
আজীবন ছিলে তুমি সত্য ও ন্যায়ের সাহসী সেনানি।
সারাজীবন করেছ তুমি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ
তোমার বীরত্বে আজো সারা বাঙালি জাতি মুগ্ধ।
দিবানিশি চেয়েছ তুমি মজলুমদের ন্যায্য অধিকার
নিপিড়িত মানুষের জন্য তুমি সংগ্রাম করেছ অনিবার।
জননেতা হয়েও তুমি চাওনি কখনো ক্ষমতা
বাঙালি জাতি ভুলেনি আজো তোমার সততা!
খেটে খাওয়া মানুষকে তুমি দেখিয়েছ বাঁচার স্বপ্ন
উপমহাদেশের ইতিহাসে তুমি জলন্ত এক রত্ন।
মানুষের বুকে ছিল যখন পরাধীনতার বাঁধ
তখন তুমি মানুষকে দেখিয়েছ স্বাধীনতার সাধ।
তুমিই প্রথম ঘোষণা করেছ বাংলাদেশের স্বাধীনতা
এ কথা সাক্ষ্য দিচ্ছে আজো চাঁদ,তারা,গ্রহ,সবিতা।
তুমি আওয়ামী লীগের জনক,তুমি ন্যাপের জনক
ভারতবর্ষের ইতিহাসে তুমি এক মহানায়ক।
জাতির দুঃখে ফেলেছ তুমি দু’চোখের জল
তোমায় দেখে ভেঙে যেত অত্যাচারীর বল।
জাতির কল্যাণে দিয়েছো তুমি সাগরসম রক্ত
তোমার কথা ভুলেনি আজো দেশপ্রেমিক ভক্ত!
মানুষের সুখের জন্য তুমি বহুবার গিয়েছ জেলে
তোমার কথা ভুলবো না আমরা কোনকালে।
(৫)
তুমি মজলুম মানুষের দেবতা
মানুষের মুক্তি ছিল তোমার আজন্ম সাধনা
কেউ কখনো বুঝে নি তোমার হৃদয়ের এ ভাবনা।
দেশকে নিয়ে সবাই যখন খেলেছে পুতুল খেলা
তুমি তখন দেশের জন্য কেঁদেছ সারা বেলা।
সবাই যখন সুখের গদিতে গভীর ঘুমে মগ্ন
তুমি তখন প্রার্থনা করেছ পূরণ হোক সবার স্বপ্ন।
দেশকে ভালোবাসে যারা পেয়েছে তিরস্কার
তাদেরকে তুমি দেবতা ভেবে করেছ নমস্কার।
কেউ বুঝেনি তোমার মন,বুঝেনি তোমার কথা
তুমি ছাড়া কেই বুঝেনি গরিবের মনের ব্যথা!
আজীবন চেয়েছ তুমি গরিব-দুঃখীর অধিকার
এ জন্য শাসকরা তোমায় দিয়েছ শত ধিক্কার।
তুমি মাননি কোন স্বৈরাচারের অবৈধ শাসন
“দুনিয়ার মজদুর এক হও” এই ছিল তোমার ভাষণ।
তুমি ছিল মজলুম মানুষের চিরন্তন দেবতা
ইতিহাসের পাতায় লিখা আছে সেই কথা।
।
(৬)
তুমি থাকতে যদি
হে সিরাগঞ্জের লৌহমানব মহামতি ভাসানী
বাংলার কোন দেশপ্রেমিক নাই যে তোমার নামটি শুনেনি!!
