আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূতের অস্তিত্ব ( পঞ্চম খণ্ড )।

প্রদীপ হালদার,জাতিস্মর। যে সব প্রক্রিয়ায় সিস্টেম তার নিজস্ব শক্তির হ্রাস ঘটিয়ে স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে,সেসব প্রক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র থেকে আমরা শক্তির পরিবর্তন সম্পর্কিত দুটি বিষয় জানতে পারি- ১) বিভিন্ন প্রকার শক্তির মধ্যে পারস্পরিক রূপান্তর সম্ভব। ২) এক প্রকার শক্তি বিলুপ্ত হলে তুল্যাঙ্ক পরিমাণে অপর কোন প্রকার শক্তির আবির্ভাব হবেই। কিন্তু প্রথম সূত্রের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে,এগুলি হলো- ১) কোন সিস্টেমের শক্তির আদৌ রূপান্তর ঘটবে কিনা তা এই সূত্র থেকে জানা যায় না।

২) যদি শক্তির রূপান্তর ঘটে তা কোন্‌ অবস্থায় বা কী শর্তে এটি ঘটবে তা জানা যায় না। ৩) শক্তির রূপান্তর কোন্‌দিকে ঘটবে তা জানা যায় না। ৪) শক্তির রূপান্তর কতখানি ঘটবে তা জানা যায় না। কোন একটি নিঃসঙ্গ সিস্টেম সাম্যাবস্থায় পৌঁছবার শর্ত হলো তার এনট্রপির মান সর্বাধিক হওয়া এবং সিস্টেম সাম্যাবস্থায় পৌঁছানোর পর এনট্রপির মান শূন্য হয়। ১) সিস্টেম তাপ গ্রহণ করলে এনট্রপি বৃদ্ধি পায় এবং তাপ বর্জন করলে এনট্রপি হ্রাস পায়।

২)প্রত্যাবর্তক পরিবর্তনে বিশ্বের মোট এনট্রপির পরিবর্তন শূন্য। ৩) অপ্রত্যাবর্তক পরিবর্তনে বিশ্বের মোট এনট্রপি বৃদ্ধি পায়। ৪) সাম্যাবস্থায় এনট্রপির মান সর্বাধিক হয়। সাম্যাবস্থায় স্থিত কোন সিস্টেমের ক্ষেত্রে এনট্রপির পরিবর্তন শূন্য। ৫)রুদ্ধতাপীয় প্রত্যাবর্তক প্রক্রিয়ায় এনট্রপির কোন পরিবর্তন হয় না।

৬) সিস্টেমের এনট্রপি যত বেশী হবে,সিস্টেম থেকে কাজ আদায় করার সম্ভাবনা তত হ্রাস পাবে। সব প্রাকৃতিক পরিবর্তনই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংঘটিত হয় অর্থাৎ এগুলি অপ্রত্যাবর্তক প্রকৃতির। তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র- বিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ ধ্রুবক। তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র- বিশ্বের এনট্রপি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং সর্বোচ্চ সীমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ১)আবর্ত প্রক্রিয়া- প্রাথমিক অবস্থা থেকে শুরু করে কোন সিস্টেম যদি দুই বা ততোধিক ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিক পূর্বেকার অবস্থায় ফিরে আসে।

২)সমতাপীয় প্রক্রিয়া- যে প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের উষ্ণতার কোন পরিবর্তন হয় না। ৩)রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া- যে প্রক্রিয়ায় সিস্টেম ও পরিবেশের মধ্যে তাপের কোনরকম আদান প্রদান হয় না। ৪)সমচাপীয় প্রক্রিয়া-যে প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের মধ্যে চাপের কোন পরিবর্তন হয় না, আয়তনের পরিবর্তন হয়। ৫)সম-আয়তনিক প্রক্রিয়া- যে প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের আয়তনের পরিবর্তন হয় না, চাপের পরিবর্তন হয়। ৬)অপ্রত্যাবর্তক প্রক্রিয়া- দ্রুতগতিতে এবং কম সময়ে সম্পন্ন হয়।

