আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূতের অস্তিত্ব ( চতুর্থ খণ্ড )।

প্রদীপ হালদার,জাতিস্মর। আমার বয়স তিন বছর। নাম রমেশ সাহা। অগ্রহায়ণ মাসের সকালবেলা। শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে আমাকে রেখে মা কোথাও চলে যায়।

মায়ের আসতে দেরী হচ্ছে দেখে আমি সিঁড়ির ধাপে পা রেখে জলের দিকে নামতে থাকলাম। সিঁড়ির যে ধাপটা জলের ওপর ছিল তাতে কালো শেওলা ছিল। আমার জানা ছিল না যে সিঁড়ির ওই শেওলা পিচ্ছিল। আমার জানা থাকলে আমি কখনোই ওই সিঁড়িতে পা রাখতাম না। আমার দুটো পা পিচ্ছিল শেওলার ওপরে।

হাঁটু মুড়ে বসার চেষ্টা করে বাম হাত দিয়ে জল ছুঁতেই পা স্লিপ করলো আর আমি জলে পড়ে গেলাম। আমি দুই হাত ছোঁড়াছুঁড়ি করতে লাগলাম। জল ছিটকাতে থাকলো। আমি মা মা বলে চীৎকার করতে থাকলাম। মুখের মধ্যে জল ঢুকে গেলো।

গলার কাছে কট করে আওয়াজ হলো। আমি দেখলাম আমার বাম হাত জলের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে গেলো। আমি হাতটাকে আর নাড়াতে পারছি না। আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। আমার গলার কাছে কি একটা নরম জিনিষ এসে হাজির হলো।

আমি মনে মনে বলছি, জিনিষটা বের হবে কি করে,মুখ তো বন্ধ। কিন্তু জিনিষটা মুখটাকে ফাঁক করে দিয়ে বের হয়ে গেলো। কোথায় গেলো জানি না। আমি ওপেন থার্মোডিনামিক্স সিস্টেম। আমার শ্বাস প্রশ্বাস আছে।

আমি অক্সিজেন গ্যাস গ্রহণ করি এবং কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস ত্যাগ করি। যেহেতু আমি কেমিক্যাল নন ইকুইলিব্রিয়াম ষ্টেটে আছি, সেহেতু অক্সিজেন গ্যাস গ্রহণ করি এবং কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস ত্যাগ করি। কিন্তু যে মুহূর্তে মুখে জল ঢুকলো এবং আমার হাত নাড়ানো বন্ধ হলো এবং চোখ দুটি বন্ধ হলো,কেন হলো আমি বুঝতে পারি নি। আমি যে মারা গিয়েছি,এমন ধারণাও আমার মাথায় ছিল না। আজ বলছি, আমি তখন মারা গিয়েছি।

কিন্তু আমার মাথা অন্ততপক্ষে এক মিনিটের জন্য জীবিত ছিল। আমার মারা যাওয়ার অর্থ হলো আমি কেমিক্যাল ইকুইলিব্রিয়াম ষ্টেটে গিয়েছি বলে আমার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ। কিন্তু আমার শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কিনা সেই বিষয়ে কোন ভাবনা তখন আমার ছিল না। মুখ থেকে কি একটা জিনিষ বের হবার পর,আমি হঠাৎ দুটি চোখ থেকে বের হয়ে একসাথে মিলিত হয়ে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছি,অথচ আমার চোখ বন্ধ,কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ থেমে গেলাম এবং আমি আমার দুটি চোখ মেলতে পারলাম।

আমি দেখতে পারছি। আমার শরীরে তাকিয়ে আমি দেখলাম আমার ডান হাত লম্বা হচ্ছে। রংটা সাদা কুয়াশার মতো। আমি পুকুরের জলের ওপরে আছি। আমি পুকুরঘাটে এলাম।

আমার মা, আমার মৃতদেহ পুকুর থেকে তুলে দুই হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চললো। আমি মায়ের পিছু পিছু হাঁটতে থাকলাম। বাড়িতে ঢোকার মুখে আমাদের একটা দুর্গা ঠাকুরের ঘর ছিল। মা সেখানে নিয়ে গেলো না। সোজা বাড়িতে ঢুকে উঠোনে আমার মৃতদেহ রেখে দিল।

আমি মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আমার জেঠিমা বারান্দা থেকে বললো-ওর সব জামা প্যাণ্ট সঙ্গে দিয়ে দে। আমি দাঁড়িয়ে দেখছি। একজন ডাক্তার এসে ষ্টেথোস্কোপ দিয়ে আমার মৃত শরীর দেখলো। সবাই কাঁদছে।

কিন্তু আমি বুঝতে পারি নি যে আমি মারা গিয়েছি। থার্মাল নন ইকুইলিব্রিয়াম ষ্টেটে থাকলে হিট এনার্জির ট্রান্সফার হবে। কিন্তু আমি যখন দেখলাম আমি আর হাত নাড়াতে পারছি না এবং চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেলো, তার অর্থ হলো এনার্জির ট্রান্সফার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ আমি তখন থার্মাল ইকুইলিব্রিয়াম ষ্টেটে চলে গিয়েছি। কিন্তু আমার মাথা সজাগ ছিল।

তাহলে মাথার মধ্যে আমি মেকানিক্যাল নন ইকুইলিব্রিয়াম ষ্টেটে আছি। তাই ভাবনা চিন্তা করতে পারছি। এবার আমি চোখ থেকে আলাদা হয়ে একসাথে মিলিত হয়ে ছুটছি। তাহলে আমি আছি চোখের মধ্যে। চোখ বন্ধ করে আমার সেই উপলব্ধি তখন হয়েছিল।

আমি চোখ বন্ধ করে আঙুল দিয়ে চোখের কোণায় চাপ দিলে আলফা ওয়েভ দেখতে পারি। আবার চোখ খুললে আলফা ওয়েভ চলে যায়। তাহলে সেদিন আমি দুটি চোখ থেকে বের হয়ে একসাথে মিলিত হয়ে তীব্র গতিতে ছুটছি। আসলে শরীরের মধ্যে প্রেসার বা চাপ বেড়েছে। এবং এর ফলে দুই চোখ থেকে আলফা ওয়েভ বের হয়ে একসাথে মিলিত হয়ে তীব্র গতিতে ছুটতে থাকলো।

তারপর হঠাৎ থেমে গেলো। চোখ মেললাম এবং হাত এক্সপানশান হতে থাকলো। তারপর শরীর এবং দুই পা এক্সপানশান হলো। শরীরটা সাদা কুয়াশার মতো। শরীরে তাকিয়ে দেখলাম বর্ণালী রেখা চলাফেরা করছে।

তাহলে শরীর থেকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ তথা আলফা ওয়েভ, বিটা,ডেল্টা ওয়েভ নিয়ে বাতাসে ছুটতে থাকে। তারপর থেমে গেলো। বিজ্ঞান বলছে আলফা ওয়েভ বাতাসে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করার পর থেমে যায়। এটাকে আলফা রেঞ্জ বলে। আইসোবারিক পদ্ধতিতে ভূতের শরীরের এক্সপানশান।

প্রেসার নির্দিষ্ট। শরীরে ইলেকট্রিকাল এনার্জি এবং ম্যাগনেটিক এনার্জি কাজ করছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।