সিরাজগঞ্জে শুরু তোমার টাঙগাইলে শেষ
তোমার আজন্ম স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলাদেশ।
যমুনার কলকল ঢেউয়ে আজো শুনি তোমার চিৎকার
উপমহাদেশের সব শোষকদের তুমি করেছ হুঁশিয়ার।
তোমার কথা ভুলেছ মানুষ;ভুলেনি যমুনার জল
তোমার বিহনে আজ যমুনার দুই চোখ ছলছল।
যমুনার চড়ে আজো দেখি তোমার পদচিহ্ন
এ দেশকে নিয়ে তুমি দেখেছিলে অনেক স্বপ্ন।
তুমি চেয়েছিলে অধিকার;চেয়েছিলে ন্যায়বিচার
তোমার“খামোশ”হুংকার শুনি আজো যমুনার চারিধার।
সিরাগঞ্জ-টাঙগাইলের প্রতিটি আঙিনায়
তুমি আজো দাঁড়িয়ে আছ বীরের ভঙিমায়।
তোমার স্মৃতি বুকে নিয়ে যমুনা বইছে নিরবধি
দেশটা আরো সুন্দর হতো তুমি থাকতে যদি!!!
(৭)
ভাসানীই আওয়ামী লীগের জন্মদাতা
কত কাল গিয়েছে আজ,গিয়েছে কতো দশক
মহামানুষ হয়েও তুমি পাওনি কোন পদক।
১৯৪৯সালে তুমি আওয়ামী লীগকে দিয়েছ জন্ম
সেই আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতা পেয়ে ভুলে গেছে তোমার মর্ম!
তর্কবশিস,শামসল হক,অলি আহাদ,মুজাফ্ফর পেয়েছে পদক
তবে কি বলব আমি ভাসানী দেশপ্রেমিক নয়;ভাসানী ছিল ঘাতক!!
১৯৪৯থেকে ১৯৫৭তুমি ছিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি
আজ আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না তুমি ছিলে মহামতি!!
শেখ মুজিব কে শিখিয়েছিলে তুমি রাজনীতির অমোঘ দীক্ষা
সেই আওয়ামী লীগ আজ ভুলে গেছে তোমার সকল শিক্ষা।
আজ আওয়ামী লীগ বেছে নিয়েছে পরদেশি পররাষ্টনীতি
আজ আওয়ামী লীগ গাইবে না আর তোমার মহাগীতি।
আজ আওয়ামী লীগের প্রতি আমার আবেদন
ভাসানী কে শুদ্ধার সাথে করুন স্মরণ ও বরণ।
ভাসানীই আওয়ামী লীগের জম্মদাতা,আওয়ামী লীগের পিতা
পিতাকে যে ভুলে যায় তার মাঝে থাকতে পারে কি কোন সার্থকতা?
পরিশিষ্ট:
মহামতি ভাসানী নিজেই এক ইতিহাস। তাঁকে নিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না।
আর আমার মত নরাধম এর পক্ষে তা সম্ভব ও নয়!!তবুও যতটুকু পেরেছি।
চেষ্টা করেছি।
ভবিষ্যতে ভাসানী কে নিয়ে এক মহাকাব্য লেখার ইচ্ছে আছে।
আমার কিছু দাবি:
(১) ভাসানী কে বাংলাদেশিদের পিতামহ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
(২) আওয়ামী লীগের জনক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
(৩) স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
(৪)ভাসানী কে মরণোত্তর একুশে পদক,ও স্বাধীনতা পদক দিতে হবে।
(৫) সকল সরকারি প্রতিষ্টানে তাঁর ছবি রাখতে হবে।
(৬) বেগম রোকেয়া পদকের মত ভাসানী পদক চালু করতে হবে।
(৭) ভাসানীর জন্ম দিন দিবস ও প্রয়াণ দিবস জাতীয়ভাবে পালন করতে হবে।
(৬)সর্বোপরি তাঁর স্মৃতি সংগ্রহশালা করে তাঁর অবদান কে স্বীকৃতি দিতে হবে।
শেষ কথা:ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গড়ে উঠেছিল।
আর লীগের সৃষ্টি না হলে বালাদেশ স্বাধীন ও হতো না। তাই ভাসানী কে যারা অস্বীকার করে তারা বাংলাদেশের জন্ম কে অস্বীকার করে। মনের অজান্তে ভুল করলে ক্ষমা করবেন। দুনিয়ার মজদুর এক হও। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
ভাসানী অমর হোক।
ভাসানী কে নিয়ে লিখা আমার আগের কবিতা:। । তুমি মুকুটহীন রাজা। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।