সিস্টেম ও পরিবেশের মধ্যে সাম্যাবস্থা বিঘ্নিত হয়। চালক বলের মান বেশী থাকে। শক্তির আদান প্রদানের উপর নির্ভর করে সিস্টেমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- ১) যদি কোন সিস্টেম ও তার পরিবেশের মধ্যে শক্তি ও ভর উভয়ের আদান প্রদান ঘটে তবে সেই সিস্টেমকে মুক্ত সিস্টেম বলে। ২) যদি কোন সিস্টেম ও তার পরিবেশের মধ্যে শক্তির বিনিময় হয় কিন্তু ভরের কোনরূপ আদান প্রদান না হয় তবে সেই সিস্টেমকে রুদ্ধ সিস্টেম বলে। ৩) যদি কোন সিস্টেম ও পরিবেশের মধ্যে শক্তি ও ভর কোনটিরই আদান প্রদান না হয়, তবে সেই সিস্টেমকে নিঃসঙ্গ সিস্টেম বলে।

সিস্টেমের অন্তর্নিহিত শক্তিকে বলা হয় আন্তরশক্তি। ১) প্রতিটি সিস্টেমের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আন্তরশক্তি থাকে। যা সিস্টেমের ভর, রাসায়নিক ধর্ম ও ভৌত অবস্থার উপর নির্ভরশীল। ২) আন্তরশক্তির মান সিস্টেমে অবস্থিত পদার্থের ওপর নির্ভরশীল। ৩) কোন সিস্টেমে মধ্যস্থ অণু-পরমাণুর স্থানান্তরজনিত শক্তি, ঘূর্ণনজনিত শক্তি, কম্পনজনিত শক্তি, ইলেকট্রনীয় শক্তি, নিউক্লিয় শক্তি, বন্ধন শক্তি প্রভৃতি থেকে আন্তরশক্তির উদ্ভব ঘটে।

৪) তাপ প্রয়োগের ফলে অণু-পরমাণুর কম্পন, ঘূর্ণন ইত্যাদির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে সিস্টেমের আন্তরশক্তির মানও বৃদ্ধি পায়। ৫) কোন সিস্টেমের আন্তরশক্তির পরমমান গণনা করা যায় না। কারণ স্থানান্তরজনিত শক্তি, ঘূর্ণনজনিত শক্তি, কম্পনজনিত শক্তি ইত্যাদির প্রকৃত মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু সিস্টেম যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয় তখন যে আন্তরশক্তির পরিবর্তন ঘটে তার মান গণনা করা যায়।

৬) কোন সিস্টেমের আন্তরশক্তি সিস্টেমটির অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অবস্থায় আন্তরশক্তির মান নির্দিষ্ট। কিন্তু সিস্টেম যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয়, তখন সিস্টেমের আন্তরশক্তির পরিবর্তন ঘটে। এই আন্তরশক্তির হ্রাস বা বৃদ্ধি পথের উপর নির্ভর করে না। স্থির উষ্ণতা ও স্থির আয়তনে সংঘটিত বিক্রিয়ায় যে আন্তরশক্তির পরিবর্তন হয়,তা ওই বিক্রিয়ায় গৃহীত বা বর্জিত তাপের সঙ্গে সমান হয়।

স্থির উষ্ণতায় আদর্শ গ্যাসের সংকোচন বা প্রসারণে আন্তরশক্তির কোন পরিবর্তন হয় না। প্রকৃতিতে অধিকাংশ ভৌত বা রাসায়নিক পরিবর্তন উন্মুক্ত অবস্থায় ঘটে থাকে অর্থাৎ এই পরিবর্তনগুলি স্থির বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রভাবে সম্পন্ন হয়। এসব ক্ষেত্রে আয়তনের পরিবর্তন ঘটলেও চাপের মান অপরিবর্তিত থাকে। চাপ-আয়তনিক কার্য- যদি সিলিণ্ডারের অভ্যন্তরস্থ গ্যাসের চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অপেক্ষা বেশী হয়,তবে ওই বহিস্থ চাপের বিরুদ্ধে গ্যাসের প্রসারণ ঘটতে পারে,যতক্ষণ না সিলিণ্ডারের ভিতরের ও বাইরের চাপ সমান হয়। যদি সিলিণ্ডারের অভ্যন্তরস্থ গ্যাসের চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অপেক্ষা কম হয়,তবে ওই বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রভাবে গ্যাসটির আয়তন সংকোচন ঘটতে থাকবে অর্থাৎ পরিবেশের দ্বারা সিস্টেমের ওপর কার্য সম্পাদিত হলো।

বাইরে থেকে চাপ প্রয়োগে যখন কোন গ্যাসীয় সিস্টেমের আয়তন সংকোচন ঘটানো হয় তখন সিস্টেমের ওপর কার্য সম্পাদিত হয়। ফলে সিস্টেমের শক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার যখন বহিস্থ চাপের বিরুদ্ধে গ্যাসীয় সিস্টেমের আয়তন প্রসারণ ঘটে,তখন সিস্টেমের দ্বারা কার্য সম্পাদিত হয়। কোন সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি বাড়লে ওর উষ্ণতা বাড়ে। চার্লসের সূত্র-স্থির চাপে প্রতি এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতার হ্রাস বা বৃদ্ধির জন্য যে কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন, শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় ওর যে আয়তন থাকে,তার ১/২৭৩অংশ হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়।

বয়েলের সূত্র- নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন, গ্যাসটির চাপের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়। কৃন্তন বল-বাহ্যিক বলের দরুণ যদি স্থিতিস্থাপক বস্তুর আয়তনের কোন পরিবর্তন না হয়ে শুধু আকারের পরিবর্তন হয় তবে ওই ধরণের বিকৃতিকে কৃন্তন বিকৃতি বলা হয়। একমাত্র কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার থাকে। কোন বস্তুকে বাহ্যিক বলের দ্বারা বিকৃত করলে স্থিতিস্থাপকতা গুণে পদার্থের ভিতর একটি প্রতিক্রিয়া বলের উদ্ভব হয়। এই প্রতিক্রিয়া বল বাহ্যিক বলকে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে এবং বাহ্যিক বল অপসারিত হলে বিকৃত বস্তুকে পূর্বেকার আকার ও আয়তনে যেতে সাহায্য করে।

বস্তুর ভিতর উদ্ভূত এই প্রতিক্রিয়া বলকে পীড়ন বলে। পীড়ন বাহ্যিক বলের প্রতিক্রিয়া হওয়ায় নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুযায়ী ইহারা সমান ও বিপরীত। তরল এবং গ্যাসের দৃঢ়তা গুণাঙ্ক নেই বলে এরা কৃন্তন বলকে প্রতিরোধ করতে পারে না। বাহ্যিক বলের দরুণ যদি কোন বস্তুর আকারের কোন পরিবর্তন না হয়ে আয়তনের হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তবে উক্ত পরিবর্তনকে আয়তন বিকৃতি বলে। কঠিন,তরল,গ্যাসের আয়তন বিকৃতি গুণাঙ্ক নির্ণয় করা যায়।

উপরের আলোচনা থেকে- মানুষের শরীরের সিস্টেম হলো মুক্ত সিস্টেম। এখানে শক্তি এবং ভরের আদান প্রদান হয়। মানুষের শরীরে বয়েলের সূত্র প্রযোজ্য। মানুষের শরীর সমতাপীয় প্রক্রিয়া। অপ্রত্যাবর্তক প্রক্রিয়া।

ভরের আদান প্রদান বন্ধ হওয়ার অর্থ হলো মানুষের মৃত্যু। ভরের আদান প্রদান বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে শক্তির আদান প্রদান বন্ধ। এবার কোন শক্তি বিলুপ্ত হলে সমপরিমাণ অন্য শক্তির উদ্ভব হবে। শক্তির আদান প্রদান বন্ধ হলেও শরীরের কোন শক্তির বিলুপ্তি ঘটে না। সব বিদ্যুৎ শক্তি মাথার মধ্যে একত্রিত হয়।

শরীরের চাপ কমে যায়। বাতাসের চাপ বেশী হয়। তখন শরীরের মধ্যে পীড়ন বলের আবির্ভাব ঘটে। শরীরে চাপ প্রয়োগ হওয়ায় শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তির বৃদ্ধি হয়। পীড়ন বলের জন্য মৃত মানুষটি বাতাসের মধ্যে আবার পূর্বের আকার ও আয়তন পায়।

সমচাপীয় প্রক্রিয়ায় এবং অপ্রত্যাবর্তক প্রক্রিয়ায় শরীর দ্রুত গঠিত হয়। এখানে চার্লসের সূত্র প্রযোজ্য। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।